প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২৩ ২১:১৪ পিএম
আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ ১৪:৩৭ পিএম
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বাংলাদেশি নোবেল পুরস্কারজয়ী ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদ। তিনি ক্ষুদ্রঋণ ধারণার প্রবর্তক ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা।
মুহাম্মদ ইউনূসের জন্ম ১৯৪০ সালের ২৮ জুন, চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বাথুয়া গ্রামে। বাবা-মায়ের জ্যেষ্ঠ সন্তান মুহাম্মদ ইউনূসের দুই ভাইÑ মুহাম্মদ ইব্রাহিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক; পদার্থবিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান লেখক এবং কনিষ্ঠ ভাই মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর টিভিব্যক্তিত্ব।
মহাজন ফকিরের স্কুলে প্রাথমিক পাঠ গ্রহণের মাধ্যমে ইউনূসের শিক্ষাজীবন শুরু। এরপর লেখাপড়া করেন চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল এবং চট্টগ্রাম কলেজে। ১৯৫৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন। এখান থেকে বিএ এবং এমএ সম্পন্ন করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং পূর্ণবৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভেন্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে অর্থনীতিতে পিএইচডি লাভ করেন। ইউনূস বিদেশে থাকার সময় ১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত মিডল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গড়ে তোলা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় সাংগঠনিক কাজে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে ফিরে এসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭৫ সালে পদোন্নতি পেয়ে অধ্যাপক হন।
কৃষিপ্রধান অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ। দেশের জনসংখ্যার ৬৭ শতাংশ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষি কার্যক্রমের ওপর নির্ভরশীল। ড. ইউনূস ১৯৭৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন গরিবদের মধ্যে স্বল্প ঋণ দেওয়ার জন্য। পথচলা শুরু হয় ৩ কোটি টাকা পুঁজি নিয়ে। যার ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা হুসাইন মুহম্মদ এরশাদ সরকার থেকে প্রাপ্ত। বাকি ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ঋণগ্রহীতাদের। পর্যায়ক্রমে গ্রামীণ ব্যাংক ৫.৩ মিলিয়ন ঋণগ্রহীতার মধ্যে ৫.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ প্রদান করে।
ঋণের টাকা ফেরত নিশ্চিত করার জন্য গ্রামীণ ব্যাংক ‘সংহতি দল’ পদ্ধতি ব্যবহার করে। একটি অনানুষ্ঠানিক ছোট দল একত্রে ঋণের জন্য আবেদন করে এবং এর সদস্যরা একে অন্যের জামিনদার হিসেবে থাকে এবং একে অন্যের উন্নয়নে সাহায্য করে। ব্যাংকের পরিধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য ব্যাংক অন্যান্য পদ্ধতিও প্রয়োগ করে। ক্ষুদ্রঋণের সঙ্গে যোগ হয় গৃহঋণ, মৎস্য খামার ঋণ এবং সেচ ঋণ প্রকল্পসহ অন্যান্য ব্যাংকিং ব্যবস্থা। গরিবের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্য উন্নত বিশ্ব, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশকে গ্রামীণের এই মডেল ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ হয়।
২০০৬ সালে ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক এবং তাঁকে যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ আন্তর্জাতিক সম্মানের অধিকারী হিসেবে তিনি প্রথম বাংলাদেশি এবং তৃতীয় বাঙালি। এ ছাড়াও মুহাম্মদ ইউনূস বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছেন।