সত্যেন বসু ও জগদীশ চন্দ্র বসু
প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৩ ১৮:২৭ পিএম
আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২৩ ২০:৫৬ পিএম
সত্যেন বসু
বিজ্ঞান দুনিয়ায় বোস-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান এবং হিগস বোসন বা ঈশ্বরকণা প্রসঙ্গ বহুল আলোচিত। বোসন নামটা এসেছে বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন বসুর (সত্যেন্দ্রনাথ বসু) নাম থেকে। হিগস বোসন আবিষ্কারের সঙ্গে সত্যেন বোসের কোনো সম্পর্ক না থাকলেও তাঁর গবেষণার ক্ষেত্র ছিল তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান। তবে তার একটি গবেষণা থেকেই উদ্ভব হয় বোস-আইনস্টাইন পরিসংখ্যানের।
তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞান, এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্রাফি, প্ল্যাঙ্কের কোয়ান্টাম তত্ত্ব নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। আলোকে কণা হিসেবে বিবেচনা করেই কোয়ান্টাম তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্ল্যাঙ্ক সমীকরণের প্রথম অংশে আলোকে কণা হিসাব ধরে প্রতিষ্ঠিত হয়। গোল বাধে সমীকরণের দ্বিতীয় অংশ নিয়ে। দ্বিতীয় অংশ তড়িৎগতিবিদ্যার ওপর ভর করে দাঁড়িয়ে ছিল। এটা চিরায়ত বিজ্ঞানের অংশ। কিন্তু প্ল্যাঙ্ক তার সমীকরণ প্রতিষ্ঠা করতে চিরায়ত বলবিদ্যা থেকে বেরিয়ে পদার্থবিজ্ঞানের সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ও নতুন শাখার জন্ম দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই কোয়ান্টাম তত্ত্বের মূল সমীকরণের একটা অংশ তড়িৎগতিবিদ্যা মেনে চলবে, এটা অস্বস্তিকর। কিন্তু এটা এড়ানোর কোনো পথ ছিল না। আইনস্টাইন চেষ্টা করেছেন, আরও অনেকেই চেষ্টা করেছেন, কিন্তু ত্রুটিটা দূর করা যায়নি। চিন্তিত সত্যেন বসু রীতিমতো গবেষণা করেন এটা নিয়ে। সমাধানও করে ফেলেন তিনি।
বিজ্ঞানী ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের বিকিরণ তত্ত্ব নিয়ে লেখেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রবন্ধ। কিন্তু তিনি এই গবেষণা প্রবন্ধ কোথায় প্রকাশ করবেন, তা নিয়ে ভাবনায় পড়লেন। আইনস্টাইন তখন পৃথিবীখ্যাত বিজ্ঞানী। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে চিঠি পাঠালেন খোদ আইনস্টাইনকে। সঙ্গে পাঠালেন তাঁর গবেষণাকর্ম। অনুরোধ করলেন, তাঁর কাজ যদি প্রকাশযোগ্য হয় তাহলে যেন জার্মান ভাষায় অনুবাদ করে প্রকাশ করা হয়। আইনস্টাইন তাঁর চিঠির উত্তর দিয়েছিলেন। সত্যেন বসুর কাজ জার্মান ভাষায় অনুবাদ করে প্রকাশ করা হয়েছিল Zeitschrift für Physik নামক জার্মানির খ্যাতনামা জার্নালে। এর পরপরই বিশ্বদরবারে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন সত্যেন বসু। তিনিই বাংলায় বিজ্ঞানচর্চাকে উচ্চাসনে বসিয়েছিলেন।
জগদীশ চন্দ্র বসু
জগদীশ চন্দ্র বসু (১৮৫৮-১৯৩৭), বাংলাদেশ তথা ভারতবর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী। পদার্থবিজ্ঞান এবং উদ্ভিদবিদ্যায় অসামান্য অবদান রেখে নিজের নাম বাঙালির ইতিহাসে তো বটেই, বিশ্বের বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসেও স্বর্ণাক্ষরে লিখে গিয়েছেন।
তিনিই প্রথম মাইক্রোওয়েভ প্রযুক্তির ওপর সফল গবেষণা করেন, যার মাধ্যমে আবিষ্কৃত হয় রেডিও। গাছেদেরও যে প্রাণ আছে এই বক্তব্য প্রমাণে তিনি আবিষ্কার করেন ক্রেসকোগ্রাফ যন্ত্র, যা দিয়ে গাছের
বৃদ্ধি নিখুঁতভাবে পরিমাপ করা যায়। আর এর মাধ্যমে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন উদ্ভিদের জীবনচক্র।
জগদীশ চন্দ্র বসুর জন্ম ১৮৫৮ সালের ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশের ময়মনসিংহে। তাঁর পরিবারের আদি বাসস্থান ছিল বিক্রমপুরের রাঢ়িখালে। শিক্ষাজীবন শুরু করেছিলেন ফরিদপুরের একটি স্কুলে। ১১ বছর বয়সে কলকাতা যান। এবং কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ১৮৭৫ সালে এন্ট্রাস পাস করেন।
বিজ্ঞানের স্নাতক হন তিনি ১৮৭৯ সালে এবং এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য যান ইংল্যান্ডে। ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে বিএ পাস করেন। ১৮৮৪ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ইংল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন।
১৮৯৪ সালে বৈদ্যুতিক তরঙ্গের ওপর গবেষণার কাজ শুরু করেন তিনি। ১৮৯৬ সালে জগদীশ চন্দ্র বসু অদৃশ্য আলোক সম্পর্কে লিভারপুলের ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশনে বক্তৃতা দেন। ওই সময় নিজের নামে বেতার যন্ত্র পেটেন্ট করলে তিনিই হতেন এর সর্বপ্রথম আবিষ্কারক।
জগদীশ চন্দ্র বসু নিজের নামে রেডিওর পেটেন্ট কেন করেননি এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন ১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথকে লেখা একটি চিঠিতে। সেখানে তিনি লিখেন-‘আমি যদি একবার টাকার মোহে পড়ে যাই তাহলে আর কোনদিন আর বের হতে পারব না।’