× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পর্যবেক্ষণ

পরাজয়ের পর ‘জয়’-এর উপলব্ধি

মহিউদ্দিন খান মোহন

প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৪ ১০:১১ এএম

মহিউদ্দিন খান মোহন

মহিউদ্দিন খান মোহন

সদ্যপদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ও সাবেক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় কিছু কথা বলেছেন, যেগুলো নিয়ে সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে। জয় কখনোই বাংলাদেশের রাজনীতিতে তেমন আলোচনায় ছিলেন না। তবে অনেকের ধারণায় ছিল, আমাদের দেশের ট্র্যাডিশন অনুযায়ী শেখ হাসিনার পরে হয়তো বা জয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের হাল ধরবেন। এটা ছিল স্বাভাবিক সময়ের ধারণা। কিন্তু বর্তমানে যে পরিবেশ-পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাতে কে বা কারা ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের হাল ধরবেন, তা অনিশ্চিত। কেননা ব্যাপক গণবিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনা ও তার দলের বেশিরভাগ নেতা দেশত্যাগ করায় নেতৃত্বের শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। সে শূন্যতা সহসা পূরণ হবে কি না, হলেও কীভাবে হবে তা নিশ্চিত করে বলার উপায় নেই। ঠিক এমনি সময়ে জয়ের বক্তব্য জনমনে ব্যাপক গুঞ্জনের সৃষ্টি করেছে।

কেউ কেউ ভাবছেন জয় হয়তো বিদেশে অবস্থান করেই আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দেবেন; যেমন তারেক রহমান দিচ্ছেন। সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্যের পাঁচটি পয়েন্ট এখন আলোচনার বিষয়বস্তু। প্রথমত. তিনি বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি, সাংবিধানিকভাবে তিনি এখনও প্রধানমন্ত্রী’। যদিও এর এক দিন পরই স্বয়ং শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি পদত্যাগ করেছেন। দ্বিতীয়ত. রাষ্ট্রপতি সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও রাজনীতিবিদদের সঙ্গে আলোচনা করে সংসদ ভেঙে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক পদত্যাগ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন আদালতে চ্যালেঞ্জর মুখে পড়তে পারে। একই সঙ্গে জয় বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নেবে এবং সে নির্বাচন তিন মাসের মধ্যে হতে হবে’। তৃতীয়ত. জয় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রশংসা করে তার সাম্প্রতিক বক্তব্যকে (বিএনপির সমাবেশে ভার্চুয়ালি দেওয়া) উৎসাহব্যঞ্জক বলে অভিহিত করে বলেছেন, ‘তিনি (খালোদা জিয়া) অতীত না টানার কথা বলেছেন। এটা শুনে আমি খুশি হয়েছি। আসুন আমরা অতীত ভুলে যাই। প্রতিশোধের রাজনীতি পরিহার করি।’ চতুর্থত. জয় বলেছেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের আয়োজন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে তিনি বিএনপির সঙ্গে কাজ করতে চান। পঞ্চমত. তিনি বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, রাজনীতি ও সমঝোতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা তর্ক করতে পারি। আমরা কোনো বিষয়ে অসম্মত হওয়ার বিষয়ে একমত হতে পারি। আমরা সব সময় সমঝোতার পথ খুঁজতে পারি।’ (সূত্র : প্রতিদিনের বাংলাদেশ, ১১ আগস্ট, ২০২৪)।

সজীব ওয়াজেদ জয়ের কথাগুলো একটি গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য প্রযোজ্য; যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সহনশীলতার সঙ্গে অবস্থান করে। কিন্তু বাংলাদেশের সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটকে কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক বলা যায় কি? বিশেষত তার মায়ের শাসনামলের গত সাড়ে পনের বছরের সময়কে গণতান্ত্রিক বলার কোনো উপায় নেই। ওই সময়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সভাসমাবেশ-মিছিলের অধিকার খর্ব করা হয়েছিল, রাজনৈতিক কর্মীদের নামে প্রায় ১ লাখ হয়রানিমূলক মামলা দেওয়া হয়েছিল। সেসব মামলার আসামি হিসেবে কয়েক লাখ বিরোধী কর্মীকে জেলে পুরে রাখা হয়েছিল বিনা বিচারে। পুলিশ, র‌্যাব ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনীকে দিয়ে চালানো হয়েছে হত্যাযজ্ঞ, করা হয়েছে গুম। মোট কথা, সময়টা ছিল বিভীষিকাময়। নির্বাচনব্যবস্থা ছিঁড়েখুঁড়ে ছিন্নভিন্ন করা হয়েছে, দেশে গ্রহণযোগ্য কোনো নির্বাচনই হয়নি। বিরোধী দল, বিশেষত বিএনপি যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে তজ্জন্য গ্রহণ করা হয়েছিল নানানরকম অগণতান্ত্রিক পন্থা। মানুষের কোনো ভোটাধিকার ছিল না। ছিল না বাকস্বাধীনতা।

জয় খালেদা জিয়ার ‘অতীত না টানার’ কথায় খুশি হয়েছেন। কিন্তু গত সাড়ে পনের বছরে কিংবা সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে যে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, সেটা কি এক লহমায় ভুলে যাওয়া সম্ভব? যে সন্তান তার বাবাকে হারিয়েছে, যে বাবা-মা তাদের প্রিয় সন্তানকে হারিয়েছেন, যে মেয়েটি তার স্বামীকে হারিয়েছে, তারা কী করে সেই ভয়ংকর অতীত ভুলে যাবে? খালেদা জিয়া উদার ও মহান একজন নেত্রী। তিনি অন্য কারও মতো প্রতিহিংসাপরায়ণ নন। তাই তিনি বলতেই পারেন, আসুন অতীত নিয়ে টানাটানি না করে সামনে এগোই। কিন্তু স্বজন হারানো মানুষ কি তা পারবে? তাদের চোখের সামনে কি অতীতের সে দুঃসহ ছবি ফিরে ফিরে আসবে না?

জয়ের কথায় একটি অশুভ ইঙ্গিতও রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠন আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বলে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা নিয়ে ভাবার দরকার আছে। এ ব্যাপারে বর্তমানে গঠিত সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। একটি কথা মনে রাখতে হবে, উদ্ভূত বিশেষ পরিস্থিতিতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলেও এর সাংবিধানিক ভিত্তি এখনও স্পষ্ট নয়। সংবিধান বহাল রেখে এর বিধানের বাইরে গিয়ে কোনো অন্তর্বর্তী সরকার গঠন আইনত বৈধ কি না এটা একটি গুরুতর প্রশ্ন। প্রয়োজন ছিল রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশবলে সংবিধানের সংশ্লিষ্ট ধারাসমূহ স্থগিত করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা। কিন্তু তা করা হয়নি। সুতরাং অদূর ভবিষ্যতে বিষয়টি যদি আদালতে গড়ায় তাহলে নতুন জটিলতা দেখা দেওয়া বিচিত্র নয়।

প্রতিশোধের রাজনীতি পরিহার করে বিএনপির সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করা ও সমঝোতার রাজনীতিকে গুরুত্ব দেওয়ার কথায় বোঝা যাচ্ছে জয় উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন, গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে একা পথচলা যায় না। একা চলতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলে টেনে তোলার কেউ থাকে না। বিগত সাড়ে পনের বছরে তার মা শেখ হাসিনা এসবে গুরুত্ব দেননি। বরং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ পদপিষ্ট করে কার্যত একদলীয় শাসন কায়েমের প্রয়াস পেয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষ তো গোল্ডফিশ নয় যে পূর্বক্ষণে ঘটে যাওয়া ঘটনা এত তাড়াতাড়ি ভুলে যাবে। যে ক্ষত তার মা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৈরি করেছেন, তা শুকাতে সময় লাগবে।

সজীব ওয়াজেদ জয় আশা প্রকাশ করেছেন পরবর্তী সংসদ নির্বাচনে তাদের দল অংশগ্রহণ করবে। সেটা তারা করতেই পারেন। আওয়ামী লীগ একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহন করার অধিকার নিশ্চয় তাদের রয়েছে। তবে বাংলাদেশের ভোটার সাধারণের মনে তাদের দল ও সরকারের যে ভাবমূর্তি রয়েছে, তাতে আশাব্যঞ্জক কিছু ঘটার আশা না করাই ভালো। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পরাজয়ের পর জয়ের এ উপলব্ধি এ মুহূর্তে কোনো কাজে আসবে বলে মনে হয় না। ক্ষমতায় থাকতে যদি তারা এ সত্য উপলব্ধি করতেন, তাহলে হয়তো অনেক দুঃখজনক ঘটনাই ঘটত না।

  • সাংবাদিক ও রাজনীতি-বিশ্লেষক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা