× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

যুক্তরাষ্ট্র

ট্রাম্পের ওপর গুলি, রাজনীতিতে নতুন ক্ষত

জোসেফ স্তেপানস্কি

প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২৪ ১১:০৯ এএম

জোসেফ স্তেপানস্কি

জোসেফ স্তেপানস্কি

আটটি বুলেট যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের গতিবিধি পাল্টে দিয়েছে। পেনসিলভানিয়ায় র‍্যালি শেষে রবিবার ট্রাম্পের ওপর হামলার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আমরা পেতে শুরু করি। ট্রাম্পের ওপর হামলা ইঙ্গিত দিচ্ছে, আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কা অনেকাংশেই বেড়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি-বিশ্লেষক রিনা শাহ জানাচ্ছেন, ‘এত দিন পরিস্থিতি যা-ই থাকুক না কেন, এখন সবকিছু পাল্টে গেছে।’ এ ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের ১৩তম প্রেসিডেন্ট বা সাবেক প্রেসিডেন্ট কিংবা প্রার্থী হিসেবে হামলার শিকার হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনিই অষ্টম ব্যক্তি যিনি হামলার পরও বেঁচে আছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ, বিল ক্লিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ ও বারাক ওবামা তাদের মেয়াদের সময় বা তার পরে ব্যর্থ হামলার শিকার হয়েছিলেন। তবে ট্রাম্পই প্রথম কোনো বর্তমান বা সাবেক প্রেসিডেন্ট, যিনি ১৯৮১ সালে রোনাল্ড রিগানকে গুলি করার পর সহিংসতার ঘটনায় আহত হলেন।

যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ সাম্প্রতিক বছরগুলোয় প্রধান দুটি দলের নির্বাচিত এবং অন্যান্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হুমকি বৃদ্ধির কথা জানিয়েছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হামলার পরপরই টিভিতে হাজির হয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতার কোনো স্থান নেই। তিনি তার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বীর জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। শুধু তাই নয়, বাইডেন সব নির্বাচনী প্রচার বন্ধ করে দিয়েছেন এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তার টেলিভিশন বিজ্ঞাপনও সরিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ করছেন। তিনি স্পষ্টভাবে বিশ্বাস করেন, এ সময়ে ট্রাম্পকে আক্রমণ করা অনুচিত হবে। বরং তিনি হামলার নিন্দায় সরব হয়েছেন। তিনি ট্রাম্পের প্রতি সংহতিও জানিয়েছেন। রবিবার এক বার্তায় বলেছেন, ‘এ মুহূর্তে আমাদের একাত্ম থাকার কোনো বিকল্প নেই।’

রাজনৈতিক সহিংসতার সময় রাজনীতিকদের বাড়তি দায় থাকে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে আনার জন্য তাদের বক্তব্য বা ভূমিকা বাড়তি ভূমিকা রাখতে পারে। নিরাপত্তা গবেষণা প্রতিষ্ঠান সুফান গ্রুপের পরিচালক কলিন পি ক্লার্ক জানান, যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রে সহিংসতা যে বাড়ছে তা এখনই দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। এ প্রতিষ্ঠানের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মার্কিনিরা রাজনৈতিক আদর্শ দ্বারা নিজেদের পরিচালিত করছে না। বরং তারা আবেগ-অনুভূতি দ্বারা ক্রান্তিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাচ্ছে। অর্থাৎ বিপক্ষ রাজনৈতিক দলের প্রতি তাদের এক ধরনের ঘৃণা স্বাভাবিকভাবেই গড়ে উঠছে। একাধিক গবেষণায় এও জানা গেছে, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী অনেকেই নিরাপত্তা সংকটে রয়েছে। বিশেষত ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলার পরই এমন প্রবণতা বাড়তে শুরু করে। ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর জরিপে দেখা গেছে, জরিপে অংশগ্রহণকারী ৭ শতাংশ ব্যক্তিই মনে করে আগ্রাসি নীতিমালার মাধ্যমে ট্রাম্প ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করতে পারেন। বাকি ১০ শতাংশ জানিয়েছে, চাপপ্রয়োগের মাধ্যমে ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখার বিষয়টি অন্যায় নয়।

নিরাপত্তা-বিশ্লেষক ক্লার্কও মূলত এ বিষয়টিতেই জোর দিচ্ছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘এবারের রাজনৈতিক মৌসুম ভয়ংকর। ট্রাম্পের জন্য তা নির্ধারণী ভূমিকায় রয়েছে।’ তার কথা ভুল নয়। কারণ হামলার পর থেকেই রিপাবলিকানরা এমনকি ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট পিক, সিনেটর জেডি ভান্স বাইডেনকে দোষারোপ করে চলেছেন। ভান্স তো বাইডেনকে একজন ফ্যাসিস্ট বলেও অভিহিত করেছেন। একজন রিপাবলিকান আইনবিদ ষড়যন্ত্রতত্ত্বের আভাস দিয়েছেন। জর্জিয়ার মাইক কলিন্স কোনো প্রমাণ ছাড়াই বাইডেনের ওপর হত্যাকাণ্ডের দায় চাপিয়ে দিয়েছেন। অন্য রিপাবলিকান রাজনীতিবিদরাও একই কথা বলছেন। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে একটি বিপজ্জনক সময়ে তারা তাদের বিরোধীদের নিন্দায় মুখর হয়েছেন। রাজনীতি-বিশ্লেষকরা অবশ্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ব্যস্ত। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে স্থিতাবস্থা ফিরে আসে কি না তা পর্যবেক্ষণের চেষ্টা করছেন অনেকেই। তবে অনেকেই ধারণা করছেন, এ হামলার পর ট্রাম্পের প্রতি জনসমর্থন বাড়বে।

ট্রাম্পও এ হামলায় থামছেন না। তিনি সামনের প্রত্যেক নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। বিশেষত হামলার পরও ট্রাম্পের অভিব্যক্তি জনগণের কাছে এক ধরনের বার্তা পৌঁছে দিয়েছে। এ বার্তা লড়াইয়ের। তবে কার বিরুদ্ধে তা এখনও স্পষ্ট নয়। জাতীয় ভাবনায় তিনি বড় পরিবর্তন আনতে চলেছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি সবার সহানুভূতির আশ্রয় নিচ্ছেন। সবাইকে আবেগাক্রান্ত করেই এবার তার লড়াই চালিয়ে যাবেন। ট্রাম্পের প্রতি সমর্থনে সামান্য পরিবর্তন আনতে পারলেও নির্বাচনের মোড় ঘুরে যাবে। ট্রাম্প ও বাইডেন দুজনের জন্যই কিছু সমস্যা রয়েছে। সামান্য একটি অংশের ভোটারদের সমর্থন আদায়ের জন্য তাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে। এ অংশের সমর্থন আনার জন্য তারা নানা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ ফৌজদারি মামলার। অন্যদিকে বাইডেনকে তার নিজ দল প্রার্থিতা পরিহারের জন্য চাপ দিচ্ছে। তার পরও মিশিগান ও উইনকনস্টিনে বাইডেনের তুলনায় ট্রাম্প এগিয়ে আছেন, এমন একটি জরিপ সম্প্রতি প্রকাশ করেছে ব্লুমবার্গ। ডেমোক্র্যাটের এক স্ট্র্যাটেজিস্ট আরশাদ হাসান জানান, ট্রাম্প এ হামলার পর কিছুটা সুবিধা পাচ্ছেন। বাইডেনের প্রচারাভিযান দল ট্রাম্পের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে আগামী দুই দিন কোনো প্রচার চালাবে না। হাসানের মতে, এ হামলার পর মানবিক উদ্যোগ নেওয়া বাইডেনের জন্য জরুরি ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক সহিংসতা ব্যাপক হারে বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশটিতে ৩ শতাধিক বন্দুক সহিংসতা ঘটেছে। এসব ঘটনায় নিহত হয়েছে প্রায় ৪০০ জন।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে শিকাগোর শহরতলিতে তিনটি ভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে গুলি চালিয়ে আটজনকে হত্যা করেছিল এক বন্দুকধারী। এ বছর মার্কিন মুলুকে বন্দুকবাজের তাণ্ডবের অন্যতম প্রথম বড় ঘটনা ছিল সেটি। তবে সেই শুরু বা শেষ নয়। বন্দুক সহিংসতা যুক্তরাষ্ট্রে চলছেই। ট্রাম্পের ওপর হামলার পর বিষয়টি আবার নতুন করে আলোচনায় এসেছে। এ সহিংসতা কমানোর জন্য দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। তার মতে, যে স্থানেই বন্দুক সহিংসতার অভিযোগ আসবে সে স্থানেই আইনের কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে। কোনো ছাড় দিলে হবে না। যদি এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তাহলে আগামী নির্বাচনে কী হবে তা বলা দুষ্কর।

ট্রাম্পের ওপর হামলার আবেগানুভূতিমূলক প্রভাব এখনও মার্কিনিদের মনে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। ২০১১ সালে গ্যাবি গিফর্ডের ওপর হামলা এবং ২০১৭ সালে ভার্জিনিয়ার আলেকজান্দ্রিয়ায় কংগ্রেস সদস্যরা বেজবল খেলার সময় গুলির ঘটনা এখনও কেউ ভোলেনি। ফলে আগামীতে যত নির্বাচনী প্রচার হবে সবকটিতেই মানুষের মনে আতঙ্ক-উদ্বেগ থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীটিতে এক ধরনের যুদ্ধরেখা টানা হচ্ছে। একটি গভীর মর্মান্তিক ঘটনার জন্য খুব কুৎসিত লড়াইয়ে পরিণত হতে পারে। এ ঘটনা নির্বাচনী প্রচারকে নতুন আকার দেবে। দেখার বিষয়, রাজনীতিকরা এ ঘটনা কীভাবে রূপায়ণ দেন।

  • রিপোর্টার, আলজাজিরা

আলজাজিরা থেকে অনুবাদ : আমিরুল আবেদিন

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা