ফারহানা বহ্নি
প্রকাশ : ১৩ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:৪৩ পিএম
আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০২৪ ২০:২৬ পিএম
নতুন বছরকে বরণ করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। ছবি : সংগৃহীত
ঈদের পরেই দরজায় কড়া নাড়ছে বাংলা নববর্ষ। আবহমান বাংলার প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখকে ঘিরে চলছে নানা আয়োজনের প্রস্তুতি। পুরাতনকে ঝেড়ে ফেলে ১৪ এপ্রিল স্বাগত জানানো হবে বঙ্গাব্দের নতুন বছর ১৪৩১ সালকে।
বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নিতে রাজধানী রমনার বটমূল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণসহ পুরান ঢাকাও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। পহেলা বৈশাখের দিন খোলা হবে হাল-খাতা, বসবে বৈশাখী মেলা, পান্তা-ইলিশসহ নানারকম ঐতিহ্যবাহী আয়োজন থাকবে সারা দেশে।
অপশক্তিকেপরাজিত করে আলোর আহ্বান জানিয়ে এবারও মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। কবি জীবনানন্দ দাশের ‘তিমির হননের গান’ কবিতার পঙতি থেকে প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে‘আমরা তো তিমিরবিনাশী’। এ বছর চারুকলা অনুষদ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে সকাল ৯টায়। শোভাযাত্রা শাহবাগ মোড় হয়ে শিশুপার্কের সামনে দিয়ে ঘুরে ফের শাহবাগ হয়ে টিএসসিতে গিয়ে শেষ হবে।
এবারের আয়োজনে চারটি বড় মোটিফ বা শিল্পকর্ম তৈরি করা হয়েছে বলে জানান ঢাবি চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন। তিনি বলেন, ‘প্রতি বছরই আমরা আমাদের লোকজ মাটির পুতুল থেকে এসব মোটিফ তৈরি করি। ঈদের ছুটির কারণে আমাদের ছেলেমেয়েরা অনেকেই ঢাকার বাইরে থাকবে, সেজন্য নিশ্চিত করে এখনই বলছি না। তবে চারটি হবে এটা নিশ্চিত, সম্ভব হলে পাঁচটি মোটিফ থাকব।’
চারটি মোটিফের মধ্যে থাকবে পাখি, হাতি, ভোঁদর এবং চাকার মধ্যে চোখ ধরণের ভিন্ন রকম একটি শিল্পকর্ম। নিসার হোসেন বলেন, ‘যে মোটিফ তৈরি করা হয়েছে এগুলো আমাদের লোকজ জীবনে রয়েছে। সেগুলোকেই আমরা একটু বড় করে তৈরি করি। এ ছাড়া মুখোশসহ নানা রকম শিল্পকর্মও থাকবে।’
পহেলা বৈশাখে নিরাপত্তা এবারও জোরদার করা হয়েছে। রাজধানীর রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, হাতিরঝিল ও রবীন্দ্র সরোবরসহ দেশে যেসব স্থানে খোলা জায়গায় বর্ষবরণের অনুষ্ঠান হবে, সেগুলো সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে বর্ষবরণের সব আয়োজন বিকাল ৫টার মধ্যে শেষ করাসহ ভুভুজেলা বাজানো ও বিক্রি থেকে বিরত থাকতে সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে।
ঢাবির প্রক্টর অধ্যাপক মো. মাকসুদুর রহমান জানান, আইনশৃংখলা বাহিনীর সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে সব রকম সহযোগিতা করবো।
ছায়ানটে বর্ষবরণ
ষাটের দশকে পাকিস্তানিদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে রমনার বটমূলে যে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সূচনা করেছিল ছায়ানট, এখন তা বাঙালির নববর্ষ উদযাপনের অন্যতম প্রধান অনুসঙ্গ।
এবারও নববর্ষের প্রথম প্রভাতে, সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে এবং মানুষের জয়গানের মধ্য দিয়ে বাংলা নতুন বছরকে স্বাগত জানাবে সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র ছায়ানট। ভোরের আলো ফুটতেই আহীর ভৈরব রাগে বাঁশির সুরে এবারের নতুন বছর আবাহনের শুরু হবে। পুরো অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে নতুন স্নিগ্ধ আলোয় স্নাত প্রকৃতির গান, মানবপ্রেম-দেশপ্রেম আর আত্মবোধন-জাগরণের সুরবাণী দিয়ে।
এবারের বর্ষবরণে সম্মেলক গান ১১টি, একক গান ১৫টি, দুটি কবিতাসহ মোট ৩০টি আয়োজন থাকবে। ১৩ এপ্রিল রমনার বটমূলে প্রতিবছরের মতো ভোর ৬টা ১৫মিনিটে শুরু হবে এ আয়োজন।
একক গান শোনাবেন শাহীন সামাদ, খাইরুল আনাম শাকিল, চন্দনা মজুমদার, লাইসা আহমেদ লিসাসহ অনেকে। পাঠ ও আবৃত্তিতে অংশ নেবেন রামেন্দু মজুমদার ও জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়।’
ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক ও সঙ্গীতশিল্পী লাইসা আহমদ লিসা বলেন, ‘এবারের নববর্ষের প্রথম প্রভাতে আমরা মানুষের জয়গান করব। ভোগবাদ নয়, স্বার্থপরতা নয় মনুষ্যত্বকে পাওয়ার অভিলাষী ছায়ানটের আহ্বান, স্বাভাবিকতার সাধনা এবং সম্প্রীতির ধ্যান ‘দূর করো আত্মকেন্দ্রিকতা, আপনি জ্বালো এই তো আলো’ এই স্লোগান নিয়ে আমরা এবারের আয়োজন নিয়ে এগিয়ে যাবো।’
সময়ের নিষেধাজ্ঞা মানবে না সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট
বাঙালির সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হওয়া পহেলা বৈশাখ উদযাপনে কেন সময়ের বিধি নিষেধ, সেই প্রশ্ন তুলেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।
নিষেধাজ্ঞা ভেঙে এবার পহেলা বৈশাখে বিকাল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠান করার ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।
নাট্যব্যাক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, এই মঙ্গল শোভাযাত্রায় মানুষ যেন নির্ভয়ে আসতে পারে তার ব্যবস্থা যেমন করতে হবে। আবার নিরাপত্তার নামে যেন এটাকে দেখতে প্যারেডের মতো মনে না হয়। সেটিও ভাবতে হবে।
বিগত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা উল্লেখ তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরেই আমরা দেখছি নিরাপত্তার নামে পুরো শোভাযাত্রাটি ঘিরে থাকে আইনশৃংখলা বাহিনী, এটি দেখতে ঠিক শোভন হয় না। তাই অনুরোধ করবো, এবার যেন একটু দূর থেকে বা অন্য উপায়ে নিরাপত্তার ব্যাপারটি ভাবা হয়, নিরাপত্তার নামে আমরা যেন আবদ্ধ না হয়ে যাই। অন্য সব দিবসে তো এটি বলা হয় না। তবে নববর্ষে কেন সংক্ষিপ্ত করার এই নিয়ম বেধে দেওয়া? মানুষ যেন তার মতো আনন্দ করতে পারে, তার ব্যবস্থা করতে হবে।