পরিপ্রেক্ষিত
লতিফা নিলুফার পাপড়ি
প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৪ ১১:৪৮ এএম
নিজের ও অন্যের কাজটুকু সৎভাবে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে করাই হলো
দেশপ্রেম। একজন শিক্ষার্থীর জন্যে সর্বোচ্চ দেশপ্রেম জ্ঞানার্জনের জন্যে কঠোর পরিশ্রম
করা। নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তোলা। যে শিক্ষার্থী আলস্যে সময় কাটায় না, লেখাপড়ার জন্যে
পর্যাপ্ত সময় দেয় এবং নিজেকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে সে সত্যিকার অর্থেই দেশের
কল্যাণেই কাজ করছে। কারণ ছাত্রজীবনে সে যদি নিজেকে বড় কাজের জন্যে তৈরি করতে পারে,
তাহলে পরবর্তীতে সে তার জ্ঞান ও দক্ষতা দিয়ে দেশের মানুষের সেবা করতে পারবে।
একজন শিক্ষকের দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও তথ্যে সমৃদ্ধ করা, লক্ষ্য
সুস্পষ্ট করে দেওয়া, লক্ষ্য অর্জনে মেধার বিকাশ ঘটানো, মূল্যবোধ জাগ্রত করা। একজন শিক্ষকের
দায়িত্ব কখনও শিক্ষার্থীকে পঙ্গু করে দেওয়া না। তাই শিক্ষকরা যদি আন্তরিকভাবে সৎ থেকে
নিজের দায়িত্ব পালন করেন তাহলে সেটিই তার দেশপ্রেম। সরকারি চাকরিজীবী জনগণের সেবক।
তার দায়িত্ব কোনোরকম হয়রানি, পেরেশানি ছাড়াই ফাইল ছেড়ে দেওয়া বা সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি
করা। যে চাকরিজীবী কর্মস্থলে সময়মতো যান এবং পুরো কর্মঘণ্টা আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব
পালন করেন সেটিই তার দেশপ্রেম। যে কাজটি পাঁচ মিনিটে করে দিতে পারেন সেটি পাঁচ দিন
ফেলে না রেখে যদি পাঁচ মিনিটেই করে দিতে পারেন, তাহলে সেটিও দেশপ্রেমের নমুনা।
দেশের সম্পদ রক্ষার বিষয়ে সচেতনতাও দেশপ্রেমের অংশ। দেশের বিদ্যুৎ,
গ্যাস, পানি ইত্যাদির যেন কোনো অপচয় না হয় সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে। পানির অপচয় সম্পর্কে
নবীজি (স.) বলেছেন, যদি একটি প্রবহমান নদীতে ওজু করতে যাও তবুও পরিমিত পানি ব্যবহার
কর। আমরা কল ছেড়ে দাঁত ব্রাশ করি, আনুষঙ্গিক অন্যান্য কাজ করিÑ এটি ঠিক নয়। রান্নার
কাজে গ্যাস ব্যবহার করা হয়। অনেকে একটি দেয়াশলাইয়ের কাঠির খরচ কমাতে ২৪ ঘণ্টা গ্যাস
জ্বালিয়ে রাখি। দেশপ্রেমিক মানুষ দেশের সম্পদ ব্যবহারেও সচেতন থাকেন।
আমরা সব সময় দেশের বিষয়ে নিরাশা পোষণ করি। ভাবী এদেশে কিছুই হবে না।
যত দ্রুত সম্ভব দেশ থেকে চলে যাওয়ার কথাও ভাবী। অথচ এ মাটির আলো-বাতাস আবহাওয়া, খাদ্যে
বেড়ে উঠেছি। দেশ একসময় উঁচু করে দাঁড়াবে এ বিশ্বাস রাখুন, ইতিবাচকভাবে ভাবুন। সদ্য
প্রকাশিত এক বিশ্ব জরিপে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দিক থেকে দ্বিতীয় এবং আশাবাদী
দেশের তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে প্রথম স্থানে। তাই আশাবাদী হোন এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা
করছে আমাদের জন্যে।
চিন্তা করুন কী কী দেওয়ার সামর্থ্য ও যোগ্যতা আপনার আছে। আসলে প্রেম হলো কেবল দেওয়ার নাম। যোদ্ধা কখনও চিন্তা করেন না, যে কে কী পাবেন? ফিরে আসবেন কি নাÑ তাও অনিশ্চিত। তাই নিজেকে শিক্ষাদীক্ষা ও জ্ঞানে-গুণে সুন্দর ও যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। না জানাটা দোষের নয় কিন্তু শিখতে না চাওয়াটা হচ্ছে দোষের। শেখার কোনো সুযোগকে হাতছাড়া করা যাবে না। যত মুক্তমন নিয়ে শিখব তত বেশি যোগ্য ও দক্ষ হব। শুদ্ধাচার, আচার-আচরণ ও নৈতিক জ্ঞান সবকিছু শিখতে হবে। আমরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ভাষা আন্দোলন করেছি, মুক্তিযুদ্ধ করেছি, বারবার স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছি। কিন্তু আমাদের স্বপ্ন সফল হয়নি। ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান বিফলে যেতে দেওয়া যাবে না। এখন আমাদের যুদ্ধ নিজের অক্ষমতার বিরুদ্ধে, নিজের অজ্ঞানতার বিরুদ্ধে, নিজের আলস্যের বিরুদ্ধে। নিজে বদলালেই পৃথিবী বদলে যাবে। এই সত্যকে যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি তাহলে আমরা বিশ্বের সেরা জাতিতে রূপান্তরিত হব। তরুণরা যে দেশ, মানুষ ও পৃথিবী বদলে ফেলতে পারে তার প্রমাণ তো আমরা নিজের চোখেই দেখলাম।