× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে কঠোর যুক্তরাষ্ট্র

আমিনুল ইসলাম মিঠু

প্রকাশ : ০১ মে ২০২৪ ০৮:৫২ এএম

আপডেট : ০১ মে ২০২৪ ০৮:৫৪ এএম

বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে কঠোর যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশকে মার্কিন বিনিয়োগ পেতে হলে শ্রম-সংক্রান্ত ১১টি শর্ত মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জো বাইডেন প্রশাসন। সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ লেবার অ্যাকশন প্ল্যান’-এর অধীনে দেশটি এ শর্তগুলোর উল্লেখ করেছে। এদিকে এসব শর্ত দেওয়ার পর এ ব্যাপারে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম চৌধুরী। এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে গত সপ্তাহে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে বাড়াবাড়ি করছে যুক্তরাষ্ট্র।’ 

সাবেক কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নিজেদের প্রভাব বা গুরুত্ব বোঝাতে এবং বিনিয়োগের ব্যাপ্তি দেখিয়ে বাংলাদেশকে নিজেদের বলয়ে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র এসব শর্ত দিয়েছে। কারণ তারা জানে, বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য এখন আরও অনেক দেশ এগিয়ে আসছে। 

প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল ঢাকায় সফররত যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের কাছে ‘বাংলাদেশ লেবার অ্যাকশন প্ল্যান’ হস্তান্তর করেন। সভায় বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন তপন কান্তি ঘোষ এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ছিলেন ইউএসটিআরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ।

এর আগে গত সেপ্টেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম এগ্রিমেন্টের’ (টিকফা) সপ্তম পর্যায়ের পর্যালোচনা সভায়ও এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে দূর করতে একটি বার্ষিক ফোরাম গঠনের লক্ষ্যে ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র টিকফা চুক্তি স্বাক্ষর করে।

উল্লেখযোগ্য শর্তসমূহ 

যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত অনুযায়ী প্রথমত, ইউনিয়ন সংগঠক, শ্রমিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও হয়রানির ঘটনা প্রতিরোধ ও আইনগত প্রতিবাদ কার্যক্রম প্রতিরোধ ও আইন অমান্যকারীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে বাংলাদেশকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া বাংলাদেশকে শ্রমিক কর্মীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ প্রত্যাহার বা সমাধা করতে হবে এবং গৃহীত বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ শ্রম আইন প্রদত্ত শ্রমিকদের অধিকারপরিপন্থি যেকোনো আচরণের জন্য কারখানার মালিক, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও ব্যক্তিকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। নিয়োগকর্তাদের বিরুদ্ধে অন্যায্য শ্রমের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের তদন্ত ও সমাধান করতে হবে। ইউনিয়নবিরোধী বৈষম্য, প্রতিশোধ এবং অন্যান্য অন্যায্য শ্রমের ক্ষেত্রে শ্রমিক ও ট্রেড ইউনিয়নগুলোর পক্ষে ন্যায়বিচারের সুযোগ বাড়াতে হবে।

তৃতীয়ত, বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সঙ্গে পরামর্শ করে শ্রম আইন সংশোধন করতে হবে। যাতে সংগঠনের স্বাধীনতা এবং যৌথ দরকষাকষির বিষয়সমূহ আন্তর্জাতিক শ্রম মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। তাছাড়া ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় শ্রমিকের শতকরা হার বর্তমান ২০ থেকে কমিয়ে আনতে হবে। যাতে আন্তর্জাতিক শ্রম মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।

ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের ক্ষেত্রে একটি ইউনিয়নের সকল সদস্যের অংশগ্রহণে দুটি সাধারণ সভা করার এবং নিবন্ধনের জন্য গঠনতন্ত্র পেশ করার বাধ্যবাধকতাও প্রত্যাহার করা উচিত। ধর্মঘটের অধিকারের ওপর অত্যধিক বিধিনিষেধ ও অবৈধ ধর্মঘটের জন্য কঠোর শাস্তির অপসারণও চায় যুক্তরাষ্ট্র।

চতুর্থত, ইউএসটিআর সংশোধিত বাংলাদেশ শ্রম আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না তা নিশ্চিত করতে ‘বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা’ সংশোধন করতে হবে। 

শর্ত মানলেও সন্তুষ্ট হয় না যুক্তরাষ্ট্র

উল্লেখ্য, টিকফার সপ্তম পর্যায়ের সভায় বাংলাদেশ আমদানি করা পণ্য, বিশেষ করে আমদানি করা তুলা থেকে তৈরি পোশাকের শুল্কমুক্ত বাজার প্রবেশাধিকার দাবি করে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইডিএএফ) কাছে বিনিয়োগ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধ পণ্য নিবন্ধনের প্রক্রিয়া সহজ করারও দাবি জানায়।

এর আগে ২০১৩ সালে দুর্বল শ্রম অধিকার ও কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তার কারণে বাংলাদেশের জন্য জিএসপি স্থগিত করার সময় তৎকালীন ওবামা প্রশাসন ১৬ দফা ‘বাংলাদেশ অ্যাকশন প্ল্যান’ দিয়েছিল। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ১৬ দফা শর্ত মেনে অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিলেও এখনও জিএসপি পুনর্বহাল করা হয়নি।

এদিকে মার্কিন শর্ত নিয়ে আইনমন্ত্রী এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেশ কয়েক দফায় সরকারের বক্তব্য গণমাধ্যমে তুলে ধরেন। গত সপ্তাহে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র টালবাহানা করছে। আমরা তাদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করি; কিন্তু পারি না। আমাদের ভাগ্য খারাপ।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে শ্রম আইনের আরও উন্নতি চায় যুক্তরাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সম্মেলনেও এই শ্রম আইন নিয়ে কথা হয়েছে। এর আগেও আমরা আইনটি পাস করার পর্যায়ে ছিলাম; কিন্তু আইএলও থেকে অনুরোধ করা হলো, এটিকে আরও সমৃদ্ধ ও যুগোপযোগী করতে। সেই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে গত সংসদে আমরা আইনটি পাস করিনি।’

বাজেট অধিবেশনে পাস হতে পারে আইন

গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আশা করছি জাতীয় সংসদের আসন্ন বাজেট অধিবেশনে সংশোধিত শ্রম আইন পাস হবে। আইন পাস হওয়ার আগ পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না, কলকারখানায় শ্রমিক সংগঠন করার ক্ষেত্রে মোট শ্রমিকের কত শতাংশের সম্মতি থাকতে হবে। পুরো প্রক্রিয়াটা সংশ্লিষ্ট মহলের ওপর নির্ভর করছে।’

গত বছরের ২ নভেম্বর ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) বিল-২০২৩’ পাস হয় একাদশ জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশনে। এরপর পাঠানো হয় রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য। কিন্তু ‘মুদ্রণ’ ভুল থাকায় সেটি পুনর্বিবেচনার জন্য সংসদে ফেরত পাঠান রাষ্ট্রপতি। শ্রম আইনের পাশাপাশি সংশোধনী আনা হয়েছে অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ আইনেও। এর আগেও বিভিন্ন সময় বাণিজ্য সচিব এসব পরিবর্তনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশাগুলো পূরণ করার কথা তুলে ধরেছেন। 

প্রতিমন্ত্রী নজরুল বলেন, ‘আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা-আইএলওর অনুরোধেই যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে শ্রম আইন সংশোধন করে পাসের উদ্যোগ নেওয়া। না হলে আরও আগেই আইনটি পাস করার ইচ্ছা ছিল সরকারের।’ তিনি দাবি করেন, ‘দেশের শ্রম খাতে এখন এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, তাতে শ্রমিক-মালিক-সরকারÑ সবার স্বার্থই রক্ষা পাচ্ছে।’

আইন লঙ্ঘনে মালিকদের জরিমানা বাড়বে

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর তুওমো পোতিয়েনেন। বৈঠকের পর আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘কলকারখানায় শ্রমিক সংগঠন করার ক্ষেত্রে মোট শ্রমিকের ১৫ শতাংশের সম্মতি থাকার বিষয়ে আইএলও সন্তোষ প্রকাশ করেছে। তবে বাংলাদেশ পর্যায়ক্রমে ১০ শতাংশে যাবে। তাদের বোঝানো হয়েছে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শ্রমিকদের অধিকার ও বিশ্ব মহলের পরামর্শগুলো সাংঘর্ষিক নয়। এরপরও যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শ্রম খাতের বিভিন্ন বিষয় বাস্তবায়ন করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট আইন লঙ্ঘনে মালিকদের আর্থিক জরিমানা ২০ হাজার বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করা হবে।’ 

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘শ্রম আইন সংশোধন বিল পাস না হওয়া পর্যন্ত অংশীজনদের কিংবা যেসব আন্তর্জাতিক সংস্থা শ্রমিক অধিকারের কথা বলে, তাদের কথা শোনা হবে। কারণ, আমরা দেখব, আমাদের দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ অনুযায়ী যে শ্রমিক অধিকার রক্ষা করা হয়, তার সঙ্গে অংশীজনদের পরামর্শের কোনো পার্থক্য আছে কি না।’

আনিসুল হক বলেন, ‘বিদেশিদের একটি পরামর্শ হচ্ছে থ্রেশহোল্ড (ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে শ্রমিকদের সম্মতির হার) কমিয়ে আনা। আমরা আগে এই থ্রেশহোল্ড ২০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছিলাম। কিন্তু সেটা যে কারখানায় তিন হাজার বা তার চেয়ে বেশি শ্রমিক আছে, তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হওয়ার কথা। কিন্তু এখন সব কারখানার জন্য এই ১৫ শতাংশ থ্রেশহোল্ড রাখা হয়েছে। অর্থাৎ ১৫ শতাংশ শ্রমিক রাজি হলেই তারা একটি ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করতে পারবে। আইএলওর এই পরামর্শ মেনে নিয়ে তা সংশোধিত শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) সারা বিশ্বের শ্রমিকদের একটি সংগঠন।’

তিনি বলেন, ‘আইনটি সংশোধনের প্রাথমিক পর্যায়ে সারা বিশ্বের শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠার বেস্ট প্র্যাকটিসগুলো অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এই চেষ্টায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার একটা অবদান আছে। শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা ও সুরক্ষার জন্য যার যার কথা শোনার, সেটা আমরা শুনব। আইনটিকে পূর্ণাঙ্গ করে তুলতে আগামী ১২ মে একটি সভা করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার পরিচালনা পর্ষদে বাংলাদেশের শ্রমিক অধিকার নিয়ে কিছু দেশ ২০১৯ সালে নালিশ করে। তারপর আমরা বহুবার আইএলওর পরিচালনা পর্ষদকে বলেছি, শ্রমিকদের অধিকার আমাদের দেশে কেবল রক্ষাই হয়নি, আরও সুদৃঢ় হয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে অহেতুক যে নালিশ করা হয়েছে, সেটার অবসান হওয়া উচিত।’

বিশ্লেষকরা যা বলছেন

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদেশি বিনিয়োগ আনার জন্য শ্রমের মূল্য, সুযোগ-সুবিধা, আইনি জটিলতার বিষয়গুলো দেখা হয়ে থাকে। সেগুলো নিশ্চিত থাকলে যেকোনো দেশ বা তাদের প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগে এগিয়ে আসে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে শর্তগুলো দিয়েছে তা নিজেদের প্রভাব খাটাতে বা গুরুত্ব বোঝাতে। তাই এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের শর্তকে গুরুত্ব দেওয়ার চেয়ে দেশের শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন তারা। তারা এও বলছেন, শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে আরও বড় ধরনের বিনিয়োগকারী পাওয়া সম্ভব। 

এদিকে কূটনৈতিক সূত্র বলছে, বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে শুরু থেকেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বাইডেন প্রশাসন। গত বছর ১৬ নভেম্বর প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নতুন শ্রমিক অধিকার নীতি ঘোষণা করে। বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিষয়েও আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। তবে দেশটি চায়, যেখানেই বিনিয়োগ হোক না কেন, সেখানকার শ্রম আইন যেন নিজেদের ঘোষিত শ্রমিক অধিকার নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয়। 

এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমাদের শ্রম আইন বা শ্রমিকদের বিষয়াদির ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকা উচিত। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো এসব থেকে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে। এগুলোকে এখন এত বেশি গুরুত্ব দেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ তারা এ ‍মুহূর্তে ফিলিস্তিনে বড় ধরনের গণহত্যার সঙ্গে জড়িত। আমরা অনেক কিছু করে যাচ্ছি। কিন্তু সেগুলোর প্রচার নেই। আমরা দেখছি তারা অনেক কিছুই বলে। বিশেষ করে বাক স্বাধীনতার বিষয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে তাদের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও শ্রমিকদের অবস্থা যদি প্রচারে আসত, তাহলে তাদের এসব আলোচনা বন্ধ হয়ে যেত।’

তিনি বলেন, ‘জিএসপি সুবিধা না থাকার পরও আমাদের বাণিজ্য কমেনি। তাই এটা নিয়ে চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। কারণ আমরা মুনাফা মার্জিনে বেশি ছিলাম। পোশাক খাত যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আগে যত নির্ভরশীল ছিল, এখন ততটা নেই। এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নে নতুন বাজার তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ১১টি শর্ত দিয়েছে। কারণ তারা ভালো করেই জানে, নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তারা অনেক দেশের সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে পারবে না। এজন্য তারা এসব শর্ত দিয়ে প্রভাব খাটানোর ও চমক লাগানোর চেষ্টা করছে। তারা জানে, নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্র বাংলাদেশের জন্য তৈরি হচ্ছে। পৃথিবীতে তারাই আর একমাত্র বিনিয়োগকারী নয়; তা ছাড়া তাদের বিনিয়োগ বেশ ব্যয়বহুল। সমালোচনার যে সুযোগ তারা পায়, সেগুলো যদি বন্ধ করার সুযোগ আমরা পাই, তবে তারা আর এসব নিয়ে ক্ষমতা দেখাতে পারবে না।’

এই বিশ্লেষক আরও বলেন, ‘একসময় তারা পরিবেশবান্ধব কারখানা নিয়ে কথা বলত। কিন্তু আমরা এখন এই সক্ষমতা অর্জন করেছি। তাই এটা নিয়ে এখন আর কথা ওঠে না। আমি মনে করি না, তারা শর্ত দেবে আর বাংলাদেশ বসে থাকবে। এখন অনেক নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশেরও সেগুলোতে যাওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সরকারের সমালোচনা করে। তারা যা বলে, যুক্তরাষ্ট্র তা শুনে থাকে, সবকিছুতে রাজনীতিকরণ করা হয়। তাই এসবকে অত বড় গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয়। সমস্যা হলো, সরকার যা করছে, তার কোনো প্রচার নেই।’ 

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক এম হুমায়ুন কবির প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমাদের শ্রমিকদের অধিকার যদি সংরক্ষিত হয়, তা হলে তা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের কাছেও ইতিবাচক হিসেবে প্রভাব বিস্তার করবে। ২০২৬ সালে আমরা যখন এলডিসিতে ‍উত্তরণ করব, তখন প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে যুক্ত হব। তখন ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে অন্যান্য অধিকারের পাশাপাশি শ্রমিকদের বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে বলে নয়, আমাদের দেশের শ্রমিকদের জন্য আমাদের প্রয়োজনেই অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে। বাংলাদেশকে আগামী দিনে উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করতে শ্রমিকদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে সমাধা করতে হবে।’

সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বিশ্লেষক মুন্সি ফয়েজ বলেন, ‘শ্রমিক আইন বা অধিকারের বিষয় নিয়ে বছর বছর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এটা নতুন না। আমাদের নতুন কিছু তাদের জানানো হলে তারা আবার নতুন করে প্রেসক্রিপশন দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী চায়, সেটা দেখা জরুরি না। তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখতে তো আমাদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতে পারি না। যুক্তরাষ্ট্র যা বলবে, আমার দেশের প্রেক্ষাপটের সঙ্গে তো তা সংগতিপূর্ণ হতে হবে, মিলতে হবে। আমাদের দেশে সরকার, মালিক, শ্রমিক সবাই মিলে ঠিক করবে কী আইন হবে, কেমন হবে। তবে একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ যে, আমাদের দেশে কাজের পরিবেশের অনেক উন্নতি হয়েছে। সুতরাং তারা যা বলছে, তা মূল্যায়ন করে আমাদের কী প্রয়োজন, সেটি নির্ধারণ করেই এখানকার শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা