প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:১৯ পিএম
আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:১৬ পিএম
ক্ষুদিরাম (১৮৮৯-১৯০৮) বিপ্লবী ও শহীদ। মেদিনীপুর জেলার হাবিবপুর গ্রামে তাঁর জন্ম। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী ও স্বদেশী আন্দোলন ক্ষুদিরামের মতো স্কুলের ছাত্রদেরও প্রভাবিত করে। তিনি পড়াশোনা ছেড়ে সত্যেন বসুর নেতৃত্বে এক গুপ্ত সমিতিতে যোগ দেন। বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ইংল্যান্ডে উৎপাদিত কাপড় পোড়ানো ও ইংল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত লবণ বোঝাই নৌকা ডোবানোর কাজে ক্ষুদিরাম অংশগ্রহণ করেন। ক্ষুদিরাম প্রফুল্ল চাকির সঙ্গে মিলে গাড়িতে ব্রিটিশ বিচারক, ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড আছে ভেবে তাঁকে গুপ্তহত্যা করার জন্য বোমা ছুঁড়েছিলেন। ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড অন্য একটা গাড়িতে বসেছিলেন, যে ঘটনার ফলে দুজন ব্রিটিশ মহিলার মৃত্যু হয়, যাঁরা ছিলেন মিসেস কেনেডি ও তাঁর কন্যা। প্রফুল্ল চাকি গ্রেপ্তারের আগেই আত্মহত্যা করেন। ক্ষুদিরাম গ্রেপ্তার হন। দুজন মহিলাকে হত্যা করার জন্য তার বিচার হয় এবং চূড়ান্তভাবে তার ফাঁসির আদেশ হয়।
সূর্যসেন (১৮৯৪-১৯৩৪) মাস্টারদা নামে অধিক পরিচিত স্বাধিকার আন্দোলনকর্মী। ব্রিটিশ রাজের হাত থেকে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য বাংলাদেশের চট্টগ্রামে সংঘটিত হয়েছিল বেশকিছু আন্দোলন। বিপ্লবী সূর্যসেন ছিলেন এমনই কয়েকটি আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব।
সূর্যসেনের জন্ম ১৮৯৪ সালে চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়া গ্রামে। পুরো নাম সূর্যকুমার সেন। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে বাংলায় শুরু হয় স্বদেশি আন্দোলন, যা ক্রমেই বিপ্লবী আন্দোলনে রূপ নেয়। স্কুলের ছাত্রাবস্থায় স্বদেশি আন্দোলন তাঁর মনে দাগ কাটে।
চট্টগ্রাম শহরের উত্তর দিকে পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাবে তখন রাতভর ইংরেজরা আড্ডা দিত। ক্লাবের চারপাশে থাকত কঠোর নিরাপত্তা। এই ক্লাবে সে সময় লেখা থাকত ‘কুকুর ও ভারতীয় প্রবেশ নিষেধ’। এই লেখা যেন জ্বালা ধরিয়ে দিয়েছিল বিপ্লবীদের প্রাণে। এত নিগ্রহ! এত অপমান! ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর। আজ থেকে ৯০ বছর আগের কথা। এই ইউরোপিয়ান ক্লাবটিতে কয়েকজন বিপ্লবীকে সঙ্গে নিয়ে আক্রমণ করেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। ক্লাব আক্রমণ সফল করে ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। প্রীতিলতা তার সঙ্গে থাকা বাহিনীকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। সে সময় ধরা পড়ার আগেই সঙ্গে রাখা পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহুতি দেন এই অগ্নিকন্যা।
মাস্টারদা সূর্যসেনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী প্রীতিলতা ১৯১১ সালের ৫ মে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা জগৎবন্ধু ওয়াদ্দেদার ছিলেন চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল অফিসের হেড কেরানি আর মা প্রতিভা দেবী গৃহিণী। পরিবারে ছয় ভাই-বোনের মধ্যে প্রীতিলতা ছিলেন দ্বিতীয়। প্রীতিলতাকে মা আদর করে ডাকতেন ‘রানী’। তার ছদ্মনাম ছিল ফুলতার। মৃত্যুর আগের দিন অজ্ঞাতবাস থেকে মাকে লেখা তাঁর শেষ চিঠিতে মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে প্রীতিলতা লিখেছিলেন, ‘দেশের স্বাধীনতাযজ্ঞে অনেক পুত্র প্রাণ দিয়েছে, কিন্তু কোনো কন্যা এখনও প্রাণ দেয়নি।’ তাঁদের অনুপ্রেরণা দিতেই মৃত্যুবরণ করছেন তিনি। তাঁর এই ত্যাগ, সমর্পণ হোক দেশের চলার পথে পাথেয়।