× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

স্মরণ

দেশের সূর্যসন্তান

ড. নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ

প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৪ ১০:১০ এএম

জেনারেল মুস্তাফিজুর রহমান, বীরবিক্রম

জেনারেল মুস্তাফিজুর রহমান, বীরবিক্রম

মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একটি পদাতিক ব্যাটালিয়নে তথা মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে একত্রে পাঁচ বছর সেনাবাহিনীতে কাজ করার সুযোগলাভ আমার জীবনের এক পরম পাওয়া। এ সময় সঙ্গ পেয়েছি খেতাব পাওয়া বেশ কজন বীর মুক্তিযোদ্ধারও। এর মধ্যে সবচেয়ে সৌভাগ্যের বিষয় ছিল বীরবিক্রম খেতাব পাওয়া জেনারেল মুস্তাফিজুর রহমানের অধীনে সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে টানা তিন বছর কাজ করা। দেশের নবম সেনাবাহিনী প্রধান, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের এ অগ্রদূতের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। তার জন্ম ১৯৪১ সালের ২০ জানুয়ারি রংপুরে আর মৃত্যু হয় ৩ আগস্ট, ২০০৮ সালে।

১৯৬২ সালে তৎকালীন আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমান বুয়েট থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে অফিসার হিসেবে চাকরি শুরু করেন জেনারেল মুস্তাফিজ। তবে তার বড় পরিচয় তিনি একজন খেতাবপ্রাপ্ত ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা।১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরুর সূচনালগ্নেই মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে তৎকালীন কর্মস্থল ঢাকা সেনানিবাস ছেড়ে তিনি ভারতে চলে যান এবং মূলত ৮ নম্বর সেক্টরের একজন সাবসেক্টর কমান্ডার হিসেবে বৃহত্তর কুষ্টিয়া, যশোর, চুয়াডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ করেন। নভেম্বরের ১১ ও ১২ তারিখের মধ্যবর্তী রাতে বৃহত্তর চুয়াডাঙ্গা আক্রমণের প্রাক্কালে শত্রুর অবস্থান, বিন্যাস, জনবল, প্রকৃতি, অস্ত্রশক্তি প্রভৃতি জানার জন্য দেশি মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় সেনারা একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে পূর্ব পাকিস্তানে থাকা শত্রু অবস্থানের ওপর।

এমনই এক অবস্থায় ভারতের বানপুর থেকে তৎকালীন ক্যাপ্টেন মুস্তাফিজ মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সন্ধ্যায় যাত্রা করেন এবং মধ্যরাতে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার সীমান্ত অঞ্চলের ধোপাখালিতে গড়া শত্রুঘাঁটির ওপর আঘাত হানেন। প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হলে রাত ২টার দিকে পেটে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। সহযোদ্ধারা তাকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে চাইলেও প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যান। এভাবে জীবন বাজি রেখে রাতভর যুদ্ধ করে তিনি শত্রুদের পরাভূত করেন এবং শত্রু পালিয়ে যাওয়ার পর সকালে নতুন সূর্যোদয়ের সঙ্গে ধোপাখালিতে বিজয় নিশান ওড়ান এবং তার পরই কেবল চিকিৎসা নিতে যান। এমন বীরত্ব ও দেশপ্রেমের জন্য তিনি বীরবিক্রম খেতাব লাভ করেন।

দেশের নবম সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন জেনারেল মুস্তাফিজ। ‘জ্ঞানই নিরাপত্তা’ এ নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন জেনারেল মুস্তাফিজ। তার হাতে গড়ে ওঠে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স টেকনোলজি (এমআইএসটি) এবং আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ (এএফএমসি)। পরে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি)সহ অর্ধশতাধিক উচ্চশিক্ষা, কারিগরি ও চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আজ গড়ে উঠেছে দেশের বিভিন্ন সেনানিবাস এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে। সেনাবাহিনীকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে তিনি ট্রাস্ট ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিকিৎসাসেবার বাইরে যোদ্ধা হিসেবে অফিসার পদে নারীদের অন্তর্ভুক্তি তার আমলেই শুরু হয়। সীমিত বাজেটে আধুনিক সেনাবাহিনী গড়ার লক্ষ্যে প্রচলিত পুরোনো মডেলের যুদ্ধসরঞ্জাম, সামরিক গাড়ি, যুদ্ধযান, নৌযান প্রভৃতির আধুনিকায়ন করেছিলেন তিনি। বিভিন্ন হাসপাতালের আধুনিকায়ন ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ চিকিৎসাসেবা, সেনানিবাসের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও ট্রাফিকব্যবস্থা উন্নয়নের ক্ষেত্রে তিনি আজও এক রোল মডেল।

২০০০ সালে অবসর গ্রহণের সাড়ে সাত বছর পর মিগ-২৯ জঙ্গিবিমান ক্রয়সংক্রান্ত সাজানো মামলায় দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাকে অযথা হেনস্থা করে তৎকালীন এক-এগারো সরকার। সে বছর ২৫ মে হৃদরোগ নিয়ে তৎকালীন অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি ও হার্টে বাইপাস অপারেশনের জন্য অপেক্ষায় থাকা অবস্থায় তাকে পুলিশ প্রহরায় রাখা শুরু হয় ও আটক দেখানো হয়। শুধু তাই নয়, ২৯ মে অসুস্থ জেনারেল মুস্তাফিজকে অ্যাম্বুলেন্সে করে জাতীয় সংসদ ভবন চত্বরে স্থাপিত বিশেষ আদালতে নেওয়া হয় এবং হুইলচেয়ারেও বসানোর ক্ষমতা না থাকায় স্ট্রেচারে করে বিচারকের এজলাসে হাজির করা হয়। অথচ সেদিন রায় ঘোষণা, জেরা বা চার্জশিট গঠনের মতো কিছুই কার্যতালিকায় নির্ধারিত ছিল না বিধায় দীর্ঘ অপেক্ষার পর শুনানির নতুন তারিখ দিয়ে তাকে বিদায় করা হয়। এ মর্মান্তিক ঘটনার পর মাত্র ৬৪ দিন বেঁচে ছিলেন এ বীরসেনানী। আজ তার মৃত্যুবার্ষিকীতে কায়মানোবাক্যে প্রার্থনা করিÑওপারে ভালো থাকুক দেশের সূর্যসন্তান জেনারেল মুস্তাফিজুর রহমান, বীরবিক্রম।

  • অবসরপ্রাপ্ত মেজর, গবেষক ও নিরাপত্তা-বিশ্লেষক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা