× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

প্রত্যাশা

তারুণ্যের আকাঙ্ক্ষা ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ

বিধান চন্দ্র পাল

প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৪ ০৯:৫৯ এএম

তারুণ্যের আকাঙ্ক্ষা ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ

দেশ এবং দেশের বাইরে অসংখ্য মানুষ যে বাংলাদেশ নিয়ে চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন, তা সুস্পষ্ট এবং সেটা হওয়াটাও অত্যন্ত স্বাভাবিক। কথায় আছেÑ বিপদের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু। এক্ষেত্রে বলতে চাই, দেশের এই পরিস্থিতিতে যারাই দেশকে নিয়ে ভাবছেন, নিয়মিতভাবে খোঁজখবর রাখছেন, লিখছেন, বিভিন্ন মাধ্যমে এই পরিস্থিতিকে নানান উপায়ে বিশ্লেষণ করছেন, এমনকি সমাধানের জন্য অবদান রাখছেন; তারাই আসলে প্রকৃত দেশপ্রেমিক। দেশকে নিয়ে ভালোবাসা ও দেশপ্রেমের চেতনাবোধ, বাংলাদেশের প্রতি গভীর ও আন্তরিক বন্ধুত্ব এবং মমত্ববোধ ভেতরে না থাকলে এটা কখনও আসে না, কিংবা হয় না। দেশ ও দেশের বাইরের মিডিয়াসহ অনেকেই সাম্প্রতিক পরিবেশ এবং পরিস্থিতি নিয়ে নানান মতামত দিচ্ছেন, সমালোচনায় মুখর আছেন।

নতুন প্রজন্ম যেন প্রাণপণ প্রচেষ্টায় এমনকি অনেকেই বীরের মতো প্রাণ বিসর্জন দিয়ে নীচ থেকে বাংলাদেশের সব বয়সি মানুষকে টেনে সাহসের সঙ্গে ওপরে ডাঙায় তুলে নিয়ে এলো। তারপর বেশিরভাগ মানুষই দেখতে পেয়েছেÑ একটি নতুন দেশ, দুর্নীতির আবহ থেকে মুক্তির গন্ধ, পেয়েছে প্রাণ খুলে কথা বলার মতো হিমেল বাতাস এবং তরুণ সমাজ নতুনভাবে ও নতুন পণ নিয়ে দেশকে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। দীর্ঘদিন হলো সমাজবদ্ধ হয়ে ওঠার পরিবর্তে আমরা কেবল ব্যক্তিগত ও বিচ্ছিন্নই হয়ে পড়েছিলাম। ফলে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও ক্রমেই দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে পড়েছিল। ফলে একদিকে আমরা দেখলাম তরুণ সমাজ এবং সবার অংশগ্রহণে মুক্তি ও বিজয় যখনই অর্জিত হলো, ঠিক তারপর থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, রাজনৈতিক আক্রোশে আক্রান্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান, সাধারণ মানুষ এবং বিশেষভাবে নির্দিষ্ট সম্প্রাদায়ের ওপর নির্বিচারে আক্রমণ, নির্যাতন, হত্যা, চুরি-ডাকাতি, ধর্মীয় উপাসনালয় ও গুরুত্বপূর্ণ ভাস্কর্যসমূহ ভেঙে ফেলা, জমি দখল ও লুটপাটসহ আরও অনেক অপ্রত্যাশিত চিত্র অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে একের পর এক ঘটে যাচ্ছে; যা ভীষণ লজ্জার ও নিন্দার।

মানুষ আসলে অতিষ্ঠ হয়ে আছে। তারা শান্তি চায়, সুস্থ ও সুন্দরভাবে বাঁচার পরিবেশ নিশ্চিত হোক, সেটা চায়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত থাকুক, তাও চায়। তাই সাধারণ মানুষসহ সবাই নতুন প্রজন্মের বিজয়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও আস্থা রেখে সম্মানের সঙ্গে সাম্প্রতিক সব সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। এ মুহূর্তে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার সবার মনেই আশা জাগাচ্ছে। দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যত উন্নতি হবে, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই নিশ্চিন্তে বাড়ির বাইরে ঘোরাফেরা ও কথা বলতে পারবে, সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষের বেঁচে থাকার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হবে, ততই মঙ্গল। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সার্বিকভাবে পুরো অর্থনীতিতে গতিশীলতা ফিরে আসবে, দ্রব্যমূল্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে আসবে, রাস্তাঘাটে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে, শিক্ষা পদ্ধতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ আবার সচল হবে, কোথাও আর কোনো বৈষম্য থাকবে না। পাশাপাশি নির্বাচনী ব্যবস্থা ও পদ্ধতিসহ সবক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত সব সংস্কারের প্রক্রিয়াও অচিরেই শুরু হবেÑ সেটাই সবার আকাঙ্ক্ষা।

আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হলে অবশ্যম্ভাবীভাবে তরুণ সমাজের মনোস্তত্ত্ব বুঝতে হবে, তাদের কথা আরও বেশি গুরুত্ব দিয়ে শুনতে হবে। তাদেরকে সবক্ষেত্রে কাজে লাগাতে হবে। ধর্ম ও অর্থের মাধ্যমে তারা যাতে নোংরাভাবে ব্যবহৃত না হতে পারে বা কেউ যাতে তাদেরকে ব্যবহারের সুযোগ আর কখনও না পায়, সেদিকে সচেতনভাবে খেয়াল রাখতে হবে। তারা যাতে পরিবেশ বিনষ্টকারী কাজে সম্পৃক্ত না হয়, সেজন্য তাদের মধ্যে পরিবেশগত ধ্যানধারণা ও চিন্তাচেতনা বাড়াতে হবে। তাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ দিতে হবে, মূল্যবোধ সমুন্নত ও পরিবেশবান্ধব মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। এজন্য তাদের প্রশংসা করার পাশাপাশি সঠিক পথে গাইড করাটাও অত্যন্ত জরুরি হবে। তবে সেটা একপাক্ষিক হলে চলবে না, কারণ তাদের কাছে থেকেও অন্যদের শেখার অনেক কিছুই আছে। এ ধরনের সুস্থ একটি চর্চার আবহ অচিরেই তৈরি করা সম্ভব না হলে কিংবা এই প্রক্রিয়া কোনোভাবে আবার বাধাগ্রস্ত হলে এর পরিণাম আরও ভয়াবহ হতেই বাধ্য। সময়ের পরিক্রমায় অনেক দিন ধরে মৌলিক বিষয়সমূহে পরিবর্তন, বিভিন্ন সময়ের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, শিক্ষাব্যবস্থাসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চর্চায় পৃষ্ঠপোষকতার ধরনে পরিবর্তন হয়ে এসেছে বাংলাদেশে। দেশের মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরে কিংবা অভ্যন্তরে দুর্নীতিবাজ, মৌলবাদী, ফ্যাসিবাদী কিংবা ধর্মীয়, জঙ্গিগোষ্ঠীর কিংবা উগ্র ও সন্ত্রাসবাদের যে উত্থান, তা এক দিনে হয়নি।

গণতান্ত্রিক পন্থার ওপর ভরসা স্থাপন করে, আইন ও বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব পথ খুঁজে বের করতে হবেÑ সেই পথটি যা অদূর ভবিষ্যতে সুগম হবে। এক্ষেত্রে সুস্থধারার একটি পরিবেশ বিনির্মাণে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সক্ষম হবে বলেই আন্তরিকভাবে প্রত্যাশা রাখব। তরুণ সমাজ দায়িত্ব নিয়ে জাতির জীবনে যে পরিবর্তন এনে দিয়েছে, সেটা আমূল ও অসাধারণ এক পরিবর্তনেরই ইঙ্গিত বহন করে। তাই এই পরিবর্তনকে সবাই মিলে আমাদের কাজে লাগাতে হবে এবং ইতিবাচকতার দিকে নিয়ে যেতে হবে। আমরা আর কোনো অসঙ্গতি চাই না। বৈষম্য, ধর্মীয় কিংবা রাজনৈতিক বিদ্বেষ আর দেখতে চাই না। দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের বিষচক্রে ও গর্তে আমরা আর নিজেদের ডোবাতে চাই না। যে উঠে দাঁড়ানোর যাত্রা আমরা নতুন করে শুরু করেছি, সেটা ক্রমেই বিকশিত হয়ে উঠুক। সেই উঠে দাঁড়ানোর মাঝেই রয়েছে প্রকৃত স্বাধীনতার উপলব্ধি, দেশের ও সবার শান্তি আর সমৃদ্ধি। সবার সুস্থ ও বলিষ্ঠ অংশগ্রহণে দেশ সেদিকেই এগিয়ে যাকÑ এটাই প্রত্যাশা।

  • শিল্পী ও লেখক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা