× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

তরুণদের নিয়ে স্বপ্ন

মুহম্মদ জাফর ইকবাল

প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৩ ০২:১৪ এএম

আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২৩ ২০:৩৬ পিএম

তরুণদের নিয়ে স্বপ্ন

এই দেশে তরুণদের যে একটি আলাদা অবদান রয়েছে, সেটি মোটেও কোনো আকস্মিক ব্যাপার নয়। ৫২-এর ভাষা আন্দোলন করেছে তরুণেরা, ৬৯-এর গণ-আন্দোলনও করেছিল তরুণেরা। ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসটি ছিল আমাদের দেশের তরুণদের অবিশ্বাস্য আত্মত্যাগ। অসাধারণ বীরত্ব আর বিশাল অর্জনের ইতিহাস। এমনকি অতিসাম্প্রতিক গণজাগরণ মঞ্চও ছিল দেশের জন্য ভালোবাসার একটি পুনর্জাগরণ- তার নেতৃত্বেও ছিল তরুণেরা।

বহুকাল আগে আমি যখন ঢাকা ইউনিভার্সিটির ছাত্র তখন চন্দ্রবিজয়ী মহাকাশচারীরা ঢাকা এসেছিলেন। আমি তাদের দেখার জন্য রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। বহুকাল পরে কিছুদিন আগে আবার আমি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েছিলাম কয়েকজনকে দেখার জন্য। তারা ছিল আমাদের মেয়েদের ফুটবল টিমের খেলোয়াড়রা। হালকা পাতলা বাচ্চা বাচ্চা মেয়েগুলো যে এই এলাকার সব দেশের মেয়েদের নাস্তানাবুদ করে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে, সেটা দেখেও বিশ্বাস হয় না।

কোনো অলিম্পিকে আমরা কোনোদিন কোনো পদক পাইনি। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, অলিম্পিকটি যদি শারীরিক কসরতের না হয়ে মস্তিষ্কের কসরত হয়, তাহলে কিন্তু সেখানে নিয়মিতভাবে আমাদের ছেলেমেয়েরা পদক নিয়ে আসছে। গণিত অলিম্পিয়াড, পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, ইনফরমেটিক্স অলিম্পিয়াড, জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড এরকম সবগুলো আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে আমরা যে শুধু পদক পাই তা নয়, জনসংখ্যার দিক দিয়ে আট-দশ গুণ বড় পাশের দেশ ভারতবর্ষ থেকে আমরা নিয়মিতভাবে ভালো করি। পৃথিবীর সেরা সেরা ইউনিভার্সিটিগুলো এই ছেলেমেয়েদের লুফে নেওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে থাকে! এই ছেলেমেয়েগুলো নিজের দেশকে ভুলে যায় না। নিয়মিতভাবে দেশে ফিরে এসে অন্যদের শেখায়, বই লেখে, ক্যাম্পে ক্লাস নিয়ে পরের প্রজন্ম গড়ে তোলে।

আমরা বহুদিন হলো সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখি না। কিন্তু যখন আমাদের তরুণেরা সিনেমা তৈরি করতে শুরু করেছে, তখন আমরা হঠাৎ করে টিকিট কিনে সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে শুরু করেছি। আমরা সবিস্ময়ে আবিষ্কার করছি এই তরুণ পরিচালক অভিনেতারা নতুন একটি ধারা তৈরি করেছে। এখন যেহেতু ঘরে বসেই আমরা সারা পৃথিবীর সেরা ছবিগুলো দেখতে পাই, তাই আমরা আর পুরোনো ধাঁচের ছবি দেখতে রাজি নই- এই তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতারা আমাদের অত্যন্ত আধুনিক ছবি উপহার দিতে শুরু করেছে। আমরা যে শুধু ছবিগুলো উপভোগ করছি তা নয়, সেগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি পেতে শুরু করেছে। আমাদের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা পুরস্কার পাচ্ছেন, পরিচালকদের নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল টানাটানি করছে। (এর মাঝে একেবারেই আমার ব্যক্তিগত আনন্দের ব্যাপার, আমাদের পরিবারের একজন নুহাশ হুমায়ূনের অসাধারণ কিছু ছবি- যেগুলো তাকে আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান করে তুলেছে।) আজ থেকে কয়েক দশক আগে আমি যখন দেশের বাইরে ছিলাম তখন বাংলাদেশ শব্দটি দারিদ্র্য, ক্ষুধা, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা এসবের সঙ্গে সমার্থক ছিল। এখন যে শুধু আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বেড়েছে তা নয়, পৃথিবীর জ্ঞান-বিজ্ঞান কালচারের জগতেও আমাদের পায়ের চিহ্ন পড়তে শুরু করেছে।

যে জায়গাটিতে আমাদের অবদান আরও বেশি হওয়া উচিত ছিল সেটি হচ্ছে গবেষণা। ভারতবর্ষ হলিউডের একটি সিনেমা তৈরি করতে যে পরিমাণ টাকার প্রয়োজন হয় তার থেকে কম খরচে মঙ্গলগ্রহে মহাকাশযান পাঠাতে পারে। অথচ যখন আমাদের নিজেদের স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানোর প্রয়োজন হয়, আমাদের তার জন্য স্পেস এক্সের ওপর নির্ভর করতে হয়। আমাদের অবশ্যই এই শূন্যতাটুকু পূরণ করতে হবে। আমার ধারণা, এই দেশের তরুণেরাই সেটি করবে। সেজন্য আমি যখন দেখেছি ল্যান্সেটের পৃথিবীর সেরা দশজন বিজ্ঞানীর তালিকায় আমাদের সেঁজুতি সাহার নাম আছে আমি খুব আনন্দিত হয়েছি, কিন্তু অবাক হইনি। আমাদের নতুন প্রজন্মের অনেক বিজ্ঞানী এখন সারা পৃথিবীর অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ল্যাবরেটরিতে কাজ করে যাচ্ছেন। আশা করছি অন্য অনেক ক্ষেত্রের মতো তারা অসাধারণ গবেষক হিসেবেও নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করবেন।

এই দেশে তরুণদের যে একটি আলাদা অবদান রয়েছে, সেটি মোটেও কোনো আকস্মিক ব্যাপার নয়। ৫২-এর ভাষা আন্দোলন করেছে তরুণেরা, ৬৯-এর গণ-আন্দোলনও করেছিল তরুণেরা। ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসটি ছিল আমাদের দেশের তরুণদের অবিশ্বাস্য আত্মত্যাগ। অসাধারণ বীরত্ব আর বিশাল অর্জনের ইতিহাস। এমনকি অতি সাম্প্রতিক গণজাগরণ মঞ্চও ছিল দেশের জন্য ভালোবাসার একটি পুনর্জাগরণ- তার নেতৃত্বেও ছিল তরুণেরা! এই দেশে যতবার একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে দেশের মানুষ প্রতিবারই সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার পেছনে প্রধান কারণ হচ্ছে সেই আন্দোলনের পেছনে ছিল এই দেশের তরুণ সমাজ।

কাজেই দেশের ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখার জন্য আমরা যদি এই দেশের তরুণ প্রজন্মের মুখ চেয়ে থাকি, অবাক হওয়ার কিছু নেই!

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা