বিশ্লেষণ
সৈয়দ মোহাম্মদ আলী
প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৪ ২২:২৪ পিএম
পাকিস্তানের প্রাবন্ধিক ও গবেষক সৈয়দ মোহাম্মদ আলী
ইতিহাস থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। তবে ইতিহাসের ঠিক কোন অংশ থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত তার জন্য বিশ্লেষণ ও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ভাবার অবকাশ রয়েছে। যে ইতিহাসের ওপর ভর করে শিক্ষা নেওয়া হয় এবং যে ইতিহাসকে ভিত্তি করে কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রয়োগ করা হয়; তা অনেক সফল হয় কিংবা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। বিশ্বের বর্তমান ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে গেলে সতর্ক থাকতেই হবে। একসময় যারা শোষিত ছিল তারাই আজ ফিলিস্তিনের ওপর আগ্রাসন চালাচ্ছে। একসময় স্নায়ুযুদ্ধে এককেন্দ্রিক বিশ্ব মাল্টিপোলারে পরিণত হয়েছে। ক্ষমতাবলয়ে টিকে থাকার জন্য অর্থনৈতিক জোট গড়ে উঠছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে বিধায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে তোলার সময় ব্যাপক চিন্তা করতে হয়। অন্তত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ক্ষেত্রে রাজনীতি এখনও একটি বড় নিয়ামক। পাকিস্তানে ইমরান খান এখন মুক্ত। তার রাজনৈতিক ভবিষ্যত আসলে কি? এ প্রশ্ন সংগতই আমাদের করতে হয়। কিন্তু সার্বিকভাবে তাকাতে হয় গোটা পাকিস্তানের রাজনীতির দিকে।
পাকিস্তানের রাজনীতিতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রভাব রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের
সঙ্গে পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে সামরিক সহায়তা গুরুত্ব পেয়েছে। পাকিস্তানে
রাজনীতির গণতান্ত্রিক আবহ ফিরিয়ে আনার বদলে ধর্মকে সামরিকায়ন করা হয়। গত শতকের আশির
দশকে সোভিয়েতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের মাধ্যমে আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা আনার চেষ্টা
করে পাকিস্তান। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যখন এই অঞ্চলের ওপর আগ্রহ হারিয়ে ফেলে তখন আফগানিস্তান
গৃহযুদ্ধে জর্জরিত হয়ে পড়ে। ফলে পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী এলাকা বাদেও দেশটির অভ্যন্তরে
জঙ্গি তৎপরতা বেগবান হয়। পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কৌশলগত।
ফলে পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অঙ্গনকে আরও শক্তিশালী করে তোলা প্রয়োজন। পাকিস্তানের
অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত
করলেও পাকিস্তানে তা সম্ভব হচ্ছে না। এখনও পাকিস্তান তাদের অতীত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের
ওপর ভর করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। ফলে রাজনৈতিক দলের মধ্যকার আস্থা গড়ে
উঠছে না। এরই প্রতিফলন চলতি বছর নির্বাচনে প্রতীয়মান হয়েছে।
ইমরান খানের সরকার যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণা চালিয়েছিল। অথচ ইমরান
খানের সমর্থকরাই চলতি বছর মার্কিন লবিংয়ের সহায়তা নিয়েছিল, যাতে ইমরান খান মুক্তি পান।
পাকিস্তানের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রাজনীতির ওপর নির্ভর করছে। জোট রাজনীতির ওপর নির্ভর
না করে মাল্টিলেটারিয়ালিজমের দিকে মনোযোগ বাড়ানো জরুরি। বহুপাক্ষিক রাজনৈতিক শক্তি
একত্রিত হলে অনেক কিছুই সম্ভব। প্রযুক্তি এবং ব্যতিক্রমী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়তে হলে
রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি। তবে পাকিস্তানের সরকারও এখন জোটবদ্ধ। এই জোটবদ্ধ রাজনীতি কোনো
সঠিক সিদ্ধান্তের দিকে এগোতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। রাজনৈতিক দলগুলো জোট গড়তেই পারে।
কিন্তু একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলেই তাদের রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি রাখলে মাল্টিপোলারে অবস্থান
গড়ে তোলা কঠিন। বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলোকে বুঝতে হবে। না হলে সংকট আরও তীব্র হবে।
লেখক : গবেষক ও প্রাবন্ধিক
এক্সপ্রেস ট্রিবিউন পাকিস্তান থেকে অনুবাদ : আমিরুল আবেদিন