প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৪ ১৮:২৮ পিএম
আপডেট : ০৬ মে ২০২৪ ১৯:১৯ পিএম
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ। ছবি : সংগৃহীত
মানবতার ফেরিওয়ালা খ্যাতি পাওয়া ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দার মাদকাসক্ত ছিলেন। নিয়মিত ইয়াবা সেবন করতেন। রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদে নিজেই ইয়াবা সেবনের কথা স্বীকার করেছেন। যখন টর্চার সেলে আশ্রমের শিশু ও বৃদ্ধদের পেটাতেন, তার আগ মুহূর্তে ইয়াবা সেবন করে নিতেন। তার টর্চার সেলে অত্যাচারের মাত্রা ছিল অমানবিক।
সোমবার (৬ মে) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ এসব কথা জানিয়েছেন।
এদিকে মিল্টন সমাদ্দারের আশ্রমে থাকা বৃদ্ধ, অনাথ শিশু ও মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষদের থাকা, খাওয়া ও চিকিৎসাসেবার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে। তারা নিজ অর্থায়নে আশ্রমে দায়িত্ব পালন করবে।
মিল্টন সমাদ্দারের বিষয়ে হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘মিল্টন সমাদ্দার মাদকসেবী এবং তিনি ইয়াবা সেবন করেন। নিজেই ইয়াবা সেবনের কথা স্বীকার করেছেন। তার টর্চার সেলে অত্যাচারের মাত্রা ছিল অমানবিক। একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি ছাড়া শিশু ও বৃদ্ধদের এভাবে কেউ পেটাতে পারে না। তার পেটানোর চিত্র এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।’
ডিবিপ্রধান বলেন, ‘তথাকথিত মানবতার ফেরিওয়ালা সেজে বিভিন্ন মানুষকে প্রতারিত করে বৃদ্ধ, অনাথ শিশু ও মানসিক ভারসাম্যহীনদের পুঁজি করে বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা কামাচ্ছিলেন মিল্টন। এই টাকা মিল্টনের অ্যাকাউন্টে জমা হলেও অসহায় মানুষের জন্য তিনি খরচ করেননি। তিনি হাসপাতালে না নিয়ে নিজেই চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। আমরা মিল্টনকে নিয়ে আরও লোমহর্ষক ঘটনার তথ্য পেয়েছি। তদন্ত চলছে, তদন্ত শেষে জানানো হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘চিকিৎসকের স্বাক্ষর ও সিল নকল করে জাল মৃত্যুসনদ দেওয়ার বিষয়টি ধীরে ধীরে স্বীকার করা শুরু করেছেন মিল্টন। তার বিরুদ্ধে আরও যেসব অভিযোগ উঠেছে সবগুলো অভিযোগ তদন্ত করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মিল্টনের আশ্রমে থাকা বৃদ্ধ, অনাথ শিশু ও মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি যারা আছে, তাদের আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশন থেকে সব ধরনের সেবা দেওয়া হবে। আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশনের কর্ণধার ডিবি কার্যালয়ে এসেছিলেন। তাকে অনুরোধ করা হয়েছে মিল্টনের আশ্রমে থাকা ব্যক্তিদের খাওয়া-দাওয়া ও চিকিৎসাসেবা দিতে। এ ছাড়া সার্বক্ষণিক একজন চিকিৎসক থাকবেন যিনি চিকিৎসাসেবা দেবেন। এতে যা খরচ হবে সেই খরচ আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশন থেকে ব্যয় করা হবে। মিল্টন সমাদ্দারের ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারে’ সেবা ও চিকিৎসা দেওয়া হবে নাকি আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশনে নিয়ে গিয়ে সেবা দেওয়া হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবিপ্রধান বলেন, ‘মিল্টনের আশ্রমেই সেবা ও চিকিৎসা দেওয়া হবে।’
মানবতার ফেরিওয়ালার মুখোশের আড়ালে প্রতারণার অভিযোগ ওঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পরিচিত মুখ মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে। অসহায় মানুষের নামে ওঠানো টাকা আত্মসাৎ এবং তাদের কিডনিসহ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চুরির মতো অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন মিল্টন। এ ছাড়া জাল ডেথ সার্টিফিকেট তৈরি এবং জমি দখলের মতো গুরুতর সব অভিযোগ রয়েছে। অসহায়-দুস্থ মানুষের সেবার কথা বলে গড়ে তোলা ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ নামের একটি বৃদ্ধাশ্রম ঘিরে তার অপকর্মের ফিরিস্তি নেট দুনিয়ায় ভাইরাল।
এ বিষয়ে তদন্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এসব অভিযোগে ১ মে রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি মিরপুর বিভাগ। পরে তার বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় তিনটি মামলা করা হয়। বর্তমানে রিমান্ডে রয়েছেন তিনি।