ডেমরায় বাসে আগুন
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:২৭ পিএম
ডেমরায় অছিম পরিবহনে আগুন দেওয়ার ঘটনায় বিএনপির তিন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। ছবি : ভিডিও থেকে নেওয়া
বিএনপির সরকার বিরোধী আন্দেলন চলাকালীন গত বছরের ২৯ অক্টোবর ভোরে ডেমরা এলাকায় অছিম পরিবহনে আগুন দেওয়া হয়। এসময় পরিবহনে থাকা ঘুমন্ত হেলপার দগ্ধ হয়ে মারা যায়। এসময় দগ্ধ হয় আরও এক হেলপার।
এ ঘটনায় তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) স্পেশাল এ্যাকশন গ্রুপ বিভাগের এন্টি ইললিগ্যাল আর্মস এন্ড ক্যানাইন টিম। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে সিটিটিসি জানিয়েছে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে অছিম পরিবহনে আগুন দেয় তারা।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম মনির ওরফে মনির মুন্সি, নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সাহেদ আহমেদ এবং মনির মুন্সির ব্যক্তিগত গাড়ি চালক মাহাবুবুর রহমান সোহাগ।
এসময় গাড়িতে আগুন দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়।
শনিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসির অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বানচালের উদ্দেশে রাজধানীর পল্টন এলাকায় নারকীয় তাণ্ডব চালায় বিএনপির নেতাকর্মীরা। এরই ধারাবাহিকতায় ২৯ অক্টোবর ভোরে ডেমরা থানার দেইল্লা বাসস্ট্যান্ডে পার্কিং করে রাখা অছিম পরিবহনের একটি গাড়িতে আগুন দেয়। এতে ওই বাসে ঘুমিয়ে থাকা হেল্পার মো. নাইম ঘটনাস্থলে আগুনে পুড়ে মারা যায় এবং অপর হেল্পার মো. রবিউল দগ্ধ হয়। এই ঘটনায় মামলা হলে তদন্ত শুরু করে সিটিটিসির স্পেশাল একশন গ্রুপের এন্টি ইলিগাল আর্মস এন্ড ক্যানাইন টিম।’
সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘অভাবের সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে অল্প বয়সে কাজে নামেন নাঈম। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বাসের ভেতর ঘুমন্ত অবস্থায় নিজের জীবন বিসর্জন দেন। একই বাসে নাঈমের সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিল রবিউল। ঘুমের মাঝে আচমকা আগুনের তাপে ঘুম ভেঙ্গে যায় তার তার। কিন্তু ততক্ষণে রবিউলের শরীরেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ধগ্ধ অবস্থায় গাড়ি থেকে সে বের হয়ে আসে। পরবর্তীতে পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় সে হাসপাতালে ভর্তি হয়।’
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘তদন্তভার নেওয়ার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনাস্থলের চারপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অগ্নিসংযোগে ব্যবহৃত একটি গাড়ি সনাক্ত করা হয়। সেই সূত্র ধরে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মূল অগ্নিসংযোগকারী ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার এবং ঘটনায় ব্যবহৃত গাড়িটি জব্দ করা হয়।’
আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘২৮ অক্টোবরের নাশকতা ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে মনির মুন্সিকে নির্দেশনা দেয় দলের হাইকমান্ড। নাশকতার মাত্রা আরও বাড়ানো এবং এমন কোন ঘটনা ঘটানো যাতে করে জনমনে ব্যাপক আতংকের সৃষ্টি হয়। তারই অংশ হিসেবে বেশ কয়েকজনকে অগ্নিসংযোগের জন্য নিয়োগ দেয় মনির। সে নিজে বড় একটি ঘটনা ঘটানোর জন্য নারায়ণগঞ্জ যুবদলের সদস্য সচিব এবং তার বন্ধু সাহেদ আহমেদকে ডেকে নেয়। তারা দুজনে মিলে পরিকল্পনা করে ডেমরা এলাকার দেইল্লা বাস স্ট্যান্ড এলাকায় রাত ২টার পর বেশ কয়েকবার গাড়ি দিয়ে ঘুরে ঘুরে রেকি করে এবং দেখতে থাকে কোন জায়গাটা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতামুক্ত।
তিনি বলেন, ‘তারা কাঙ্ক্ষিত টার্গেট ফিক্স করে ‘বড়ভাঙ্গা’ মার্কেটে চলে যায়। সেখান থেকে তারা ২ লিটারের পানির বোতলে পেট্রোল সংগ্রহ করে রাত ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। নিরাপদ দূরত্বে গাড়ি থামিয়ে মনির মুন্সি ও সাহেদ পেট্রোলের বোতল নিয়ে রাস্তার পাশে পার্ক করে রাখা অছিম পরিবহনের কাছে যায়। সেখানে ড্রাইভারের সিটের পাশে থাকা খোলা গ্লাসের অংশ দিয়ে ড্রাইভার সিটে মনির মুন্সি পেট্রোল ঢেলে দেয় এবং একপর্যায়ে বোতলটিও সেখানে ফেলে দেয়। তারপর দিয়াশলাই দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। নিমিষেই আগুন ছড়িয়ে পড়লে তারা দুইজন দৌড়ে পুনরায় গাড়িতে এসে ওঠে এবং দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। তারা এক্ষেত্রে সম্ভাব্য বিপদ এড়ানোর জন্য রং সাইডে ডেমরা এক্সপ্রেস ওয়েতে উঠে সুফিয়া কামাল ব্রিজ দিয়ে ভুলতায় থাকা মনির মুন্সিদের মালিকানাধীন ‘মুন্সি পেট্রোল পাম্প’ এ রাত্রিযাপন করে। সকাল ১০টায় বাসায় ফিরে যায়।’
নাশকতার নির্দেশদাতাদের পরিচয় জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা সবার নাম পরিচয় পেয়েছি। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তাদের গ্রেপ্তার শেষে সবাইকে জানানো হবে।’