বেইলি রোডে আগুন
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৫৮ পিএম
আপডেট : ১১ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:১৫ পিএম
ভিকারুননিসা মূল প্রভাতী শাখার সিনিয়র শিক্ষক লুৎফুন্নাহার করিম লাকী ও মেয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জান্নাতিন তাজরী নিকিতা। প্রবা ফটো
বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের আগুন এক নিমিষে সংসাররে সুখ-স্বাচ্ছন্দ কেড়ে নেয় এম এ এইচ গোলাম মহিউদ্দিন খোকনের। সেই আগুনে মারা যান তার স্ত্রী ভিকারুননিসা মূল প্রভাতী শাখার সিনিয়র শিক্ষক লুৎফুন্নাহার করিম লাকী ও মেয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জান্নাতিন তাজরী নিকিতা।
তাদের সেই সার্কিট হাউস রোডের বাসায় আছেন স্বামী এম এ এইচ গোলাম মহিউদ্দিন খোকন ও ছেলে সামান সাকিব। কথা হয় শিক্ষক লুৎফুন্নাহার লাকীর স্বামীর সঙ্গে। হাসি-আনন্দে মুখর প্রাণচঞ্চল শিক্ষকের বাসায় শুনশান নিরবতা। স্ত্রী মারা যাওয়ার তিন মাস আগে হার্টে সমস্যা ধরা পরে। তবে এখন রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছেন আরও বেশি।
মহিউদ্দিন খোকন বলেন, ‘মানসিকভাবে ভালো নেই কেউই। আত্মীয় স্বজন বাড়িতে আসে। ছেলেটা খুব ছোট ও এখনও কিছুই মেনে নিতে পারছে না। ঈদ আসছে আমরা বাবা-ছেলে পায়জামা পাঞ্জাবি কিনেছি। ছেলের জন্য তো ভাবতে হয়। মন খারাপ করে থাকে সবসময়।’
মেয়েকে হারানো শোক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি এই বাবা। তিনি বলেন, ‘ঈদের সময় শপিংটা মা-মেয়ে করত। মেয়েটার জন্য বেশি কষ্ট হয়। আমার এতো সাধারণ একটা মেয়ে। এত সুন্দর একটা মেয়ে ছিল কোনো চাহিদা ছিল না। এমন মেয়ে হয় না।’
আগের ঈদের সময়টার স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমরা সবাই ঢাকার বাসিন্দা। দেখা যেত আমাদের বাসা, ছোট ভাইয়ের বাসা, আম্মার বাসা এমন করেই দিনটা কেটে যেত। এবারের ঈদটাতো কষ্টের তবে কিছু টুকটাক কিনেছি। ইদ যখন আসছে, ছেলেটা আছে।’
কান্নারজড়িত কণ্ঠে তিনি বলতে শুরু করেন, ‘ও তো খুব পপুলার শিক্ষক ছিল। সবার প্রিয় লাকি টিচার ছিল ও। ওকে সবাই খুব ভালোবাসতো। মনের অবস্থাতো আর বলার কিছু নেই। এই শোক কেমন করে কাটাব।’
এদিকে ছোট ছেলেকে হারিয়ে এখনও স্বাভাবিক হতে পারেননি চাঁদপুরের বাসিন্দা বাবা ওলিউল্লাহ খান ও মা আমেনা বগেম। ছেলেকে হারানোর পর শারীরিকভাবেও অনেক অসুস্থ হয়ে পরেছেন তারা। এখনও সারাক্ষণ ছেলের কথা মনে করে হু হু করে কেঁদে উঠেন। কথা হয় মিনহাজের বড় ভাই মেহেদী হাসানের সঙ্গে।
সেদিন রাজধানীর বেইলি রোডে আগুনের ঘটনায় মারা যান কে এম মিনহাজ উদ্দিন। পেটে অস্ত্রোপচারের দাগ থেকে বড় ভাই আমিনুল ইসলাম তার মরদেহ শনাক্ত করেন। ফোনের ওপাশ থেকে কিছুক্ষণ স্কব্ধ থেকে বলেন, মানসিক অবস্থা কিভাবে ঠিক হবে? বাবার কাধে সন্তানের লাশতো চারটিখানি কথা না। বাবা-মা অসুস্থ তাই এখন আমি যাচ্ছি বড়িতে কখনো আমার বড় ভাই যায়। আগে তিন ভাই মিলে ঈদ করতাম এখন দুই ভাই করব।
তিনি বলেন, পরিবারে সবার ছোট ছিল মিনহাজ। বাব মা তাই ওকে খুব আদর করতো। সেজন্য কষ্টটাও বেশি। এই কষ্ট থেকে এখনও বেরুতে পারছেন না তারা। ইদ আর কিভাবে আসে এই পরিবারে আপনারা বুঝেন।