প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২০ মে ২০২৪ ১৮:৩৮ পিএম
চার বান্ধবী (বাম থেকে) লিপি, টুটু, সীমা ও সানী। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে হারানো তিন বান্ধবীর খোঁজ করছিলেন লিপিকা ইকবাল নামক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক বাংলাদেশি। তারা চারজনই ছিলেন রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থী। এক পর্যায়ে সবার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সম্প্রতি বন্ধুদের খোঁজে ফেসবুক গ্রুপ ‘বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র’ এ চার বান্ধবীর একটি ছবি পোস্ট করেন লিপিকা।
‘বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র’ ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করার পরপরই পোস্টটি ছড়িয়ে পড়ে এবং তিন জনের দুজনকে উক্ত পোস্টের মন্তব্য কলামেই খুঁজে পান তিনি। পরে আরেক বান্ধবীর সাথেও যোগাযোগ হয়।
কলেজ জীবনের স্মৃতিচারণ করে লিপি বলেন, 'আমাদের অনেক বন্ধুবান্ধব ছিল ঠিকই, কিন্তু আমাদের চারজনের বন্ধুত্বটা ছিল অন্যরকম। বোটানিক্যাল গার্ডেনে পিকনিকে গিয়ে ছবি তোলা থেকে শুরু করে, একসঙ্গে আড্ডা দেওয়া, খাওয়া-দাওয়া, ঘুরে বেড়ানো। ক্লাসেও আমরা চারজন একসঙ্গে বসতাম।'
তিনি বলেন, ‘১৯৯২ সালে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর উত্তরার দিকে চলে আসি। তখন যোগাযোগ ব্যবস্থা তেমন ভালো না থাকায়, ঢাকায় কম আসা হতো। বান্ধবীদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়াও হতো না। মাস্টার্স পরীক্ষার সময়ই শেষ চোখের দেখা।’
পড়াশোনা, সংসার, যৌথ পরিবারের দায়িত্ব, সন্তানদের দেখভাল নিয়ে একসময় ব্যস্ত হয়ে যান লিপি। বান্ধবীদের সঙ্গে আর যোগাযোগ রাখা হয়ে ওঠেনি। এরই মধ্যে ২০০৯ সালে পরিবারসহ পাড়ি জমালেন আমেরিকা।
ওই ফেসবুক পোস্টে লিপিকা লেখেন, ‘গত ৩০ বছর ধরেই খুঁজে চলেছি আমার এই তিন বান্ধবীকে। ছবির সবচেয়ে বামে বসে আছি আমি (লিপি)। আমার পাশে টুটু, তার পরে সীমা, আর সবার শেষে সানী। আমরা ১৯৯০ সালে তেজগাঁও কলেজে বিএ পাস কোর্সে ভর্তি হই। ওরা সবাই মগবাজারে থাকতো। আমি থাকতাম শেওড়াপাড়া। যতদুর জানি-বিয়ের পর সানী এলিফ্যান্ট রোডে ওর শ্বশুর বাড়িতে থাকত। আর কোনো সূত্র আমার হাতে নেই। দেশ থেকে বহুদূরে নিউইয়র্কে থাকি। ইচ্ছে হলেও সন্ধান নেওয়ার উপায় নেই ভেবে ভেবে যখন বিষন্ন ভগ্নহৃদয় হয়ে গিয়েছিলাম, আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম- তখনই এই পেজের কথা মনে হলো। আমার বন্ধবীদের কেউ, তাদের পরিচিতদের কেউ আছেন এখানে? আমাকে দিতে পারেন এদের কারো একজনের সন্ধান?’
পোস্ট দেওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যেই টেক্সট পান লিপি। টুটু তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ৩০ মিনিটের মধ্যে বান্ধবীর সঙ্গে কথাও হয় তার।
‘যাকে আমি ৩০ বছর ধরে খুঁজছি। তার সঙ্গে ১০ মিনিটের মধ্যে যোগাযোগ হয়েছে। আমি তো অবাক!’ লিপিকা বলেন।
টুটুর সঙ্গে কথা বলার কয়েক ঘণ্টা পর আরেকটি টেক্সট পান লিপি। তাতে লেখা ছিল, ‘আন্টি, আমার আম্মু আপনার সাথে কথা বলার জন্য বসে আছে।’
‘আমার আরেক বান্ধবী সানীর মেয়ে আমাকে মেসেজটি পাঠায়। তখন আমেরিকাতে দুপুর, বাংলাদেশে প্রায় মাঝরাত। সে সারারাত ঘুমায়নি আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য,’ লিপিকা বলেন।
সানী, টুটুকে পেলেও আরেক বান্ধবী সীমার সঙ্গে তখনো যোগাযোগ হয়নি। এক পর্যায়ে সীমার সঙ্গেও যোগাযোগ হয় লিপির। আমি একটা মেসেজ পাই। ‘আন্টি, আম্মু আপনার সাথে কথা বলবেন’ সীমার ছেলে আমাকে মেসেজটি দিয়েছিল।
একে একে চারজনের সঙ্গে কথা হলেও একসঙ্গে সবার কথা বলা হয়ে ওঠেনি তখনো। ঠিক করলেন, চার বান্ধবী মিলে একসঙ্গে ভিডিওকলে দেখা করবেন। অবশেষে ৩০ বছর পর দেখা হলো চার বান্ধবীর।
‘একসঙ্গে সবার দেখা হলেও এখনও টাচ করতে পারি নাই কাউকে। জানুয়ারিতে আমি দেশে আসবো। তখন দেখা হবে আমাদের।’ হাস্যজ্বল কণ্ঠে লিপিকা বলেন।
লিপিকা ধন্যবাদ জানিয়েছেন ‘বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র’ গ্রুপকে এবং গ্রপের অন্যতম সদস্য গিরিধর দেকে। এছাড়া তার বোনের ছেলে তাইফুর রহমানকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন কারণ ওর মাধ্যমেই লিপিকা গিরিধরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছেন। ‘আমি কৃতজ্ঞ সব মানুষের প্রতি যারা আমার ওই পোস্টে কমেন্ট করেছেন, শেয়ার করেছেন, শুভকামনা জানিয়েছেন।’ লিপি বলেন।
গিরিধর দে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘খুব ভালো লাগছে। হারানো বান্ধবীদের অল্প সময়ে খুঁজে পেয়ে উনি খুব আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিলেন। কিছুসময় আগেও যেটি উনার কাছে স্বপ্নের মত ছিল তা মুহূর্তেই বাস্তব হওয়ায় খুব খুশি হয়েছেন তিনি, তাঁর পরিবার, বন্ধু, বান্ধবীরাসহ সারা দেশে এই ঘটনার সাক্ষী হওয়া লাখো মানুষ।’