× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় প্রধান উপদেষ্টার প্রত্যয়

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২৪ ১৬:৫৭ পিএম

আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০২৪ ১৬:৫৭ পিএম

সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় প্রধান উপদেষ্টার প্রত্যয়

ব্রিটিশ রাজনীতিক, আইনবিদ ও চূড়ান্তপর্বে বিচারক এডওয়ার্ড কোক বলেছিলেন, ‘নিরাময়ের চেয়ে নিরাপত্তা শ্রেয়।’ প্রাচীন রোমের বিখ্যাত বাগ্মী, কূটনীতিবিদ, রাজনৈতিক তত্ত্ব বিশারদ, আইনজ্ঞ ও দার্শনিক মার্কস টুলিয়াস সিয়ারো বলেছিলেন, ‘জনগণের নিরাপত্তাই সর্বোচ্চ আইন।’ আর ক্যালিফোর্নিয়ার ৩৪তম গভর্নর, চিত্রনির্মাতা ও রাজনীতিবিদ আর্নল্ড অ্যালোইস শোয়ার্জনেগারের মন্তব্য, ‘সরকারের প্রথম ও সর্বোচ্চ দায়িত্ব হলো জননিরাপত্তা।’ জগৎখ্যাত এই মনীষীদের বাণী আজও আমাদের সমাজ বাস্তবতায় অত্যন্ত গুরুত্ববহ। ১৩ আগস্ট ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শনকালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, তা সংখ্যালঘুদের মনে স্বস্তি ফিরিয়ে দেবে বলে আমরা ধারণা করি। ১৪ আগষ্ট প্রতিদিনের বাংলাদেশে বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন- ‘ধর্ম নয়, মানুষ হিসেবে অধিকার চাইবেন। বড় রকমের বিভেদের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি, আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান, বিভেদ সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই।’ প্রধান উপদেষ্টা উদ্বিগ্ন-উৎকণ্ঠিত জনগোষ্ঠীর উদ্দেশে কোন প্রেক্ষাপটে এমন বক্তব্য রেখেছেন, তা সচেতন মানুষ মাত্রই জ্ঞাত।

মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এই বাংলাদেশে অভ্যুদয়ের প্রেক্ষাপটে যে সত্য উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিল এরই প্রতিফলন ঘটেছে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে। সমাজবিজ্ঞানের সূত্র মতে, সংখ্যালঘু একটি সাংস্কৃতিক, সম্প্রদায়গত কিংবা বর্ণগতভাবে স্বতন্ত্র গোষ্ঠী, যা সহাবস্থান করলেও তারা একটি অধিক প্রভাবশালী গোষ্ঠীর অধীনস্ত। উল্লেখ্য, পার্থক্যকারী বৈশিষ্ট্যের নির্দিষ্ট গোষ্ঠী এই বিভাজন মুছে দিয়েছে মহান একাত্তর পর্ব। আমরা সেই আলোকে বলতে পারি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশে সম্প্রদায়গত শ্রেণি বিভাজন নয়; বরং আমরা একে অন্যের মধ্যে সৌহাদ্য-সম্প্রীতির মেলবন্ধন রচনা করেছি। এর অনেক নজির আমাদের সামনে আছে। কখনও কখনও কতিপয় সমাজবিরোধীর নখরাঘাতে যে পরিস্থিতি লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে তা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কারণ হয়ে দাঁড়ালেও বড় ধরনের কোনো বিভাজন আমাদের মধ্যে সৃষ্টি করতে পারেনি শুভবোধসম্পন্নদের ঐক্যের কারণে। এই শক্তিই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের অন্যতম শক্তি। এই শক্তি নিয়েই বাংলাদেশে নাগরিক সমাজের বৃহদাংশ একে অন্যের পাশে দাঁড়িয়েছে ভ্রাতৃত্ববোধের বন্ধনের আহ্বানে।

আমরা জানি, পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে সমাজবিরোধী অপশক্তি বরাবরের মতোই এবারও ধর্মীয় পরিচয়ে সংখ্যালঘু বলে পরিচিতদের বাড়িঘর-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান-উপাসনালয়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনাকাঙ্ক্ষিত-অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটিয়েছে। সার্বিক প্রেক্ষাপটে এই ঘটনাগুলো জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি করলেও সরকারসহ শুভবোধসম্পন্ন মহলগুলো এ ধরনের ঘটনাকে ধিক্কার জানিয়ে আবারও রুখে দাঁড়িয়েছে। আমরা দেখছি, সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ অন্যান্য গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে সংখ্যাগুরু শ্রেণির মানুষরা রুখে দাঁড়িয়েই ক্ষান্ত থাকেননি, তারা সুরক্ষার সব রকম ব্যবস্থা নিজেরাই নিশ্চিত করেছেন এবং করছেন। এমন শুভ উদ্যোগকে নিঃসন্দেহে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা বিশ্বাস করি, সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধন যেখানে এমন দৃঢ়, সেখানে কোনো অপশক্তির অপক্রিয়ার ছায়া প্রলম্বিত হতে পারে না।

আমরা আহ্বান জানাব, এই ক্রান্তিকালে যাতে সুরক্ষাবলয় সর্বব্যাপী গড়ে ওঠে, তা নিশ্চিত করতে সামাজিক শক্তির পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় শক্তির সহযোগিতা অবশ্যম্ভাবী। একই সঙ্গে আমরা এই আহ্বানও রাখব, যারা সমাজবিরোধী কিংবা দুর্বৃত্তদের দ্বারা ইতোমধ্যে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের ক্ষত উপশমে রাষ্ট্র যথাযথ ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। আমরা সাধুবাদ জানাই প্রধান উপদেষ্টাকে, যিনি সম্প্রদায়গত পরিচয়ের ঊর্ধ্বে মানুষ হিসেবে রাষ্ট্রের কাছে অধিকার চাওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপন করেছেন। আমরা আশা করব, সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষত উপশমে সবার আগে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বিচারব্যবস্থা থেকে শুরু করে আমাদের অধিকারের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে বিরাজমান বৈষম্যের অভিযোগ এখনও ওঠে। 

দুঃখজনক হলেও এও সত্য, সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন বা সমাজের প্রভাবশালী শক্তি থেকে বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠীর সদস্যদের সাধারণত সমাজের কাজকর্মে অংশগ্রহণ থেকে এবং সমাজের পুরস্কারে সমান অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। এর নজির সর্বব্যাপী না হলেও সমাজের কিছু কিছু অংশে এখনও জিইয়ে আছে এবং বিভাজনের দেয়াল হীনস্বার্থবাদীরা টিকিয়ে রেখেছে। একটি রাষ্ট্রের ভৌগোলিক সীমার মধ্যে অনেক সম্প্রদায় এবং গোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করলেও চূড়ান্ত অর্থে সবার পরিচয় রাষ্ট্রের নাগরিক এবং বিশেষ করে আমাদের সংবিধানে তা গুরুত্বসহকারে উল্লেখ রয়েছে। নৈতিক অবক্ষয়ের চরম অবস্থা আমরা স্বাধীন দেশেও এ যাবত কম প্রত্যক্ষ করিনি, কিন্তু মানবিক ও ন্যায়পরায়ণ নাগরিক সমাজ দৃঢ়ভাবে এর বিরুদ্ধাচরণ করেছেন। ফলে সাময়িকভাবে সৃষ্ট অন্ধকার কেটে সমাজে ফের আলোর বিচ্ছুরণ ঘটবে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত আমাদের সংবিধান কোনো বিভাজন রেখা তৈরি করেনি। উপরন্তু আমরা দেখেছি, মানুষ নামধারী কতিপয় সমাজবিরোধী যখন কদর্য অধ্যায় সৃষ্টি করতে চেয়েছে, তখনই শুভবোধসম্পন্নরা এগিয়ে এসেছেন। বর্তমান সৃষ্ট পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটেও আমরা এমনটি দেখছি। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিবও পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে আহ্বান জানিয়েছেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার জন্য সবাইকে গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে। 

আমাদের অভিজ্ঞতায় আছে, দেশের যেকোনো উত্তপ্ত পরিস্থিতি কিংবা নির্বাচনের সময় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা-উদ্বেগ দেখা দেয়। এ ব্যাপারে আমাদের অভিজ্ঞতা অনেক ক্ষেত্রেই প্রীতিকর নয়। আইনের শাসন দ্বারা পরিচালিত কোনো গণতান্ত্রিক দেশে এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে আমরা উপলব্ধি করেছি, নানা অঘটনের কারণে শান্তিপ্রিয় নিরীহ সাধারণ মানুষের মানসিক অবস্থা কতটা প্রতিকূল হয়ে পড়ে। এবারও এর ব্যত্যয় ঘটেনি কিন্তু আশার কথা হলো, সামাজিক শক্তি থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় শক্তি এ ব্যাপারে সজাগ-সতর্ক থেকে সুরক্ষাবলয় সৃষ্টি করেছে। আমরা রাষ্ট্রের সব নাগরিকের জন্য নিরাপদ পরিবেশ চাই। নিরাপত্তাই প্রথম। জননিরাপত্তাহীন কোনো সমাজ বা রাষ্ট্র নাগরিক সমাজের জন্য হীতকর কিছু নিয়ে আসতে পারে না। আমরা আশা করব, অন্তর্বর্তী সরকার যেহেতু গণদাবি ও গণঅভ্যুত্থানের পথ ধরে আসা সরকার; সেহেতু ঘটে যাওয়া প্রতিটি নেতিবাচক ঘটনার প্রতিবিধান নিশ্চিত করতে তারা সময়ক্ষেপণ করবে না। তারা সবার আস্থা অর্জন এবং নাগরিক সমাজে নিরাপত্তাবোধ পুষ্ট করে তাদের অঙ্গীকার-প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সচেষ্ট থেকে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তারের সুযোগ নস্যাৎ করে দেবে। ধর্মীয় সম্প্রীতি ও শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সবাইকে যূথবদ্ধভাবে আরও শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, ন্যায়বিচার ও সুশাসনের পথ যত মসৃণ হবে নিরাপত্তাহীনতার ছায়া তত দ্রুত অপসারিত হবে। ঘটে যাওয়া যেসব ঘটনার মধ্যে দিয়ে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে এই প্রশ্নগুলোর সুরাহা করতে হবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করার মধ্য দিয়ে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা