প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৪ ১৬:৫৭ পিএম
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান। ফাইল ফটো
স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ (সোয়াস) ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডনের পক্ষ থেকে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আতিউর রহমানকে সম্মানসূচক ডক্টরেট দেওয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক অ্যাডাম হাবিবের ৩০ এপ্রিল লেখা এক আনুষ্ঠানিক পত্রে এই সম্মাননার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ডিগ্রিটি দেওয়া হবে। শনিবার (৪ মে) উন্নয়ন সমন্বয়ের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়।
সোয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ের চিঠির বরাত দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন সমন্বয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দারিদ্র্য নিরসনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখায় চলতি বছর ডক্টর অফ সায়েন্স (ইকোনমিক্স) সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে ড. আতিউর রহমানকে। তা ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের দশম গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ড. আতিউর রহমান ‘দারিদ্র্যবান্ধব সরকারি ব্যয় নীতি, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং উদ্ভাবনীমূলক সামাজিক কার্যক্রমে’র ক্ষেত্রে যে নেতৃত্বসূচক ভূমিকা রেখেছেন সেগুলোও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় নিয়েছে।
সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ সোয়াস ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডনের বার্ষিক গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে ড. আতিইর রহমান এই সম্মানসূচক ডিগ্রি গ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে। ঐ অনুষ্ঠানে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করা তরুণ শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ ও বিশ্বের উন্নয়নে ড. আতিউর রহমানের অনন্য অবদানের কারণে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আশা করছে।
সম্মাননা প্রাপ্তি বিষয়ে ড. আতিউর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই সম্মাননা আমার কাছে বিরাট অনুপ্রেরণার বিষয়। অনেক বিচার বিশ্লেষণ করে এমন সম্মাননা দেওয়া হয়। প্রান্তজনের ভাগ্যেন্নয়নে আমার সামান্য গবেষণা ও কর্মের কথা বিশ্ব পরিমন্ডলে পৌঁছে গেছে জেনে নিশ্চয় ভালো লাগছে। বাংলাদেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস, উন্নয়ন সমন্বয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই সম্মানের সমান ভাগিদার। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি বলেই আমি আমার মনের কথা, প্রাণের কথা প্রকাশ ও খানিকটা বাস্তবায়নের সুযোগ পেয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানাই আমাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য কাজের সুযোগ করে দেবার জন্য। যেকোনো পুরস্কারই মানুষকে উৎসাহ যোগায়। আরও বেশি করে কাজ করার অনুপ্রেরণা দেয়। এটি যেহেতু বিশ্ব মাপের একটি স্বীকৃতি তাই আমাকে আরও বেশি সামাজিক দায়বদ্ধ গবেষনণা ও কর্মে নিবেদিত থাকার অনুপ্ররেণা যোগাবে।
সম্মাননাটি উৎসর্গ করা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি এই পুরস্কার আমার স্ত্রী অধ্যাপক সাহানা ও তিন কন্যা, পরিশ্রমী অদম্য তরুণ উদ্যোক্তাদের এবং যিনি বাংলাদেশটি সৃষ্টি না করলে এসব কাজের কোনো সুযোগই মিলতো না সেই জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করছি।
উল্লেখ্য, ড. আতিউর রহমান এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন প্রাক্তনী এবং ইতোমধ্যে তিনি অসংখ্য আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তিনি ম্যানিলা-ভিত্তিক গুসি ফাউন্ডেশন থেকে গুসি আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার, এশিয়াটিক সোসাইটি কোলকাতা থেকে ইন্দিরাগান্ধী স্বর্ণস্মারক, ফান্যান্সিয়াল টাইমসের সহযোগি দ্যা ব্যাংকার এবং ইউরোমানির সহযোগি দ্যা ইমার্জিং মার্কেটস থেকে এশিয়া ও প্যসিফিক অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ গভর্নর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। দেশীয় পর্যায়ে তিনি অন্যান্যের মধ্যে বাংলা একাডেমি থেকে সাহিত্য এবং রবীন্দ্র পুরস্কার, রবীন্দ্র একাডেমি থেকে রবীন্দ্র সম্মাননা এবং শেলটেক ফউন্ডেশন থেকে শেলটেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তাছাড়া সম্প্রতি ঢাকা আহছানিয়া মিশন ঘোষণ করেছে যে এ বছর ড. আতিউর রহমানকে ঐতিহ্যবাহী খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লা স্বর্ণপদকে ভূষিত করা হবে।
সোয়াস বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালে সোয়াস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ রকম সম্মানসূচক ডক্টরেট পেয়েছেন চারজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব। তারা হলেন- ভারতের প্রখ্যাত চিত্রনাট্যকার জাভেদ আখতার (ডক্টর অফ লিটারেচার), লন্ডনভিত্তিক ক্যুলিনারি আর্টিস্ট আসমা খান (ডক্টর অফ সায়েন্স, সোশ্যাল সায়েন্স), ইউকে-ভিত্তিক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কেভিন ফেনটন (ডক্টর অফ লিটারেচার), এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বৌদ্ধ ধর্মতাত্ত্বিক জংসার জাময়াং খেন্তসে রিনপোশে (ফেলো)।