× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

প্রেক্ষাপট

বিলুপ্তির পথে দোয়েল

কামরুজ্জামান তোতা

প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৪ ০৯:৪০ এএম

ছবি : আরিফুল আমিন প্লাবন

ছবি : আরিফুল আমিন প্লাবন

জাতীয় পাখি দোয়েল। শিশুর বর্ণমালা পরিচয়ের সময় এই পাখির সঙ্গে আমাদের পরিচয় ঘটে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বর্ণপরিচয়ের বইয়েই এখন দোয়েলের ছবি দেখা যায়। সুন্দর এই পাখির চি চি শব্দ এখন আর শুনতে পাওয়া যায় না। গ্রামীণ অঞ্চলে বাঁশঝাড়, নারিকেল, সজনে ঝাড় এমনকি ঘরের ছাউনি বা ছাদে এই পাখি সব সময় দেখা যেত। কালো আর সাদা রঙের ছোট পাখিটির সঙ্গে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য স্মৃতিজড়িত রয়েছে। কারণ হিসেবে জানা গেছে, জলবায়ুর পরিবর্তন, ক্রমান্বয়ে অপরিকল্পিত আবাসস্থল সৃষ্টি, বেআইনি শিকার, শিকারোত্তর চোরাচালান, যত্রতত্র কীটনাশক প্রয়োগ, বিদেশি আগ্রাসনসহ বিভিন্ন কারণ হারিয়ে যাচ্ছে জাতীয় পাখি দোয়েল। শিকারিরা অবৈধভাবে বনে প্রবেশ করে বন্যপ্রাণী ও পক্ষীকূল হত্যা করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, তৎকালীন সরকার ১৯৬১ সালে গঠিত বন্যপ্রাণী তহবিল সমতলভূমির বনের অবলুপ্ত রক্ষার্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৩ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে বিভিন্ন উপায় উদ্ভাবন করে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন, নির্ধারিত বনাঞ্চল সৃষ্টি, উদ্যান প্রতিষ্ঠা, শিকার সংরক্ষিত এলাকা সৃষ্টি, বন্যপ্রাণী নিবাস এবং বিনোদন পার্ক স্থাপন।

দোয়েল সাদা-কালোয় সজ্জিত বুলবুল আকৃতির খাটো লেজবিশিষ্ট পাখি। দেশের প্রায় সব জায়গায় দোয়েল দেখতে পাওয়া যেত। পুরুষ দোয়েলের উপরিভাগ চকচকে নীলাভ-কালো। ডানা স্পষ্ট সাদা লম্বা দাগসহ কালচে বাদামি রঙের। লেজ কালো তবে প্রান্তঅংশ সাদা। স্ত্রী দোয়েলের দেহের কালো অংশগুলো বাদামি এবং ময়লা বালির মতো দেখায়। গাছের প্রাকৃতিক খোঁড়লে কিংবা ঝোপঝাড়ে এরা বাসা বাঁধে। সাধারণত জোড়ায় জোড়ায় ঝোপঝাড়যুক্ত বন, বাগান, গ্রাম তথা লোকালয়ে এদের দেখতে পাওয়া যায়। মিষ্টি মোলায়েম শিস দেয়। লেজের ডগা নাচায়। স্থিরভাবে বসা অবস্থায় দোয়েলের লেজ মোরগের লেজের মতো দেখায়। প্রজনন ঋতুতে পুরুষ দোয়েল খুব ভোরে এবং পড়ন্ত দুপুরে সুরেলা গলায় অত্যন্ত জোরে গান গায়। অন্য পাখির ডাকও এরা নকল করতে পারে। দোয়েল প্রধানত পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ খায়। এপ্রিল থেকে জুলাই মাস এদের প্রজনন ঋতু। স্ত্রী দোয়েল ৩-৫টি ডিম দেয়। সাধারণভাবে ডিমগুলো ফ্যাকাশে মনে হয়। তবে দোয়েলের ডিমের রঙ লালচে-বাদামি আভা ও ছোপযুক্ত নীলাভ সবুজ হয়ে থাকে। এই পাখি ১৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।

বাংলাদেশে বহু জাতের ও বহু চরিত্রের পাখির মধ্যে দোয়েলকে জাতীয় পাখি নির্বাচন করা হয়েছে। এর চেহারার সঙ্গে যেমনি, এর স্বভাবের সঙ্গেও তেমনি বাংলার প্রকৃতির যেন চমৎকার মিল খুঁজ পাওয়া যায়। ছোট্ট আকৃতির এ পাখির শরীর প্রায় ছয় ইঞ্চি লম্বা, হালকা-পাতলা শরীর, পা দুটি এত চিকন যেন খিলের মতো। গায়ের রঙ সাদা ও কালোয় মেশানো। পিঠের পালকগুলো মিশকালো, পেটটি ধবধবে সাদা। লেজের আকৃতি শরীরের তুলনায় কিছুটা বড়, তবে ঝোলানো নয়, চামচের মতো। দোয়েলকে গানের পাখিও বলে। মৃদু স্বভাবের এই পাখিটি প্রকৃতির নিরুত্তাপ আবহাওয়া চলাফেরা করে। তাই আধফোটা ভোর ও সন্ধ্যার আধো আলো আধো অন্ধকারে একে দেখা যায়। এই সুন্দর পাখিটি সবার কাছে বড় আদরের, মর্যাদাটাও অনেক। দোয়েল এক অনাবিল শান্তির প্রতীক।

দোয়েল পাখি সংরক্ষণে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি আমাদের বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করা একান্ত দরকার। বন বিভাগ কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনায় এসব পাখি হারিয়ে যাচ্ছে নাকি মানবসৃষ্ট প্রকৃতি বিনষ্টের ফলেই এসব পাখি বিলুপ্তির পথে তা ভাবিয়ে তুলেছে। পাখির সুরক্ষায় দেশে আইন তো আছে। আমরা চাই সেই আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন হোক। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য সরকারের উচিত আইন প্রণয়ন করে পাখি শিকারের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ জোরদার করা, সরকারি-বেসরকারিভাবে পক্ষীকূল সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা