× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

উপজেলা নির্বাচন

মন্ত্রী এমপিদের প্রভাব নিয়ে শঙ্কায় প্রশাসন

বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:৪৪ এএম

আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:৪৬ এএম

মন্ত্রী এমপিদের প্রভাব নিয়ে শঙ্কায় প্রশাসন

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব বিস্তার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপাররা (এসপি)। প্রভাবশালী মন্ত্রী ও এমপিদের নিয়ে শঙ্কিত মাঠ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। নির্বাচনের বিষয়ে মন্ত্রী ও এমপিদের কোনো নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) তাদের পাশে থাকবে কি না সে ব্যাপারেও স্পষ্ট হতে চান তারা। এ অবস্থায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে নেওয়া যেকোনো পদক্ষেপের বিষয়ে কর্মকর্তাদের পাশেই থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছে ইসি। 

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) নির্বাচন ভবনে ষষ্ঠ উপজেলা ভোট নিয়ে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের এক সভায় এসব কথা উঠে আসে। সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি), সকল বিভাগীয় কমিশনার ও পুলিশ কমিশনার (সংশ্লিষ্ট), রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি), জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি) ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তারা অংশ নেন। সভায় সদ্য সমাপ্ত জাতীয় নির্বাচন এবং উপজেলা নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ভাতা, নির্বাচনী আচরণবিধি ও মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব বিস্তারসহ নানা প্রসঙ্গে আলোচনা হয়। 

বৈঠক সূত্র জানায়, ডিসি-এসপিদের আশ্বস্ত করে ইসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, উপজেলা পরিষদে মন্ত্রী ও এমপিদের প্রভাবমুক্ত নির্বাচন দেখতে চায় কমিশন। বদলির ভয়ে কারও কাছে নিজেদের অবস্থান বিকিয়ে না দিয়ে প্রশাসন ও পুলিশকে নীতিতে অটল থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

সভায় উপজেলা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজন করতে মাঠ প্রশাসনকে নানা দিক-নির্দেশনা দেয় ইসি। এ  সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত ও প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে বলা হয়। এ ছাড়া মোবাইল সেবা সার্ভিস যেমন বিকাশ, রকেট ও নগদের মাধ্যমে নির্বাচনে কালো টাকা ছড়ানোর যে অভিযোগ রয়েছে তা বন্ধে কীভাবে প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে পারে, সে বিষয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে। 

বৈঠক সূত্র আরও জানায়, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সভায় উদ্বোধনী বক্তব্য দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। তার বক্তব্যের পর উপজেলা নির্বাচনের মাঠ পরিস্থিতি জানতে ডিসি ও এসপিদের কাছ থেকে বক্তব্য আহ্বান করা হয়। এ সময় দুজন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, ছয় থেকে সাতটি জেলার ডিসি ও এসপি, দুজন ডিআইজি ও দুজন বিভাগীয় কমিশনার তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, নির্বাচন কমিশন সচিব এবং চারজন নির্বাচন কমিশনার মাঠ প্রশাসনের উদ্দেশে বক্তব্য দেন।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, কমিশনের সামনে বক্তব্য দিতে গিয়ে কয়েকজন ডিসি ও এসপি উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী ও এমপিদের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ তোলেন। এ ক্ষেত্রে সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের ভূমিকা ও বাড়াবাড়ির কথাও তুলে ধরা হয়। সেই আলোকে উপজেলা নির্বাচনে তাদেরকে আচরণবিধি মানাতে মাঠ প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নেবে কি না সে সম্পর্কে কমিশনের কাছে জানতে চাওয়া হয়। তারা বলেন, দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করে মন্ত্রী-এমপিদের অনেকেই নিজ সন্তান, ভাই কিংবা আত্মীয়-স্বজনকে প্রার্থী করেছেন। মাঠে নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। সেই সঙ্গে প্রশাসনকে তাদের পরিবারের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করছেন। মন্ত্রী-এমপিদের পক্ষে কাজ না করলে অনেক সময় বদলির হুমকি আসে। পদোন্নতিসহ সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে তারা নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারেন। কোনো কোনো ডিসি ও এসপি প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিদের নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে জানতে চান, কোনো কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে কমিশন পাশে থাকবে কি না? নাকি মন্ত্রী-এমপিরাই উল্টো অভিযোগ এনে তদবির করে তাদেরকে বদলি করে দেবেন। এর জবাবে ডিসি-এসপিদের আশ্বস্ত করে সিইসি বলেন, কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে বদ্ধপরিকর। আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতা ও জোরালো ভূমিকার কারণে সদ্য সমাপ্ত জাতীয় নির্বাচন সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সরকারও ওই নির্বাচনে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ না করে কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে। উপজেলা নির্বাচনেও সরকার আমাদের পাশে রয়েছে। সেজন্য অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে আপনারা যে ভূমিকা রাখবেন কমিশন সব সময় তার পাশেই থাকবে। নির্বাচন কমিশনের কথা শোনার কারণে উচ্চমহল থেকে নির্বাচনে দায়িত্বরত কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বদলির জন্য সুপারিশ এলে সে বিষয়ে কমিশন যাচাইয়ের পর প্রমাণ সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেবে। এজন্য দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।

বরিশালের পুলিশ কমিশনার বলেন, আমাদের ওপরে চাপ রয়েছে। জবাবে পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ভয়ের কিছু নেই। সর্বোচ্চ শাস্তি বদলি করবে। আরেক জায়গায় অর্থাৎ নতুন কর্মস্থলে চাকরি করবেন। এতে সমস্যা নেই, তবুও মাথা নত করা যাবে না। এ সময় সিইসিসহ সব কমিশনার এ বিষয়ে সবাইকে আশস্ত করেন। 

তাদের ভাষ্য হচ্ছে, বদলি কোনো শাস্তি নয়। এটা চাকরির অংশ। আপনাদের বিরুদ্ধে কোনো মহল থেকে বদলি করার জন্য কমিশনে অনুরোধ এলে আমরা সেটি খতিয়ে দেখব। কারো কথায় আপনাদের বদলি করা হবে না। কমিশন নিজস্ব উৎস থেকে তদন্ত করবে। যদি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা না পায় তাহলে বদলি করা হবে না। আপনারা কারও কাছে মাথা নত করবেন না। দায়িত্বে অটুট থাকবেন। আমরা আপনাদের সব ধরনের সহায়তা দিব। 

সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল আরও স্পষ্ট করে বলেন, নির্বাচনে চাপ থাকবে। চাপ সবার ওপরই থাকে। তদন্তে প্রমাণ পেলে তবেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এমপিরা যাতে নির্বাচনের প্রচারে অংশ না নিতে পারেন সেজন্য সবাইকে সতর্ক থেকে দায়িত্ব পালনের জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে নিদের্শনা দেওয়া হয়। যদি কেউ প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন তাহলে কমিশনকে জানালে তাৎক্ষণিক সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও আশ্বাস দেওয় হয় মাঠ প্রশাসনকে।

সূত্র জানায়, বৈঠকে কোনে কোনো বক্তা উপজেলা নির্বাচন নিয়ে মাঠের চিত্র তুলে ধরে জানান, স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ক্ষমতাসীন দলের একাধিক প্রার্থী যেসব উপজেলায় রয়েছেন সেখানে আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে যে কয়টি উপজেলায় আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপি বা জামায়াতের প্রার্থী মাঠে রয়েছেন সেসব উপজেলায় এ আশঙ্কা প্রবল। সেজন্য শুরু থেকেই এসব এলাকায় বিশেষ নজর দিতে হবে, যাতে বড় ধরনের কোনো কিছু না ঘটতে পারে। 

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) বলেন, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত সেভাবে নেই। সেজন্য তারা এ নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে নানা ষড়যন্ত্র করতে পারে। ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে।

জামালপুরের ডিসি তার এলাকায় সব নির্বাচন ইভিএমে হচ্ছে জানিয়ে বলেন, কিছু ইভিএমে ত্রুটি রয়েছে। সেগুলো ঠিকমতো কাজ করছে না। ইভিএমের চাহিদা দিলে নতুন করে তাকে ইভিএম সরবরাহ করা হবে বলে জানায় কমিশন। সভায় কুড়িগ্রামের ডিসি দুর্গম এলাকায় ম্যাজিস্ট্রেট বাড়ানোর দাবি জানান।

গতকালের এ বৈঠকে কেউ কেউ নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারে সহায়তাকারী হিসেবে ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বে নিয়োজিত প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারদের দায়ী করে পাশের উপজেলা থেকে তাদের আনা যায় কি না সেটি বিবেচনার অনুরোধ জানান। একইভাবে গ্রাম পুলিশ বা আনসার বা চকিদার-দফাদারদের নিয়েও প্রশ্ন তুলে পাশের ইউনিয়ন থেকে আনার অনুরোধ করেন পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তবে কমিশন এই প্রস্তাবগুলো নাকচ করে দেন। এ ছাড়া ভোটের দিন সকালে ব্যালট ও ইভিএম কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাড়তি খরচ দাবি করেন জেলা প্রশাসকরা। সেটিও নাকচ করে দেওয়া হয়।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা