বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:২৩ পিএম
আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৪ ২২:৫১ পিএম
শনিবার সকালে শিব নারায়ণ দাশের প্রতি সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। প্রবা ফটো
বাংলাদেশের প্রথম পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে সর্বস্তরের মানুষ। ফুল দিয়ে তাকে শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠনসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
শনিবার (২০ এপ্রিল) সকাল ১০টায় শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শিব নারায়ন দাশের মরদেহ রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হয়। সর্বসাধারণের শ্রদ্ধার আগে তার প্রতি গার্ড অফ অনার প্রদান করা হয়। পরে জাতির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে ছুটে আসেন তার গুণগ্রাহীরা।
শহীদ মিনারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড.আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে তার মরদেহে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা.দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, সুজিত রায় নন্দী, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান। পরে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারের নেতৃত্বে এবং বিভক্ত হওয়া জাসদের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্ব শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
এরপর একে একে শ্রদ্ধা জানান বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) প্রধান উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড খালেকুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজের নেতৃত্বে বাসদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড দদ. মুহাম্মদ সামাদ, বাংলাদেশ গণ-আজাদী লীগ, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক জোট, ইন্টারন্যাশনাল মেনস-রাইট ফাউন্ডেশন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), অধ্যাপক মাহফুজা খানমের নেতৃত্বে দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র, মনিপুরী পাড়া তরুণ সংঘ, কেন্দ্রীয় খেলাঘর, গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষে আকরামুল হক, খান আসাদুজ্জামান মাসুম, সহযাত্রী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ- জাসদ, আদিঢাকা সাংস্কৃতিক জোট, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ প্রমুখ সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদনে শেষে আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, ‘শিব নারায়ণ দাশের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন, যে ঐহিহ্যবাহী ছাত্রলীগ এদেশের সকল আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে। সর্বোপরি তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রেখেছেন। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনার একজন লড়াকু কর্মী ছিলেন। আমাদের জাতীয় পতাকার নকশা করার ব্যাপারে তিনি অবদান রেখেছেন। এটা ইতিহাসে অম্লান হয়ে থাকবে। আমরা পুরো জাতি তার প্রতি শ্রদ্ধাবনত।’
শিব নারায়ণ দাশ এক সময় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) নেতা ছিলেন। অগ্রজের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসে জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেন, ‘শিব নারায়ণ ছিলেন আপাদমস্তক একজন মুক্তিযোদ্ধা। তাকে আমরা শুধু জাতীয় পতাকা অংকনের জন্যই মনে রাখব না, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি জাসদের সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি দেশের জন্য অকাতরে সব কিছু বিলিয়ে দিয়ে গেছেন। শেষ সময়ে এসেও তিনি তার দেহ ও চক্ষু দেশের জন্য দান করে গেছেন।’
শিব নারায়ণ দাশের ছেলে অর্ণব আদিত্য দাশ বলেন, ‘আমার বাবা এমন একজন মানুষ ছিলেন, যিনি কখনও অন্যায়, দুর্নীতি ও মিথ্যাচারের সঙ্গে আপোষ করেননি। বাংলাদেশের অস্তিত্ব, মুক্তিযুদ্ধে চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিয়ে তিনি কখনও আপোষ করেননি। আমার বাবা আদর্শকে অনুসরণ করে আপনারা এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন, এটা আমার প্রত্যাশা। আমার বাবা সব সময় একটি কথাই বলে গিয়েছেন, এই দেশের নিপীড়িত ও নির্যাতিত যে সকল মানুষ রয়েছে, তাদের জন্য কথা বলতে হবে।’
শহীদ মিনারে শিব নারায়ণ দাশকে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ ও উপ-উপাচার্য ( শিক্ষা) অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার।
অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘একটা রাষ্ট্র বর্তমান থাকতে দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় , বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে সংগ্রাম চলছিল, সেই সংগ্রামের অংশ হিসেবে আরেকটি রাষ্ট্রের পতাকা তৈরি করা ছিল অত্যন্ত দুঃসাহসী কাজ। সেই দুঃসাহসী কাজটি করেছে ছাত্রলীগের নেতারা, সেটার নকশা তৈরি করেছিলেন তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা আমাদের শিবু দা। আমরা তার প্রতি আমাদের সশ্রদ্ধ অভিবাদন জানাই।’
পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শিব নারায়ণ দাশের বিএসএমএমইউতে দান করা হবে এবং কর্নিয়া দান করা হবে সন্ধানীতে।
বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের আইসিইউতে মারা যান তিনি।
শিব নারায়ণের তৈরি করা বাংলাদেশের মানচিত্র সম্বলিত পতাকা ধরেই হয়েছিল স্বাধীনতার সংগ্রাম। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে প্রথম বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো হয়েছিল।
লাল-সবুজের ভেতরে হলুদ রঙে বাংলাদেশের মানচিত্র সম্বলিত ওই পতাকার নকশা যারা করেছিলেন, তাদের একজন সে সময়ের ছাত্রলীগ নেতা শিব নারায়ণ দাশ।