× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পেলোসির জেদের তাইপে সফর

আরেক সংকটের কিনারে বিশ্ব

রাশেদ মেহেদী

প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২২ ১৮:১১ পিএম

আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০২২ ১৮:১৬ পিএম

বুধবার তাইপেতে প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি

বুধবার তাইপেতে প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি

তাইওয়ানে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সংক্ষিপ্ত সফর কি দীর্ঘমেয়াদি বৈশ্বিক সংকটের নতুন আশঙ্কার বার্তা দিয়ে গেল? এমনিতেই ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর থেকে বিশ্বজুড়ে এক ধরনের সংকট চলছে। বিশেষ করে বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশের মতো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলা দেশগুলো। করোনা মহামারির ধকল সামলে ঘুরে দাঁড়াতেই আবার ইউক্রেন সংকটের ধাক্কা। এখন যদি তাইওয়ানকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র-চীন টানাপড়েন আরও ঘনীভূত হয় তাহলে তার বিপুল প্রভাবের কারণে আরও বড় সংকটজনক পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে বিশ্বকে। বিশেষ করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সামনে রেখে যে নতুন সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে, বিশ্বে সেমিকন্ডাকটার উৎপাদন করা তাইওয়ান কোন সংকটে পড়লে সেই সম্ভাবনার পথটিও ঘন কুয়াশায় আটকে যাবে, সন্দেহ নাই। 

তাইওয়ান দ্বীপ এমনকি ভূখন্ড যার ইতিহাস অন্যের দখলে থাকার মধ্যেই। ইতিহাস থেকে দেখা যায়, ১৮৯৫ সালের আগে তাইওয়ান চীনেরই নিয়ন্ত্রণে ছিল। ১৮৯৫ সালে জাপানের সঙ্গে যুদ্ধে চীন হেরে গেলে তাইওয়ান জাপানের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এরপর ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান হেরে গেলে চীন আবারও তাইওয়ানের দখল বুঝে পায়। কিন্ত পশ্চিমা বিশ্ব এবার  গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক অবস্থানে থাকা তাইওয়ানকে চীনের নিয়ন্ত্রণে ছেড়ে দিয়ে রাখতে চায়নি। যে কারণে তাইওয়ানে একটি স্বাধীন সরকার গঠন এবং তাকে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যবস্থাও তারা করল। যদিও স্বীকৃতি দেওয়া দেশের সংখ্যা মাত্র ১৪। কিন্তু স্বীকৃতি না দিলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাইওয়ানের সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে, বাণিজ্যও করছে। অনেক দেশই কৌশলগত কারণে তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দেয়নি, কিন্তু তাইওয়ানের সঙ্গে ব্যবসা আছে, সম্পর্কও রাখছে। 

তাইওয়ান এমন একটি অবস্থানে যেখানে চীন একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারলে প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিাঞ্চলে তারা ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে পারবে। বিশেষ করে গুয়াম এবং হাওয়াইতে মার্কিন সামরিক ঘাঁটির দিকেও কড়া নজর রাখতে পারবে, যেটা বড় হুমকি হয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য। একই সঙ্গে জাপান ও কোরিয়া উপদ্বীপের ওপরও চোখ রাঙাতে পারবে। ঠিক এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো তাইওয়ানকে নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকা একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে দেখতে চায়। 

শুধুমাত্র এই প্রেক্ষাপটে মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফর অনুষ্ঠিত হলে হয়ত বিষয়টি আগের টানাপোড়েনের ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখা যেত। কিন্তু ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের ঘটনার পর বিশ্বরাজনীতির ঘোলাটে সমীকরণের মধ্যে আরও একটি জটিল ধাঁধার তৈরি করল ন্যান্সির তাইওয়ান সফর। ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার প্রতি চীনের সমর্থন স্পষ্ট। এই সমর্থন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চীনের অবস্থানকেও আগের চেয়ে আরও পরিস্কার করেছে। এর ফলে বাইডেন-শি জিন পিং যতবারই টেলিফোন আলাপ করুন না কেন দুই দেশের টানাপোড়েন কমেনি। এই প্রেক্ষাপটে চীনের হুমকি উপেক্ষা করে মার্কিন স্পিকারের তাইওয়ান সফর নিছক একটি সফর হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। এ সফরকে নতুন বিশ্ব সংকটের একটি সূচনা হিসেবে দেখা যেতে পারে। কারণ তাইওয়ান ঘিরে চীনের সামরিক মহড়া বলতে গেলে পুরোদমে শুরু হয়েছে। দক্ষিণ সাগরে জাহাজ চলাচলও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আর এরই মধ্যে তাইওয়ান ইস্যুতে চীনকে নিঃশর্ত সমর্থন দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। 

এরই মধ্যে চীন তাইওয়ানে সামরিক বিমান মহড়া দিয়েছে, বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। বেইজিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে কড়া ধমক দিয়েছে। বড় ধরনের পরিণতি ভোগ করার হুমকি তো আছেই। এর পাশাপাশি দেশে দেশে চীনের রাষ্ট্রদূতরা এক চীন নীতির প্রতি সমর্থন প্রত্যাশা করে বিবৃতি দিয়েছেন। ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জি মিংও বিবৃতি দিয়ে বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও সেই প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। এটা বন্ধুত্বপূর্ণ আহবান এবং একই সঙ্গে পরোক্ষ হুমকি বলেও ধরে নেওয়া যেতে পারে। এর বিপরীতৈ এখন যুক্তরাষ্ট্র জোরালোভাবে তাইওয়ানের জন্য স্বীকৃতি আদায়ে ব্যস্ত হয়ে উঠলে সেটা বড় ধরনের স্নায়ুচাপের জন্ম দেবে বাংলাদেশের মত দেশগুলোর কূটনীতিতে। 

তাইওয়ান প্রযুক্তির বাজারে অন্যতম প্রভাবশালী দেশ। বিশ্বে প্রয়োজনীয় মোট সেমিকন্ডাকটরের ৬৪ শতাংশই আসে এই ছোট এই দ্বীপ। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির দুনিয়ায় স্মার্টফোনের মত সাধারণের ব্যবহারের ডিভাইস বলুন আর অনন্য সাধারণদের যুদ্ধ বিমানই বলুন সেমিকন্ডকটার লাগবেই, এর কোন বিকল্প নাই। চীন তথ্যপ্রযুক্তির বাজারের বড় নিয়ন্ত্রক হলেও তাইওয়ানের কাছে সেমিকন্ডাকটরের বাজারে এখনও হাঁটি হাঁটি পা পা করছে। কারণ সেমিকন্ডাকটরের বাজারে চীন ১০ শতাংশ মার্কেট শেয়ারও পায়নি। এ অবস্থায় তাইওয়ান বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়লে চীনের তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য প্রতিষ্ঠানগুলোও বড় ধরনের উৎপাদন সংকটে পড়তে পারে। ফলে তাইওয়ান নিয়ে চীন আরও সতর্কভাবে পা না ফেললে নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুড়াল মারার মত ঘটনা ঘটলেও অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। 

যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলো মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার। সভ্যতার দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হিসেবে নিজেদের জাহির করেন তারা। কিন্তু একই সঙ্গে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্রদের বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন নতুন সংকট তৈরির ক্ষেত্রে ক্রীড়ানকের ভূমিকা বহু পুরনো। যুগে যুগেই চরম নিষ্ঠুরতার পরিচয়ও দিয়েছে পশ্চিমারা নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্যও। করোনা এবং ইউক্রেন সংকটের পর বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন আরও একটি সংকটের জন্ম দেওয়ার জন্যই হয়ত জেদ করে ন্যান্সির তাইপে সফর। তবে নতুন আর একটি বৈশ্বিক সংকট তৈরির জন্য কেন এত তোড়জোড় যেটা জানতে হলে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতেই হবে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ঘটনা ঘটানোর বেশ কয়েক বছর পরই তাদের নৈতিক-অনৈতিক গোপন নথি প্রকাশ করে থাকে!

/প্রবা/এইচকে/

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা