পুড়ছে সুন্দরবন

তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে পূর্ব সুন্দরবনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। গত রাত পর্যন্ত আগুন জ্বলছে। ওই এলাকায় পানি সহজলভ্য না হওয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিটসহ বনরক্ষীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।

চাঁদপাই রেঞ্জের আমরবুনিয়া ও গুলশাখালীর মাঝামাঝি এলাকায় এ আগুনের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) আনিসুর রহমান। গতকাল শনিবার দুপুরের দিকে আগুন লাগার খবর পাওয়া গেলেও ঠিক কখন আগুন লেগেছে তা জানা যায়নি। 

বনের ভিতর মধু সংগ্রহকারী-মৌওয়ালের ফেলে দেওয়া আগুনের ভিড়া থেকে এ আগুনের সূত্রপাত হতে পারে বলে জানান তিনি।

আনিসুর রহমান জানান, ‘এরই মধ্যে বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিটসহ বন বিভাগের চারটি ফাঁড়ির বনরক্ষীরা মিলে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেছে। এ ছাড়া পূর্ব সুন্দরবনের বন কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণে তদারকির কাজ করছেন।’

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আবু তাহের মিয়া জানান, ‘আমুরবুনিয়া ফাঁড়ির কাছেই আগুন লেগেছে। বেশ বড় এলাকা। অন্তত দুই কিলোমিটারজুড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। সবাই মিলে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। যেভাবে আগুন ছড়িয়েছে সেটি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিনই হবে।’

বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক মো. সাইদুল আলম চৌধুরী জানান, ‘আগুনের খবর পেয়ে এরই মধ্যে মোরেলগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেছে। আগুনের এ ঘটনায় বনের পশু এবং কী পরিমাণ বনাঞ্চল পুড়ে গেছে, তা আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না।’ এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি করা হবে বলেও জানান তিনি।

বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী গত রাত ৮টার সময় প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য সব রকম চেষ্টা শুরু হয়েছে। বন বিভাগের কর্মী ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সঙ্গে স্থানীয় জনগণকেও সম্পৃক্ত করা হয়েছে। আগুন যাতে ছড়িয়ে না পড়ে তার জন্য প্রথম কাজ হিসেবে ওই এলাকাকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে সমস্যা হচ্ছে ওই এলাকায় পানি সহজলভ্য নয়, তাই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। 

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার (ডিএফও) কাজী নুরুল করিম রাত সাড়ে ৯টায় প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, প্রচণ্ড তাপদাহের মধ্যে দুর্গম এলাকায় আগুন লাগার খবর পেয়ে দমকল বাহিনী ছুটে গেছে। কিন্তু কাছাকাছি কোথাও পানি পাওয়া যায়নি। অনেক দূরে ভোলা নদী থেকে পানি এনে আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এরই মধ্যে সন্ধ্যা নেমে যায়। তাই আগুনের কাছে আর যাওয়া সম্ভব হয়নি। আজ রবিবার সকালে আমরবুনিয়া এলাকার ভোলা নদী থেকে পানির সংযোগ স্থাপন করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হবে। 

তিনি জানান, আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানের জন্য পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) রানা দেবকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেনÑ চাঁদপাই রেঞ্জের জিউধার স্টেশন অফিসার ওবায়দুর রহমান এবং ধানসাগর স্টেশন অফিসার রবিউল ইসলাম। আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।