প্রজন্মের ভাবনা
সংগীত কুমার
প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২৪ ১৪:১১ পিএম
অফশোর ব্যাংকিংয়ের মতো সীমিত পরিসরের ব্যাংকিং
সেবা চালু করে গত কয়েক বছরে অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত পাকিস্তান ও
শ্রীলঙ্কা সাফল্য পেয়েছে। দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে চলে
যাওয়া পাকিস্তান ‘রোশান ডিজিটাল অ্যাকাউন্ট’ নামে একটি ব্যাংক সেবার মাধ্যমে বৈদেশিক
মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে সক্ষম হয়। দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ অনুমতি নিয়ে কিছু কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংক
সীমিত পরিসরে অফশোর ব্যাংকিং চালু রাখলেও এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন ছিল না।
চলতি বছর সরকার ‘অফশোর ব্যাংকিং আইন-২০২৪’ নামে একটি বিল
পাস করেছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা কিংবা
উদ্যোগ উৎসাহিত করতে এ ধরনের উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার।
অফশোর ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে বিদেশি
কোনো সূত্রে বৈদেশিক মুদ্রায় তহবিল তৈরি করা যায় এবং দেশি আইনের বাইরে আলাদা আইনকানুনের মাধ্যমে এ তহবিল
রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। অর্থাৎ নিজ দেশ ছাড়া
অন্য কোনো দেশের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা রাখার পদ্ধতি। অফশোর ব্যাংকিং হলো দেশের
ব্যাংকিংব্যবস্থার ভেতরে পৃথক
ব্যাংকিংব্যবস্থা। বিদেশি কোম্পানিকে ঋণ প্রদান এবং বিদেশি উৎস থেকে আমানত
সংগ্রহের সুযোগ রয়েছে অফশোর ব্যাংকিংয়ে। বর্তমানে দেশে ৩৯টি ব্যাংক অফশোর ব্যাংকিং
কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
দেশে অফশোর ব্যাংকিংব্যবস্থা নিয়ে নতুন যে আইনটি চূড়ান্ত
করা হয়েছে তাতে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বৃদ্ধি, রিজার্ভ ও এলসি খোলার সংকট
সমাধানসহ বিদেশি বিনিয়োগ আরও উৎসাহিত হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে ইপিজেডে যে অফশোর
অ্যাকাউন্ট রয়েছে তা কারেন্ট অ্যাকাউন্ট। এসব অ্যাকাউন্টে কোনো লাভ দেওয়া হয় না।
তবে নতুন আইনে লাভ দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। নতুন অফশোর ব্যাংকিং আইনে সুবিধা
অবারিত করার মাধ্যমে দুটি বিশেষ সুবিধা নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। অফশোর ব্যাংকিং সুবিধা
অবারিত করার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ গ্রহণ ও অর্থায়নের সুযোগ সৃষ্টি হবে। কেননা
বিশ্বে যাদের হাতে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগের জন্য আছে, তারা
এ রকম সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। তাদের খুব অল্প সুদে বৈদেশিক তহবিল সংগ্রহের সুযোগ
আছে।
অফশোর ব্যাংকিং আইনে সাময়িক কিছু ডলার সরবরাহের সুযোগ সৃষ্টি করলেও দেশে ডলার সংকট যে তীব্র ও দীর্ঘমেয়াদি আকার ধারণ করেছে, তা থেকে উত্তরণের সুযোগ কম। এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের পথ খুঁজে নেওয়া জরুরি। দেশের রপ্তানি বৃদ্ধি করার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। প্রচলিত পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানির আওতায় আনতে হবে। রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণের জন্য দীর্ঘদিন থেকেই নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। রপ্তানির সুযোগের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা বাড়ানো সম্ভব। অভিযোগ রয়েছে, আমাদের রপ্তানিব্যবস্থা ও লেনদেনের পদ্ধতি আধুনিক নয়। অর্থাৎ রপ্তানি পদ্ধতির আধুনিকায়ন করতে হবে। বিদেশের আমদানিকারক দেশের রপ্তানির আদেশের অপেক্ষায় না থেকে বিদেশের রপ্তানিকারকের কাছে স্ব-উদ্যোগে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশির অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা বৈধ পথে এনে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। মোটকথা, আমাদের বার্ষিক রপ্তানির পরিমাণ আমদানির চেয়ে বেশি না হলেও সমান রাখতেই হবে। এটি করতে পারলে ডলারের চাহিদা স্বাভাবিক হবে এবং মূল্যও স্থিতিশীল থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সে পথেই অগ্রসর হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। অফশোর ব্যাংকিং সীমিত কিছু সুবিধা দিচ্ছে। বিষয়টিকে আমাদের ডলার সংকট মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত ভাবার অবকাশ নেই। তবে এর সুফলভোগী হবেন অনেকেইÑএটুকু নিশ্চিত।