× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু, গতিহীন সরকারি প্রকল্প

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২৪ ০৯:৩৩ এএম

পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু, গতিহীন সরকারি প্রকল্প

মৃত্যু জীবনে অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু অস্বাভাবিক কিংবা অকালমৃত্যু দুই-ই অধিক বেদনার। এরই চিত্র উঠে এসেছে ৮ জুন প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার ক্রমাগত বাড়লেও এ সংক্রান্ত সরকারি প্রকল্পে এখনও কচ্ছপগতি। ওই প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, গত চার বছরে পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ১৬৫ জনের। এর মধ্যে ৩ হাজার ৬০৭ জন অর্থাৎ ৮৮ শতাংশই শিশু। প্রতিবছর শিশুমৃত্যুর এ হার বাড়ছে। ২০২০ ও ২০২১ সালে ৯ বছর বয়সি শিশুদের পানিতে ডুবে মৃত্যুহার ছিল যথাক্রমে ৬৫ ও ৭৩ শতাংশ। নদীমাতৃক ও ষড়ঋতুর বাংলাদেশের আদি চরিত্র যদিও অনেকাংশেই বিলোপ হওয়ার পথে, তবুও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ সিলেট-ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-নেত্রকোণার ভাটি অঞ্চলে এখনও প্লাবনের তোড়জোড় প্রকৃতিগতভাবেই দৃশ্যমান হয়। বর্ষা মৌসুম শুরু হয়েছে মাত্র। এরই মধ্যে এই মৃত্যুহার সম্পর্কে যা জানা গেছে তা আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না।

পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে সরকারি উদ্যোগ নেওয়ার দাবি অনেক পুরোনো। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ‘সমাজভিত্তিক সমন্বিত শিশুযত্ন কেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ ও সুরক্ষা এবং সাঁতার সুবিধা প্রদান’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। দুই বছর মেয়াদি প্রকল্পটি ২০২২ সালে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও প্রায় দুই বছর পরও তা আলোর মুখ দেখেনি। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ১৬টি জেলার ৪৫টি উপজেলায় ৮ হাজার দিবাযত্নকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হবেÑ এটি পরিকল্পনার অন্যতম বিষয়। একই সঙ্গে সেখানে দুই লাখ শিশুর দিবাযত্ন নেওয়া হবে এবং নির্দিষ্ট বয়সের সাঁতার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবেÑ তা-ও পরিকল্পনাভুক্ত। প্রায় ২৭১ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি পরিচালনায় রয়েছে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এর অগ্রগতিচিত্র একেবারেই বিবর্ণ। পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার বাড়লেও প্রকল্পটি গতিহীন থাকায় সংগতই অনেক প্রশ্ন উঠেছে। আমাদের প্রকৃতি ও ঋতুগত রূপ গ্রামেগঞ্জে শিশুদের বিশেষ করে বর্ষাকালে ‘আয় আয়’ করে ডাকে জলাশয়। এই ডাক অনেকের জন্যই কাল হয়ে দাঁড়ায়। কারণ তারা জানে না ওই পানিতে সাঁতার না-জানা কেউ ঝাঁপিয়ে পড়া মানেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা। ভিন্ন এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশে প্রতিবছর গড়ে ১৪ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায় আর দিনওয়ারি সেই সংখ্যা ৩৮-৪০ জন।

এমন অপমৃত্যু সিংহভাগ ঠেকানো সম্ভব শুধু সাঁতার শিখিয়েই। তারপরও কেন অতিপ্রয়োজনীয় এই শিক্ষাটা অনেক ক্ষেত্রেই পারিবারিক কিংবা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিশুদের দেওয়া হচ্ছে নাÑ এই প্রশ্ন সংগত কারণেই সামনে আসে। পানিপ্রধান দেশ হওয়ার পরও আমাদের প্রাথমিক শিক্ষাক্রমে কেন এর পাঠ বাধ্যতামূলক করা হয় না, তাও সংগত কারণেই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হিসেবে উত্থাপিত হয়। একই সঙ্গে এ প্রশ্নও আমরা রাখতে চাই, যে কাজটি পারিবারিক কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সম্ভব তা-ও কি আমাদের শিশুদের বিদেশিদের এসে শিখিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি পানিতে ডুবে থাকা উদ্ধারকৃত অচেতন দেহ উদ্ধারের পর প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যাপারেও অনেক ক্ষেত্রেই রয়েছে অজ্ঞতা। এই বিদ্যা না জানা থাকার কারণে অনেক ক্ষেত্রে পানি থেকে উদ্ধার করার পরও বহু জীবন বাঁচানো সম্ভব হয় না। এই জনসচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড স্থানীয় প্রশাসন কিংবা স্থানীয় সরকার কাঠামোর মাধ্যমেই সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।

গোটা দেশেই পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও কিছু কিছু এলাকায় এটি খুবই গুরুতর সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে বিভিন্নভাবে এই বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে আলোচনা-পর্যালোচনা কম হয়নি। এর সূত্র ধরেই ভূমির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, অরক্ষিত জলাশয়ে বেষ্টনী দেওয়া, শিশুদের সাঁতার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, সচেতনতা বৃদ্ধিতে অভিভাবকদের নিয়ে উঠান বৈঠক, শিশুদের দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে ওয়ার্ড পর্যায়ে রেস্কিউ টিম গঠন এবং দ্রুত যোগাযোগের জন্য হটলাইন অ্যাপস চালুর তাগিদও বহুবার এসেছে। কিন্তু এসব পরামর্শ স্থানীয় প্রশাসন কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো কতটা আমলে নেয়Ñ এ প্রশ্নের উত্তর নিহিত রয়েছে বিদ্যমান বাস্তবতার মধ্যেই। আমরা চাই, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার শূন্যে নেমে আসুক এবং তা মোটেও দুরূহ কিছু নয়। সাঁতার একটি প্রাথমিক জীবন রক্ষাকারী দক্ষতা। যদি সাঁতার শেখানো যায়, তাহলে শিশুর জীবন হন্তারক হয়ে থাকবে না প্রবাহিত পানি। আমরা মনে করি, শিশুদের সাঁতার শেখানোর জন্য সামগ্রিক পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। একই সঙ্গে গৃহীত সরকারি প্রকল্পে গতিশীলতা আনা বাঞ্ছনীয়। প্রকল্প গতিশীল করে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সময়ের গুরুত্বপূর্ণ দাবি। এ ব্যাপারে অভিভাবকসহ সবাইকে দ্রুত সচেতন হতে হবে। যদিও মূলত পরিবারের অপর্যাপ্ত তত্ত্বাবধানের অভাবে শিশুরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হয়, তারপরও পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে সরকারি প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

শিশুর বড় ঘাতক পানিতে ডুবে মৃত্যু। আমরা মনে করি, খবরটি যতটা মর্মস্পর্শী; এর পেছনে মুখ্য কারণ পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক অসচেতনতা। যে পানি মানুষের জীবন বাঁচায়, কখনও কখনও সেই পানি কীভাবে মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর ঘটনা এরই একটি খণ্ডিত দৃষ্টান্ত। আমরা দেখছি, অনেক কিশোর তরুণও ভালোমতো সাঁতার না জেনেই নদী বা সৈকতে নামেনÑ যা প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কয়েক বছর আগে জার্মানির একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাংলাদেশে পানিতে ডুবে মারা যাওয়া প্রতিরোধে একটি সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিয়েছিল। আমরা মনে করি, স্থানীয়-সামাজিক সংগঠনগুলো এবং প্রশাসন যূথবদ্ধভাবে এই প্রয়াস চালাতে পারে। সাঁতার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা জরুরি বলে আমরা মনে করি।

আজকের শিশুরা আগামীর ভবিষ্যৎ। তাদের সুরক্ষার দায় কমবেশি আমাদের সবার। সাঁতার শেখাটা কোনো বিলাসিতা নয়, বরং এটি একটা জীবনরক্ষাকারী দক্ষতা ও কৌশল। এটি শিখলে যেমন নিজেকে বাঁচানো যাবে, তেমনি বাঁচানো যাবে অন্য কাউকেই। এ ব্যাপারে উদাসীন থাকার বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা