এমভি আব্দুল্লাহ
চট্টগ্রাম অফিস
প্রকাশ : ১৪ এপ্রিল ২০২৪ ২০:৪৩ পিএম
জিম্মি দশা থেকে মুক্ত হওয়া সব নাবিক সুস্থ আছেন জানিয়ে ভিডিও বার্তা দেন এমভি আব্দুল্লাহ’র ক্যাপ্টেন আব্দুর রশিদ। ভিডিও থেকে নেওয়া
জিম্মি দশা থেকে মুক্ত হওয়ার পর একটি ভিডিও বার্তা পাঠিয়েছেন এমভি আব্দুল্লাহ’র ক্যাপ্টেন আব্দুর রশিদ। রবিবার (১৪ এপ্রিল) পাঠানো ভিডিও বার্তায় তিনি জানান, জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকের সবাই সুস্থ আছেন।
জাহাজ থেকে পাঠানো ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ক্যাপ্টেন আব্দুর রশিদসহ জাহাজের সকল নাবিক জাহাজের ডেকে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ানো। এরপর ক্যাপ্টেন আব্দর রশিদ একে একে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর বলেন, ‘আমিসহ ২৩ জন নাবিকের সবাই ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। জাহাজের সকল যন্ত্রপাতি, ইঞ্জিন, জেনারেটর সব কিছুই ভালো আছে।’
মুক্তিপণ দেওয়ার পর শনিবার (১৩ এপ্রিল) দিবাগত রাত ৩টার দিকে জলদস্যুরা জাহাজ থেকে নেমে যায়। এরপর জিম্মি দশা থেকে মুক্ত হন ২৩ নাবিক।
ওই দিন রাতে জাহাজটি জিম্মি দশা থেকে মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে সামাজিকমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছে জাহাজটির মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত। পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, ‘সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি থাকা ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ মুক্ত হয়েছে। নাবিকরা সবাই সুস্থ আছেন। শিগগির তারা দেশে ফিরবেন। ঈদ মোবারক। শুভ নববর্ষ।’
পরে রবিবার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জিম্মি দশা থেকে এমভি আব্দুল্লাহ মুক্তির বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেন, আমাদের কাছে নাবিকদের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টির গুরুত্ব ছিল। ‘মালিকপক্ষ বা আমরা সরাসরি জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ করিনি। যারা এটি নিয়ে কাজ করেন তাঁদের সাহায্য নিয়েছি। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে জাহাজসহ নাবিকদের উদ্ধার করা গেছে।’
ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ উদ্ধারে অভিযান চালানোর পরিকল্পনাকেও নিরুৎসাহিত করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর পিছু নেওয়ার পর সরকারকে দ্রুত বিষয়টি অবহিত করি। ৩০ মিনিটের মধ্যে ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ এটির সঙ্গ ত্যাগ করে।’ এই জন্য প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
জাহাজের নিরাপত্তার ঘাটতির বিষয়েও শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেন, ‘আমাদের জাহাজটি যে রুট হয়ে যাচ্ছিল সেখানে গত এক দশকে কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি। জাহাজটি ৯০০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে চলাচল করছিল। সে জন্য জাহাজে গানম্যান ছিল না। তবে এবার থেকে আমরা আরও সতর্ক অবস্থায় জাহাজ পরিচালনা করব।’
সংবাদ সম্মেলনে কেএসআরএমের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহেরুল করিমও উপস্থিত ছিলেন। ছিনতাই হওয়া এমভি আব্দুল্লাহ উদ্ধারে প্রপার ওয়েতে কাজ করেছি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘১৩ বছর আগে আমাদের আরেকটি জাহাজ জাহানমনি জিম্মি হয়েছিল। তখন আমাদের জ্ঞানের অভাব ছিল। সে জন্য জাহাজটি উদ্ধারে সময় বেশি লেগেছিল। এমভি আব্দুল্লাহ জিম্মি হওয়ার পর, দ্রুত উদ্ধারে প্রপার ওয়েতে কাজ করেছি। তাই জিম্মি হওয়ার মাত্র ৩১ দিন পর এটি উদ্ধার করতে সক্ষম হই।’
তিনি বলেন, ‘জাহাজটি জিম্মি হওয়ার পর থেকে জাহাজের ভিসেটের মাধ্যমে জাহাজটির সব তথ্য তদারকি করেছি। সোমালিয়ার উপকূলে জাহাজটি যাওয়ার পরপরই জলদস্যুদের একজন কমান্ডার যোগাযোগ করেন। ওই কমান্ডার ইংরেজি বলতে পারেন, তিনি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার কাছ থেকে আমরা প্রতিনিয়ত তথ্য পেতাম।’
মেহেরুল করিম বলেন, ‘আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল জাহাজের নাবিকেরা সুস্থ আছেন কি-না তা নিশ্চিত করা। আমরা জানতাম নাবিকেরা প্রতিদিন পরিবারের সঙ্গে কথা বলত। তারপরও আমরা নাবিকেরা কেমন আছে, জলদস্যুদের কাছ থেকে সেটির ভিডিও নিতাম।
তিনি আরও বলেন, ‘সর্বশেষ গত দুই দিন আগে আমাদের মধ্যে সমঝোতা হয়। তারপর সবকিছু আইন মোতাবেক করে, জিম্মিদের ছাড়াতে সক্ষম হই। জাহাজটিতে ৬৫ জন জলদস্যু ছিল। সমঝোতার পর শনিবার দিবাগত রাত ৩টায় ৬৫ জন জলদস্যু জাহাজটি ছেড়ে যান।’
এর আগে গত ১২ মার্চ বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টার দিকে জাহাজ থেকে বার্তা পাঠিয়ে জানানো হয়, আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুর কবলে পড়েছে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ। এরপরপরই জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় জাহাজটি। এরপর সেখান থেকে চালিয়ে ১৪ মার্চ দপুর ২টার দিকে জাহাজটিকে সোমালিয়ার উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে দুই দফায় সরিয়ে জাহাজটি সোমালিয়ার প্যান্টল্যান্ড এলাকার সমুদ্র উপকূলে নোঙর করা হয়। মুক্তির আগ পর্যন্ত জাহাজটি সেখানে ছিল।