× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ষাণ্মাসিক মূল্যায়ন পদ্ধতি

শিক্ষার মূলে কুঠারাঘাত

ড. মোহাম্মদ আলী ওয়াক্কাস

প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২৪ ১০:০৪ এএম

ড. মোহাম্মদ আলী ওয়াক্কাস

ড. মোহাম্মদ আলী ওয়াক্কাস

আজকের শিশু আগামীর সম্ভাবনা। যোগ্য এবং কাঙ্ক্ষিত নাগরিক তৈরির মাঝেই প্রগতি ও অগ্রগতিময় সমাজের জয়ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয়। সব সমাজেই শিশু বিকাশ এবং লালনে বেশ মনোনিবেশ করা হয়। অতীত থেকে আজ অবধি এ দেশেও শিশুর বিকাশ এবং উন্নয়নে প্রজাতন্ত্র সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা ও জনকল্যাণকামিতার অংশ হিসেবে শিক্ষার নানা স্তরের মাধ্যমে স্মার্ট নাগরিক উপহার দেওয়ার মানসে কর্মযজ্ঞ করে আসছে। যদিও নানামুখী শিক্ষা কার্যক্রমে অভিভাবক আজ দিশাহারা। বাংলা মাধ্যম, ইংলিশ মিডিয়াম, আলিয়া-কওমি নানা পদের শিক্ষার পসরা সমাজের আভিজাত্য এবং দেউলিয়াত্ব উভয়ই যেন জানান দেয়। স্বাধীনতার এতকাল পরেও শিক্ষা নিয়ে কাটাছেঁড়া যেন থামছেই না। হাল সময়ে কারিকুলাম এবং মূল্যায়ন পদ্ধতি সমাজ, শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং পিতা-মাতার মাঝে অনিশ্চয়তা, উৎকণ্ঠ এবং সর্বোপরি বিষণ্নতার জন্ম দিচ্ছে। নিয়ত নিয়মকানুনের পরিবর্তন এবং অজানা আগামী কী বার্তা দিচ্ছে? কেন এমন তামাশার মূল্যায়ন? কোমলমতি শিশুরাই বা কেন বারবার গিনিপিগ হচ্ছে? অথচ অভিজাত শ্রেণির ইংলিশ মাধ্যম দিব্যি আওতাবহির্ভূত!

দেশের শিক্ষা পদ্ধতি এবং অনুকরণপ্রিয়তা যেন বহুজনমের পুরোনো গীত। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাবনাও ছিল ‘যেখানে চাষ হইতেছে, কলুর ঘানি ও কুমারের চাক ঘুরিতেছে, সেখানে এ শিক্ষার কোনো স্পর্শও পৌঁছায় নাই। অন্য কোনো শিক্ষিত দেশে এমন দুর্যোগ ঘটিতে দেখা যায় না। তাহার কারণ, আমাদের নূতন বিশ্ববিদ্যালয়গুলি দেশের মাটির উপরে নাই, তাহা পরগাছার মতো পরদেশীয় বনস্পতির শাখায় ঝুলিতেছে।’ এ অনুধাবন আজও অনেকটা প্রাসঙ্গিক। আমরা যেন সেদিকেই হাঁটছি! নতুন কারিকুলামে শিক্ষা পদ্ধতি কেমন হবে? শিখন কৌশলের ধরন মূল্যায়ন প্রক্রিয়া এবং মূল্যায়ন হবে কি? এ সবই চর্চিত বিষয় ছিল।যদিও শিক্ষা প্রশাসন প্রাথমিকের তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত মূল্যায়ন স্থগিত রেখেছে। অন্যদিকে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণিতে মূল্যায়ন কোন প্রক্রিয়ায় হবে এ নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল। অবশেষে ৩ জুলাই ষাণ্মাসিক মূল্যায়নের টেবিলে বসেছে এ দেশের অর্ধ কোটি শিক্ষার্থী। অস্পষ্টতা যেন কাটছেই না। কয় ঘণ্টার পরীক্ষা হবে? কখন শুরু হবে? অবশেষে পাঁচ ঘণ্টার মূল্যায়ন। যেখানটায় ৬৫ শতাংশ লিখিত পরীক্ষা এবং ৩৫ শতাংশ কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়ন। সময় বণ্টনে তিন ঘণ্টার লিখিত পরীক্ষা শেষে এক ঘণ্টার বিরতি এবং শেষ ঘণ্টায় কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়ন। এসবে যেন লেজেগোবরে অবস্থা!

মূল্যায়ন ঘিরেই দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। মাসব্যাপী এ কার্যক্রম চলবে। পরীক্ষায় তিন থেকে চার দিনের বিরতি। অতীতে পাবলিক পরীক্ষা, বিশেষত এসএসসি এবং এইচএসসিতেও একই দিনে সকাল-বিকাল পরীক্ষা দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। আর এক্ষণে এত বিরতি! অভিভাবকের কাছে কারিকুলামের অস্পষ্টতার সুযোগে শিশুরা যে কী করছে তা বোঝা বড় দায়। সময় করে পড়ার টেবিলে বসা, বই পড়া অনুশীলন এসবে অনেকটাই ছেদ পড়েছে। গন্তব্য কোন দিকে? কারিকুলামের অনেক ভালো দিক আছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব এবং ভিশন- ৪১ উপযোগী স্মার্ট সিটিজেন তৈরির প্রয়াস এসবে দেখা যায়। যেখানটায় শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতার বিকাশ, দলীয় কার্যক্রম, হাতের কাজ এবং অ্যাসাইনমেন্টের মতো নানামুখী কর্মচাঞ্চল্যে শিশুরা মনোনিবেশ করার সুযোগ পাচ্ছে। এসবেরও প্রয়োজন আছে। তবে বিপত্তিটা অন্যত্র। এসব কীভাবে করছে? ঘটা করে স্কুল আঙিনায় বিরিয়ানির আয়োজন, নানা পদের উপকরণ সংগ্রহের তাগাদা নিম্নবিত্ত অভিভাবকদের কাছে গলার কাঁটা হিসেবে বিঁধছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের তত্ত্বাবধানে নৈপুণ্য অ্যাপের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকের আইডিতে প্রশ্নপত্র পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং এসব ট্রাকিংয়ের আওতায়। এতসবের পরও পরীক্ষার আগের রাতে সোশ্যাল মিডিয়া ইউটিউবে প্রশ্নপত্র ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে। কিসের আলামত? কোথায় যেন জবাবদিহির ঘাটতি। যদিও এনসিটিবি বার্তায় হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে। সমাজমাধ্যমে শেয়ারের বিষয়টি প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবশ্য খোদ শিক্ষামন্ত্রী প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীর ওপর পড়বে না বলে মন্তব্য করেছেন। আসলে কী হচ্ছে? শিশু, অভিভাবক, কোচিং সেন্টার, শিক্ষক সবাই হুমড়ি খেয়ে ইউটিউব এবং ফেসবুকে নজর রাখছে। এসব কি শুভলক্ষণ?

শিক্ষার্থীদের অবচেতনভাবে আমরা প্রতারণার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। এসব সামাজিক জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলার আশঙ্কা রয়েছে। নেলসন ম্যান্ডেলার পর্যবেক্ষণ হলো, ‘কোনো জাতিকে ধ্বংস করার জন্য পারমাণবিক হামলা কিংবা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের দরকার নেই। সে জাতির শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় প্রতারণার সুযোগ দিলেই হবে। এভাবে পরীক্ষা দিয়ে তৈরি হওয়া ডাক্তারের হাতে রোগীর মৃত্যু হবে। প্রকৌশলীদের নির্মিত ইমারত ধ্বংস হবে। বিচারকের হাতে বিচারব্যবস্থার কবর রচিত হবে। অতএব শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়া মানে একটা জাতির অবলুপ্তি।’ আমরা কি সেদিকেই আগুয়ান? অভিভাবক হিসেবে শঙ্কেত হই যখন ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া সন্তান এসে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রাপ্ত প্রশ্নের সমাধান শিক্ষার্থীরা গোপনে সঙ্গে নিয়ে আসছে। শিশু মননে কী বার্তা যাচ্ছে? চৌর্যবৃত্তির সঙ্গে যদি এ বয়সে অভিযোজন ঘটে তাহলে মেধার স্ফুরণ ঘটবে কীভাবে? অভিভাবক হিসেবে হতাশ হই। ছাত্ররা এখন আর পড়তে চায় না; সারাক্ষণ চ্যাট-অনলাইনে যেন কী খুঁজে বেড়ায়!

পরীক্ষায় অসদুপায় আইনে অপরাধ বলে বিবেচিত। এর কারণে চলতি পরীক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের দলে দলে বহিষ্কৃত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এসব কিসের ইঙ্গিত বহন করে? সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি আবদুল্লাহ বিন বাজ বলেন, ‘পরীক্ষায় অসদাচরণ করা মানুষের লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রতারণার মতোই হারাম এবং একই ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা। অথচ দিব্বি শিক্ষার্থীরা আগের রাতে প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে নানা উপায়ে রপ্ত করে পরীক্ষায় বসছে। এসব শিশুই আমাদের আগামী। সময়ের প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক বাস্তবতায় কারিকুলামে সংযোজন-বিয়োজন স্বাভাবিক। তবে এ যেন সহনীয় মাত্রায় হয়। খেয়াল রাখা দরকার, মূল্যায়নের নামে যেন প্রহসন চ্যাট-জিপিটির আসক্তি অনলাইনে বিচরণের অবাধ সুযোগ মানবিক সমাজ বিনির্মাণে দায় হতে না পারে। আগামী নিরাপদ রাখার স্বার্থে সতর্কভাবে এসবে নজর দেওয়া প্রয়োজন। আশা করি কর্তাব্যক্তিদের বোধোদয় হবে।

  • অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা