সীমানা ছাড়িয়ে
ক্লি ক্যালকাট
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৪ ০৯:২৮ এএম
দীর্ঘ ৮০ বছর
পর ফ্রান্সে নাৎসিবাদী ডান কট্টরপন্থি দল আসার আশঙ্কা জেগেছিল। ম্যারিন লু পেনের নেতৃত্বাধীন
ন্যাশনাল র্যালি প্রথম ধাপে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের
আগে ফ্রান্সের বিভিন্ন স্থানে ভোটারদের মনে শঙ্কা জেগে ওঠে। তারা আন্দোলনে নেমে পড়ে।
আর তার প্রয়োগ ঘটে দ্বিতীয় ধাপের ভোটে। ম্যারিন লু পেনের দল এবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে
পারত। তবে বামপন্থি জোট তাদের পথে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায়। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন যেন
এক বড় জঞ্জাল তৈরি করেছে দেশটির জন্য। ফ্রান্সে কোনো দলই সরকার গঠন করার মতো আসনে জয়ী
হয়নি। অর্থাৎ ঝুলন্ত পার্লামেন্টের দিকে এগিয়ে চলেছে ফ্রান্স। ইউরোপের অন্য দেশগুলোয়
ঝুলন্ত পার্লামেন্ট অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে ফ্রান্সের ইতিহাসে এবারই প্রথম এমন একটি
সমস্যা দেখা দিয়েছে। সমঝোতা হবে কীভাবে?
নির্বাচনের আগে
মাখোঁর দল ম্যারিন লু পেনকে পরাজিত করার ঘোষণা দিয়েছিল। বাধ্যবাধকতা না থাকলেও তিনি
আগেই নির্বাচনের ঘোষণা দেন। রাজনৈতিকভাবে নিজেকে একটু এগিয়ে রাখার সিদ্ধান্তে ছিলেন
তিনি। এর ফল ভালো হয়নি। ম্যারিন লু পেনের ন্যাশনাল র্যালি গতবারের চেয়ে ৫০টি আসন বেশি
পেয়েছে প্রথম ধাপে। মাখোঁর দল তৃতীয় দলের তালিকায় চলে যায়। সমস্যার এ সময়ে মাখোঁর প্রধানমন্ত্রী
গ্যাব্রিয়েল আতাল পদত্যাগ করেছেন যদিও মাখোঁ তাকে আপাতত দায়িত্বে থাকার অনুরোধ করেছেন।
পদত্যাগের পর ফ্রান্সের নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়েও চলছে জল্পনাকল্পনা। গ্যাব্রিয়েল আতাল
কোনোভাবেই বামপন্থি কোনো দলের নেতার সঙ্গে ক্ষমতাভাগের পক্ষে নন। তিনি জানিয়েছেন, কট্টর
বামপন্থি জ্যাঁ লুক ভেলেন্সন রয়েছেন দ্বিতীয় ধাপের বিজয়ীদের মধ্যে। এমন কারও সঙ্গে
ক্ষমতা ভাগাভাগির কোনো ইচ্ছেও নেই।
ম্যারিন লু পেনকে
পরাজিত করার জন্য কৌশলগত একটি জোট গড়েছিলেন মাখোঁ। তিনিও যে বামপন্থিদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়ে ক্ষমতা ভাগাভাগিতে আগ্রহী এমন নয়। ফলে সমঝোতা কীভাবে হবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে
সংকট। কারণ দ্বিতীয় ধাপে বামপন্থিরাই বিজয়ী হয়েছে। ফ্রান্সে এবারই প্রথম এমন একটি সংকট
দেখা দিয়েছে। অতীতের নির্বাচনে একাধিক দল জোট বা গ্রুপ বেঁধে নির্বাচন করেছে। তারা
সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েছে। নির্বাচনের আগে এ ধরনের গ্রুপের মধ্যে সমন্বয় এবং কিছুটা সমঝোতা
আগে থেকেই ছিল। মাখোঁর রেনেসাঁ পার্টির এক সদস্য জানান, ‘আমি নিজেই রেনেসাঁ গ্রুপের
একজন সদস্য। আমাদের জোটের ২৫০ জন পার্লামেন্টে ছিল। সবার মধ্যে সমঝোতা থাকার পরও নীতিনির্ধারণী
পর্যায়ে সংকট দেখা দিয়েছে।’
চলতি বছর ফ্রান্সে অবশ্য ঝুলন্ত পার্লামেন্ট অন্যরকম। রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেই মূলত জোট বাঁধে মাখোঁর দল আর বামপন্থিরা। তাদের কৌশল ফলপ্রসূ হয়েছে। কিন্তু সংকট এখনও শেষ হয়নি। কারণ ফ্রান্সে কে ক্ষমতায় আসবে আর ঝুলন্ত পার্লামেন্ট কেমন হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। আরও এক বছরের আগে মাখোঁর পক্ষে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়। ফ্রান্সের সংবিধান অনুসারে মাখোঁকে এ এক বছরে বেশ কিছু কাজ করতে হবে। মুখোমুখি হতে হবে আস্থা ভোটের। সব মিলিয়ে এ বছরের নির্বাচন ফ্রান্সকে বড় বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে।
পলিটিকো থেকে
সংক্ষেপিত অনুবাদ : আমিরুল আবেদিন