দিবস
মো. অহিদুর রহমান
প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৪ ১৩:৩৫ পিএম
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাড়ছে দুর্যোগ। দুর্যোগে দেশের হাওর, পাহাড়
ও সমুদ্রপারের প্রান্তিক মানুষ নিজ বাড়ি, জমি, সম্পদ হারিয়ে শহরে প্রাথমিক আশ্রয় নিচ্ছে।
দেশের অনেক প্রান্তিক মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নিজ বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের ধারণা অনুযায়ী আগামী ২৫ বছরের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বে
২০ কোটির বেশি মানুষ নিজ বাড়িঘর ছেড়ে অন্য স্থানে যেতে বাধ্য হবে। বাংলাদেশে দিন দিন
বেড়ে চলেছে জলবায়ু উদ্বাস্তুর সংখ্যা। সরকার জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য আশ্রায়ণ প্রকল্প
করেছে। মানুষ চায় নিজের একটি বাড়ি। ভালো লাগা ও ভালোবাসার ঘর। প্রতিবারের মতো এবারও
২০ জুন পালিত হচ্ছে বিশ্ব শরণার্থী দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্যÑআওয়ার হোম অর্থাৎ আমার
বাড়ি।
জলবায়ু পরিবর্তন ও পৃথিবীব্যাপী মহাদুর্যোগের জন্য পৃথিবীর ধনী দেশের
মানুষ দায়ী। তাদের স্বার্থ, যুদ্ধ, লোভ, লাভ আর সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের জন্য সুন্দর
পৃথিবী আজ দুর্যোগের সম্মুখীন প্রতিদিন। আর দুর্যোগের কারণে দিন দিন বাড়ছে উদ্বাস্তু
মানুষের সংখ্যা। শরণার্থী হলো এমন এক ব্যক্তি বা পরিবার বা জাতিগোষ্ঠী যে তার মাতৃভূমিতে
নাগরিকতা, বিশেষ সম্প্রদায়ভুক্ত, বিশেষ ধর্ম গ্রহণ করার, জাতীয় পরিচয়পত্র, রাজনৈতিক
মতামত প্রকাশের কারণে বিপদের সম্মুখীন অথবা বিপদের আশঙ্কা আছে, সাংঘাতিক এক বিপদগ্রস্ত
ও অনিরাপদ অথবা প্রতিহিংসার ভয়ে নিজের দেশে আশ্রয় নিয়ে থাকতে অনিচ্ছুক। জেনেভা কনভেনশনের
শরণার্থী সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি তার জাতি-ধর্ম, নাগরিকতা, বিশেষ সম্প্রদায়
অথবা রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে নিপীড়নের আশঙ্কার সম্মুখীন এবং তার এ আশঙ্কার উত্তম
সাক্ষ্যপ্রমাণের ওপর প্রতিষ্ঠিত এ কারণে সে যে দেশের নাগরিক সে দেশের বাইরে অবস্থান
করছে এবং নিজের দেশে নিরাপত্তা পাচ্ছে না এবং উক্ত নিপীড়নের ভয়ে নিজের দেশে নিরাপত্তাব্যবস্থার
ওপর আস্থাহীন এই নিজ দেশে ফিরতে পারছে না অথবা ফিরে যেতে অনিচ্ছুক।
মানুষ লাখো কোটি বছর সাধনার পর একটি সভ্য সমাজ গড়ে তুলেছে। নিশ্চিত
করেছে নিজের শান্তির নীড়। আমার বাড়ি, আমার ঘর। কিন্তু মানুষের অবিবেচনামূলক কাজের ফলে
লোভ ও লাভের কারণে বিশালসংখ্যক জনগোষ্ঠী নির্যাতন, সংঘাত, যুদ্ধ, সহিংসতা, পরিবেশগত
বিপর্যয়, রাজনৈতিক সংঘাত, জলবায়ুগত কারণে স্থানীয়ভাবে জাতীয়ভাবে উদ্বাস্তু হয়ে নিজের
আবাস হারিয়ে শরণার্থী হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দিন দিন শরণার্থীর সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে জলবায়ু
শরণার্থী। জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী বর্তমানে বিশ্বে বাস্তুচ্যুতের সংখ্যা প্রায় ১২ কোটি।
ইউএনএইচসিআরের বৈশ্বিক বাস্তুচ্যুতি বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদনে রাশিয়ার আক্রমণের পর
প্রায় ১ কোটি ১৪ লাখ ইউক্রেনীয় বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। শরণার্থীদের
অধিকার সুরক্ষায় বড় মাধ্যম হলো ১৯৫১ সালের শরণার্থী কনভেনশন এবং ১৯৬৭ সালের প্রটোকলের
সঠিক ব্যবহার।
জলবায়ু উদ্বাস্তুরা আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা সুরক্ষিত নয় তাই রাজনৈতিক বা অন্যান্য জাতিগত দ্বন্দ্বে পলায়মান উদ্বাস্তুদের থেকে অধিকতর রাজনৈতিক ঝুঁকি মোকাবিলা করতে হয় পরিবেশগত শরণার্থীদের। শরণার্থী শিবির থেকে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের যেকোনো সময় তাদের বিধ্বস্ত বাড়িঘর বা জনপদে ফেরত পাঠানোর আশঙ্কা থাকে। সিডর, বিজলি, আইলা, বুলবুল, রেশমি, ১৯৭০ সাল, ১৯৮৫ সাল, ১৯৯১ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়, রেমাল, আমফান, মহাসেন, কোমেন, ভিয়ারু, রোয়ানু, ডিয়ামুসহ অনেক সাইক্লোন ও ঘূর্ণিঝড় এ দেশের মানুষ মোকাবিলা করেছে। নিজ বাড়ি ছেড়ে, হারিয়ে জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। বর্তমান বিশ্বে প্রতি ৭৪ জনের মধ্যে একজনের বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির শিকার। এদের মৌলিক মানবিক নিরাপত্তার অধিকার নেই বললেই চলে। আন্তর্জাতিক মহলে এখনও উদ্বাস্তুদের অধিকারের বিষয়টি আলোচনার টেবিলে আছে। আমরা আশা করি সংঘাত, নিপীড়ন, বৈষম্য, সহিংসতার মতো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত শরণার্থী বা জলবায়ু শরণার্থী যেন একটি স্থায়ী বিষয় না হয়। বিশ্বের শরণার্থীদের মৌলিক ও মানবাধিকার ফিরিয়ে দিতে রাষ্ট্রসমূহ আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে- এটাই কাম্য।