× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বেনজীর আহমেদ বললেন

যেসব সম্পত্তির কথা বলা হয়েছে সেগুলো প্রমাণ করতে পারলে বিনা পয়সায় লিখে দেব

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:৪২ পিএম

আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২৪ ২৩:০৩ পিএম

সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ। ছবি : সংগৃহীত

সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ। ছবি : সংগৃহীত

সাবেক আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ কিছু গণমাধ্যমে তাকে নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয়ে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। শনিবার (২০ এপ্রিল) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ২৪ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের একটি ভিডিওবার্তা প্রচার করেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশের পর যারা এক প্রকার পৈশাচিক উল্লাসে মত্ত ছিলেন তাদের জন্য বলছি, প্রতিবেদনে আমার ও আমার পরিবারের যেসব সম্পত্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে সেগুলোর মালিক আমি ও আমার পরিবার নই। প্রতিবেদকসহ তারা সবাই যদি সেসব সম্পত্তির মালিক আমি ও আমার পরিবার মর্মে প্রমাণ দিতে পারেন, তাহলে হাসিমুখে সেসব সম্পত্তি তাকে বা তাদের বিনা পয়সায় দিয়ে দেব।’ 

বেনজীর আহমেদ আরও বলেন, ‘আমি দুই বছর আগে অবসরে গিয়েছি। অবসরে যাওয়ার পর আমাকে দুর্নীতিবাজ প্রমাণের অপচেষ্টা অত্যন্ত হতাশা ও দুঃখজনক। এ ধরনের অপচেষ্টা ভবিষ্যতে যারা সৎ পথে থেকে ভালো কাজ করতে চান, তাদের নিরুৎসাহিত করবে। কোনো ব্যক্তিগত কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে এ ধরনের আক্রমণ করলে জাতি হিসেবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব।’

ভিডিওবার্তার শুরুতে সাবেক আইজিপি বলেন, ‘চাকরি থেকে অবসরের পর স্বেচ্ছায় পাবলিক লাইফ থেকে দূরে নিরিবিলি জীবনযাপনের চেষ্টা করছি। তবে কর্মজীবনে ২০১২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আমি সোশ্যাল মিডিয়াতে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর ক্রমাগত অপপ্রচার; এমনকি ব্যক্তিগত চরিত্রহননের শিকার হয়েছি। সম্প্রতি পত্রিকায় আমার ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে খুবই আপত্তিজনক, মানহানিকর অসত্য ও বিকৃত সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সেই সংবাদের সূত্র ধরে অন্যান্য কতিপয় মিডিয়া আউটলেট একই সংবাদ পরিবেশন করেছে। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় এই যে, দেশের মূলধারার প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এসব অসত্য ও মানহানিকর বিকৃত সংবাদ পরিবেশনে কোনো আগ্রহ দেখায়নি।’ 

তিনি বলেন, ‘অবসর নেওয়ার প্রায় দুই বছর পর হঠাৎ আমার ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে এ ধরনের মানহানিকর, অসম্মানজনক, অসত্য সংবাদ কেন পরিবেশিত হলো, আমি সে আলোচনায় যাব না। তবে এর কারণ রাজধানীর সব সাংবাদিক ও সচেতন মহলের মুখে মুখে। আপনারা জানেন, গত ১৪ বছরে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হিসেবে রাজধানীর সম্মানিত নাগরিক, সেই সঙ্গে এলিট ফোর্স র‍্যাব মহাপরিচালক (র‌্যাব) ও আইজিপি হিসেবে দেশবাসীকে সেবা দেওয়ার দুর্লভ সুযোগ পেয়েছি।’ 

ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘প্রায় ৩৫ বছর রাষ্ট্রের কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি, ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতার অবস্থান থেকে প্রকাশিত সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকৃত সত্য ও তথ্য তুলে ধরার নৈতিক তাগিদ অনুভব করছি। তা ছাড়া যারা আমাকে পছন্দ করেন, ভালোবাসেন, সমর্থন করেন, তারাসহ আমার পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতজন, যারা এই অসত্য ও বিকৃত সংবাদের কারণে আহত-হতাশ; সংক্ষুব্ধ হয়েছেন, তাদের আশ্বস্ত এবং বিশ্বাসের জায়গাটি সুদৃঢ় করার জন্য সত্য প্রকাশ করা একান্ত প্রয়োজন। আমার এই বক্তব্যের লক্ষ্য কাউকে পাল্টা আক্রমণ বা পাল্টা অভিযোগ কিংবা বিদ্বেষ সৃষ্টি করা নয়; শুধু নৈতিক ও ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতার প্রেক্ষাপটে আমার কথাগুলো বলব।’ 

সাবেক আইজিপি বলেন, ‘আমরা প্রকাশিত দুই কিস্তি সংবাদ পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করেছি। এতে মোটামুটি ৪৫টি অভিযোগ বা অপমানজনক মন্তব্য সন্নিবেশিত আছে। তার মধ্যে ২৪টি অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও কল্পনাপ্রসূত। দুটি বিষয়কে সাতবার পুনরাবৃত্তি করে পরিবেশন করা হয়েছে। দুটি তথ্যকে ভুল প্রেক্ষাপটে বিকৃতভাবে পরিবেশন করা হয়েছে। বাকি ১০ অভিযোগ ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে শুধু তিলকে তাল নয়, তালগাছের ঝাড়সহ বানিয়ে ভুল ও অসত্য কাল্পনিক তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি পুলিশ সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ পদগুলোতে ১৪ বছর এবং সব মিলিয়ে ৩৫ বছর চাকরি করেছি। ১৯৯৬ ও ১৯৯৭ সালে এবং ২০০১ ও ২০০২ সালে আমি যথাক্রমে বসনিয়া ও কসোভোতে শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কর্তব্য পালন করেছি। সরকার থেকে লিয়েন নিয়ে ২০০৯ ও ২০১০ সালে আমি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ঈর্ষণীয় বেতনে চাকরি করেছি। আমি সরকারি চাকরিজীবী হলেও আমার স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের এ দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী বৈধভাবে ব্যবসার মাধ্যমে তাদের অর্থ ও ভূসম্পত্তি অর্জনে কোনো বাধা নেই।’ 

সাবেক আইজিপি বলেন, ‘আমাদের জন্মশহর গোপালগঞ্জে ২০১৪ সাল থেকে পারিবারিক কৃষি খামার ও কৃষিতে বিনিয়োগ রয়েছে। সে সময় থেকে গত ১০ বছরে ধীরে ধীরে কৃষি ক্ষেত্রে আমাদের পারিবারিক বিনিয়োগ ও ব্যবসা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রথমে সেখানে আমার পরিবারের সদস্যরা একটি ছোট মাছের খামার প্রতিষ্ঠা করে। সেই খামারের আয় থেকে আস্তে আস্তে ব্যবসা বৃদ্ধি করা হয়। পরে মৎস্য খামারের পাশাপাশি বিভিন্ন ফলদ, বনজ, ঔষধি ও মসলাজাতীয় গাছ রোপণের মাধ্যমে বনায়ন করা হয়। কৃষি ক্ষেত্রে ব্যবসার জন্য শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগের দরকার হয় না। ওই প্রকল্পে যে পরিমাণ জমির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেটি সঠিক নয়। সত্য এই যে, সেখানে যে পরিমাণ টাকার জমি কেনা হয়েছে, তার থেকে বেশি ব্যাংক ও অন্যান্য সূত্র থেকে ঋণ নেওয়া আছে। তা ছাড়া এই জমির পরিমাণ এবং টাকার উৎস সংশ্লিষ্ট ট্যাক্স ফাইলে সন্নিবেশিত আছে।’

ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আমার স্ত্রীর পরিবার সম্পর্কে অত্যন্ত আপত্তিকর মন্তব্য করা হয়েছে। তার বাবা সরকারের একজন পদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন এবং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্য সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত। আমার স্ত্রী গত ২৪ বছর ধরে তার ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক আয়ের বিপরীতে ট্যাক্স দিয়ে আসছেন।’ 

তিনি বলেন, ‘প্রতিবেদন অনুসারে, ঢাকার কাছে আমার বিঘার পর বিঘা জমি নেই। পূর্বাচলে ৪০ কাঠা জমির ওপর ডুপ্লেক্স বাড়ি নেই, কথিত সেই বাড়ির পাশে একই জায়গায় আরও ১০ বিঘা জমিও নেই। আমার ৩৫ বছরের চাকরি জীবনে বেতন ভাতার যে কাল্পনিক হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে সেটিও ভুল ও অপমানজনক। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, আমার অবসরের পর তথাকথিত থলের বিড়াল বেরিয়ে এসেছে। আমাদের পারিবারিক ব্যবসা ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, অর্থাৎ গত ১০ বছর ধরে আমাদের পারিবারিক ব্যবসা প্রকাশ্যে এবং সর্বসমক্ষে পরিচালিত হয়ে আসছে। এখানে গোপন বা আড়াল করার কোনো সুযোগ নেই। গোপালগঞ্জ প্রজেক্টে দুটি কোম্পানির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যার একটি ২০ কোটি এবং আরেকটিতে ৫ কোটি। অনুমোদিত মূলধনের কথা এভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যেন সাধারণ পাঠকদের মনে হবে, এই ২৫ কোটি টাকা ব্যবসায় বিনিয়োগ করে হয়েছে। অনুমোদিত মূলধন এবং পরিশোধিত মূলধন এক নয়। এই দুই কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন সব মিলিয়ে এমনকি এক কোটি টাকার ধারেকাছেও নয়। সাভানা এগ্রোতে শতকোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত সত্য এই, এই দুটি কোম্পানি এখন পর্যন্ত অর্থাভাবে ব্যবসাই শুরু করতে পারেনি। শতকোটি টাকা বিনিয়োগের প্রশ্ন আসে না। মূলত ব্যবসা সম্প্রসারণ ও বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই কোম্পানি দুটি প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং ব্যাংক লোনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে করোনা প্রভাব ও ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে ব্যাংক লোনের সুযোগ সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। ফলে পারিবারিক কোম্পানি যথাসময়ে ব্যাংক লোন সংগ্রহ করতে সফল হয়নি।’ 

সাবেক আইজিপি বলেন, ‘ক্ষমতার অপব্যবহার করে চাপ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে জমি কেনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিজ জেলা এবং তার সংসদীয় আসনের সন্নিহিত। সেখানে ভয়ভীতি দেখিয়ে জমি কেনা একটি অসম্ভব কল্পনা। প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আমাদের মগবাজার ইস্টার্ন প্রোপার্টিজের একটি বহুতল ভবনে ৪ হাজার স্কয়ার ফিটের একটি ফ্ল্যাট আছে। এটিও একটি সর্বাংশে মিথ্যা তথ্য। মগবাজার কেন, রমনা, সিদ্ধেশ্বরীর আশেপাশে আমাদের ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট নেই।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আনন্দ হাউজিংয়ে ৪০ কাঠা জমিসহ ৪৫ কোটি টাকার বাড়ি আছে বলে দাবি করা হয়েছে। আনন্দ হাউজিং একটি সমবায় সমিতি। ২০০৭ সালে আমরা এখানে একটি প্লট বুকিং দিই এবং কিস্তির মাধ্যমে ধীরে ধীরে টাকা পরিশোধ করি। সেখানে আমাদের ৪০ কাঠার কোনো প্লট নেই। এটি বাড়িয়ে বলা হয়েছে। আমাদের প্লটে ৫ ইঞ্চি দেয়ালের টিনের ছাদবিশিষ্ট একটা দোতলা ঘর রয়েছে। আনন্দ হাউজিংয়ে ২০২৪ সালেও নাগরিক সুবিধা এবং ভৌত অবকাঠামো তেমন গড়ে ওঠেনি। সেখানে দুই তলা টিনের চালের ঘরের মূল্য ৪৫ কোটি দাবি করা অত্যন্ত হাস্যকর।’ 

সাবেক আইজিপি বলেন, ‘আমি আইজিপি থাকা অবস্থায় পূর্বাচলে ফারুক মার্কেটের পেছনে ১০ কাঠার একটি প্লট ক্রয় করেছি, যার বাজার মূল্য ২২ কোটি টাকা বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু আমি আইজিপি বা র‍্যাব ডিজি থাকার সময় কোনো প্লট কিনিনি। ২০০১ সালে রাজউক বরাবর আবেদন করে একটি ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ পাই। নিজের এবং পারিবারিক অর্থের প্রয়োজন হওয়ায় সেটি বিক্রি করেছি। পূর্বাচলে বর্তমানে আমাদের কোনো প্লট বা বাড়ি কিছুই নেই।’

বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘রূপগঞ্জের নাওড়ায় আমাদের ২ বিঘা জমি রয়েছে, যার বাজারমূল্য ২০ কোটি টাকা বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এটিও মিথ্যা তথ্য। রূপগঞ্জে আমাদের কোনো জমি নেই। মেয়ের বিশ্রামের জন্য বসুন্ধরায় ৩ কোটি টাকার ফ্ল্যাট কিনেছি বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ২০১৩ সালের শেষদিকে আমরা বসুন্ধরা এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনে নির্মাণ অসম্পূর্ণ একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করি। পরে বিভিন্ন কারণে সেটি বসবাস উপযোগী বলে মনে না হওয়ায় ফ্ল্যাটটি বিক্রি করে দিই। বসুন্ধরা এলাকায় ২০২৪ সালে এসেও ১০ হাজার টাকা স্কয়ার ফিটে কোনো অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি হয় না, সেখানে ২০১৩ সালে স্কয়ার ফিট ১০ হাজার টাকা দামে বিক্রির তো প্রশ্নই আসে না। ওই ফ্ল্যাটে দরজার দাম ৫০ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে দারোয়ানের বরাত দিয়ে। বিষয়টি খুব মজার এবং কৌতূহলপূর্ণ। দারোয়ান কীভাবে দরজার দাম জানবে? একটি দরজায় ২১ থেকে ৩০ ফুট কাঠ থাকতে পারে, সেখানে দরজার দাম ৫০ লাখ হলে, প্রতি স্কয়ার ফুট কাঠের দাম আসে পৌনে ২ লাখ টাকা। এত দামি কোনো কাঠ দেশে আছে কি না আমার জানা নেই।’ 

তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিবারের স্টক মার্কেটে বিজনেস পোর্টফলিও এবং শেয়ার কেনাবেচার ব্যবসা আছে। এগুলোর বিপরীতে লা মেরিডিয়ানে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে ২ লাখ শেয়ার রয়েছে। লা মেরিডিয়ানের মোট শেয়ার সংখ্যা ৩৫ কোটি ৫০ লাখ। সেখানে আমাদের পরিবারের হাতে থাকা শেয়ার ১ শতাংশেরও অনেক নিচে।’ 

সাবেক আইজিপি আরও বলেন, ‘ভাওয়াল রিসোর্ট, বনানীতে ইউনিক রিজেন্সি হোটেল, কক্সবাজারের বেস্ট ওয়েস্টার্ন এবং হোটেল রামাদায় আমাদের মালিকানা আছে বলে দাবি করা হয়েছে। এই সমস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আমাদের কোনো মালিকানা বা বিনিয়োগ নেই। এ ছাড়া পদ্মা ব্যাংক ও কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে মালিকানা কিনেছি বলে দাবি করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে আমাদের কোনো মালিকানা এবং বিনিয়োগ নেই। এমনকি পদ্মা ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্টও নেই। দুবাইতে শতকোটি টাকার হোটেল ব্যবসা, সিঙ্গাপুরে অর্ধশত কোটি টাকার সোনার ব্যবসা, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় জমি কিনেছি বলে দাবি করা হয়েছে। দুবাইতে আমাদের কোনো হোটেল ব্যবসা নেই। সিঙ্গাপুরে কোনো সোনার ব্যবসা নেই। থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়াতে আমার বা আমাদের কোনো জমি নেই। দুবাইয়ের কেন্দ্রস্থল কনকর্ড হোটেলে মোটা অঙ্কের শেয়ার রয়েছে বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। উল্লিখিত হোটেলে আমাদের কোনো শেয়ার নেই। আমরা খবর নিয়ে জেনেছি; সেখানে কোনো শেয়ারহোল্ডার নেই। মূলত এটি একটি একক মালিকানাধীন হোটেল। একজন স্থানীয় নাগরিক ওই হোটেলের মালিক।’ 

তিনি বলেন, ‘সিঙ্গাপুরে নিজি জুয়েলার্সে আমার মালিকানা আছে বলে দাবি করা হয়েছে। তবে এই নামে কোনো জুয়েলার্স আছে কি না সেটাও জানি না, আমি কখনও যাইনি, চিনিও না, বিনিয়োগ বা মালিকানার প্রশ্নই আসে না। সোনালী ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের লোন নিয়ে বিদেশে পাচার করার অভিযোগ করা হয়েছে। মূলত ব্যাংক এবং অন্যান্য উৎস থেকে লোন নিয়ে গোপালগঞ্জের পারিবারিক ব্যবসায় বিনিয়োগ করা হয়েছে।’ 

সাবেক আইজিপি বলেন, ‘সেন্টমার্টিন এলাকায় নারকেল বাগান দখল এবং জমি থাকার কথা বারবার ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে বিভিন্ন দাগ এবং খতিয়ান নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলো যোগ করলে জমির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৬৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ। অথচ একই জায়গায় দাবি করা হয়েছে আমাদের ৪১৮ শতাংশ জমি রয়েছে। এতে সহজেই প্রতীয়মান হয়, এসব তথ্য ভুয়া এবং বিভ্রান্তিকর। জনৈক অজিউল্লাহর নারকেল বাগান দখলের অভিযোগ করা হয়েছে। সেখানে কোনো নারকেল বাগান আছে কি না আমার জানা নেই। এই নামে কোনো ব্যক্তি আছে কি না সেটিও আমার জানা নেই। প্রকৃত সত্য এই যে, আজ থেকে ১৭ বছর আগে আমরা পাথুরে এবং বালুময় একটা প্লট ক্রয় করি; সেটা এখনও সেভাবে পড়ে আছে, অন্য কারও জমি দখলের প্রশ্নই আসে না।’ 

সাবেক আইজিপি বলেন, ‘আমার এবং আমার পরিবারের যে সম্পত্তি আছে, তার প্রত্যেকটির বিপরীতে অর্থের উৎসসহ সংশ্লিট আয়কর ফাইলে যথাযথভাবে উল্লেখ করা আছে। আমার পরিবার ব্যবসার জন্য এবং আমি নিয়মিতভাবে কর পরিশোধ করি। সে কারণে আমি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সেরা করদাতার সম্মাননা পেয়েছি। আমার চাকরি জীবনে ব্যক্তিগতভাবে ঘুষ এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। ডিএমপি কমিশনার এবং র‍্যাবের ডিজি হিসেবে সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রশাসনিক এবং অপারেশনাল সংস্কার বা রিফর্মের উদ্যোগ নিয়েছি। আইজিপি হিসেবে কনস্টেবল, সাব ইন্সপেক্টর এবং সার্জেন্ট নিয়োগের বিধিমালা ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির পথ রুদ্ধ করে দিয়েছি। ফলে এখন মাত্র ১২০ টাকা প্রসেসিং ফি দিয়ে পুলিশ বাহিনীতে যোগ্য ও মেধাবীরা নিয়োগ পাচ্ছে। জুনিয়র পদগুলোতে পদোন্নতি বিধিমালা সংস্কার করে দুর্নীতিমুক্ত পদোন্নতির ব্যবস্থা করেছি। যার সুফল এখন জুনিয়র পুলিশ কর্মকর্তারা পাচ্ছে। এ কারণে আমি সরকারের শুদ্ধাচার পুরস্কার পেয়েছি।’

এদিকে শনিবার বিকালে একটি সংযোজনী দিয়ে বেনজীর আহমেদ আরেকটি স্ট্যাটাস দেন। তাতে তিনি লিখেছেন, ‘পত্রিকান্তরে প্রকাশিত সম্পত্তির তালিকায় আরও তিনটি সম্পদের বিষয় উল্লেখ আছে যে বিষয়ে স্পষ্টীকরণ জরুরি বলে মনে করি। প্রতিবেদনে কক্সবাজারের রামাদা হোটেল, ভাওয়াল রিসোর্ট ও বনানীর ইউনিক হোটেলে আমাদের বিনিয়োগ ও মালিকানা আছে বলে দাবি করা হয়েছে। প্রকৃত সত্য এই যে, এই তিন সম্পত্তি বা প্রতিষ্ঠানে আমার বা আমাদের কোনো মালিকানা বা বিনিয়োগ নেই। আমার বা আমার পরিবারের কারও মালিকানা প্রমাণ সাপেক্ষে এই তিনটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানও ইতঃপূর্বে প্রদত্ত “বিনা পয়সায় লিখে দেওয়া”র প্রতিশ্রুতিতে অন্তর্ভুক্ত।’

ড. বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি অবসরে যান। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা