সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২৪ ১৭:৫৭ পিএম
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিংবা কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি অবনতিশীল হয়ে পড়ায় নানামুখী ভোগান্তি প্রকট হয়ে উঠেছে। প্রযুক্তির বিকাশের এ যুগে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবাদে এখন অনেক সেবাকার্যক্রমই চলে অনলাইনে। ২২ জুলাই প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় বিদ্যুৎ-গ্যাস ও পানির ভোক্তারা চরম সংকটে পড়েছেন। বর্তমান জমানায় ইন্টারনেট-বিচ্ছিন্ন পরিস্থিতি কতটা সংকট তৈরি করতে পারে এরই খণ্ড খণ্ড চিত্র উঠে এসেছে ২২ জুলাই অন্য সংবাদমাধ্যমগুলোতেও। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সবারই বক্তব্য প্রায় অভিন্ন। তাদের অনেকেরই বক্তব্য ইন্টারনেট না থাকা মানে সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির বিল পরিশোধ দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। সংশ্লিষ্ট অফিসে গিয়েও ভোক্তারা সহজে রিচার্জও করতে পারছেন না। সহযোগী একটি সংবাদমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদনে দেখা গেছে, শত শত গ্রাহক ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও রিচার্জ করতে পারছেন না।
ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে বিভিন্ন ব্যাংকের অ্যাপস ব্যবহার করেও বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে না। রাজধানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে সেবাপ্রার্থীদের ক্ষোভের চিত্রও উঠে এসেছে প্রতিদিনের বাংলাদেশসহ প্রায় সব সংবাদমাধ্যমেই। অনলাইনভিত্তিক সব কার্যক্রম ও সেবা বন্ধ থাকায় দৈনন্দিন জীবনে নেমে এসেছে এক ধরনের স্থবিরতা। বিশেষ করে অ্যাপসনির্ভর ব্যাংক ও মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকরা পড়েছেন আরও বিপাকে। তারা পাড়ামহল্লার বিভিন্ন এজেন্টের দোকানে ভিড় করছেন। সংবাদমাধ্যমে এও বলা হয়েছে, প্রযুক্তি খাত সংশ্লিষ্ট অনেকের আর্থিক ক্ষতির চিত্র স্ফীত হয়ে উঠেছে। এক তথ্যে প্রকাশ, বর্তমানে দেশে দেড় লাখের মতো সক্রিয় ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন। তাদের বেশিরভাগ বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে পণ্য ও সেবা রপ্তানি করে থাকেন। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে তাদের কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটায় একদিকে তাদের সুনাম নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে তাদের ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্যাটাগরিতে মানও নিচের দিকে নেমে আসছে। অনেক গ্রাহকের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে না পারার কারণে লাখ লাখ ডলারের ক্ষতি হচ্ছে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসস (বেসিস)-এর দায়িত্বশীলসূত্রের বরাত দিয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় প্রতিদিন আইসিটি সেবা খাতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে গড়ে ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকা। সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার সূদরপ্রসারী পরিকল্পনার বিপরীতে বিদ্যমান বাস্তবতা একেবারেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এর ফলে আইসিটি খাতে এর দীর্ঘমেয়াদী অভিঘাত লাগার আশঙ্কা রয়েছে। ইন্টারনেট সেবা না থাকায় বিদেশগামী যাত্রীরা পড়েছেন আরও বেশি বিপাকে। আয় বন্ধ হয়ে গেছে ইউটিউব ও ফেসবুক নির্ভর কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও উদ্যোক্তাদের। আইসিটি-সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কেউই বলতে পারছেন না কখন মিলবে ইন্টারনেট। তারা গ্রাহকদের আশ্বাসের পর আশ্বাস দিলেও এর অগ্রগতি কতটা কী তা-ও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না।
ইউটিলিটি বিল দিতে এবং রিচার্জ করতে না পারার কারণে গৃহস্থালি জীবনে বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানি সংকটের যে চিত্র উঠে এসেছে তা চরম জনভোগান্তির নামান্তর। উৎপাদনব্যবস্থায়ও এর বিরূপ ধাক্কা লেগেছে। আমরা মনে করি, গ্রাহক কিংবা ভোক্তাদের বিদ্যমান সংকটের বিষয়টি গভীরভাবে আমলে নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব সংকটের সুরাহা করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে আমরা এও বলতে চাই, নাশকতার কারণে আইসিটি কেন্দ্র বিপর্যস্ত হওয়ার বিষয়টি কি যথাযথ সুরক্ষার ঘাটতিও তুলে ধরে না? নির্বিঘ্ন ও নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেটব্যবস্থা দ্রুত চালু করতে না পারলে এর অভিঘাত আরও প্রকট হয়ে উঠবে এবং এর অপচ্ছায়া পড়বে অর্থনীতিতেও। জনগুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়ে উদাসীন থাকার কোনো অবকাশ নেই। প্রযুক্তির বিকাশের কারণে সেবাকার্যক্রম যেহেতু বেশিরভাগই হয়ে পড়েছে অনলাইননির্ভর, সেহেতু পাঁচ দিনেও কেন এ সমস্যার সমাধানসূত্র বের করা সম্ভব হলো নাÑতা আমাদের বোধগম্য নয়।
নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট ও অনলাইন ভিত্তিক সব সেবাকার্যক্রমের পথ সুগম করতে হবে সময় ক্ষেপণ না করে। আমরা দ্রুত দেখতে চাই গ্রাহক ও ভোক্তারা ইন্টারনেটের পাশাপাশি নির্বিঘ্নে সব অনলাইনভিত্তিক সেবা পাচ্ছেন।