প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:১১ পিএম
আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:৪৭ পিএম
ঢাকার এফডিসিতে বুয়েটের চলমান অস্থিরতা নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রবা ফটো
ডাকসুর সাবেক ভিপি আখতারউজ্জামান এমপি বলেছেন, ‘আমরা ছাত্র সংসদ চাই, কিন্তু মারামারি হানাহানির ছাত্র সংসদ চাই না। ছাত্ররাজনীতি মানে শুধুমাত্র কয়েকটি স্লোগান নয়। ছাত্ররাজনীতির ধরন পাল্টাতে হবে।’
শনিবার (৬ এপ্রিল) ঢাকার এফডিসিতে বুয়েটের চলমান অস্থিরতা নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান ছাত্রদের রাজনীতির লক্ষ্য হওয়া উচিৎ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার প্রস্তুতির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে বিশ্ব প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়া। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির পর হলের সিট প্রদানের প্রতিশ্রম্নতির মাধ্যমে দলীয় কর্মী হিসেবে মিছিল মিটিংয়ে অংশগ্রহণে বাধ্য করা খারাপ দৃষ্টান্ত। বর্তমান ছাত্র রাজনীতির ধারা কী হবে- এ বিষয়ে জাতীয় সংসদও অবদান রাখতে পারে।’
আখতারউজ্জামান বলেন, ‘গত ৫ বছরে রাজনীতিমুক্ত বুয়েটে অনেক সফলতা যেমন রয়েছে তেমনি অতীতে রাজনীতি চলমান রেখেও বুয়েটের শিক্ষার্থীরা দেশে ও বিদেশে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে। বুয়েট অধ্যাদেশ ও নীতিমালা কী হবে তা নির্ধারণ করার অধিকার বুয়েট কতৃর্পক্ষের রয়েছে। বুয়েটের ছাত্ররা ক্লাস করবে, পরীক্ষা দেবে, যখন রাজনীতির প্রয়োজন হবে তখন রাজনীতিতে অংশ নেবে, এমন পরিবেশই প্রয়োজন। বুয়েটের ছাত্র সংসদ সবসময় তাদের মতো করেই হয়, সেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নয়। বর্তমান সমস্যার সমাধান ছাত্র-শিক্ষকসহ সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে হওয়া উচিৎ।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে ১০ দফা সুপারিশ করেন। সেগুলো হল-
১. উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে ছাত্র রাজনীতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি থাকবে কি থাকবে না সে বিষয়ে ভোটাভুটির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মতামত আদালতের কাছে তুলে ধরা।
২. শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার না বানানো।
৩. লেজুড়ভিত্তিক ছাত্র সংগঠন বা দলীয় পরিচয়ের পরিবর্তে ব্যক্তি পর্যায়ে অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্টুডেন্ট কেবিনেট নির্বাচন করা।
৪. বিগত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে সংঘটিত হত্যাকান্ড, যৌন হয়রানী, টেন্ডারবাজী, নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়মের বিচার দ্রুততম সময়ে করার লক্ষ্যে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা।
৫. বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সাদা-লাল-নীল-বেগুনী ইত্যাদি নামকরণের মাধ্যমে শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করা।
৬. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র্যাগিং, টর্চার সেল, হল দখল, সিট দখল, আদিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস দমনে কর্তৃপক্ষকে কঠোর হওয়া।
৭. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সকল মতাদর্শের শিক্ষার্থীদের হলে সহাবস্থান নিশ্চিত কর।
৮. শিক্ষক নিয়োগে রাজনৈতিক বিবেচনার পরিবর্তে যোগ্য মেধাবীদের শিক্ষকতায় আসার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া।
৯. আসন্ন বাজেটে উচ্চা শিক্ষা প্রদানকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য গবেষণা, বৃত্তি ও কো—কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিজের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো। এবং
১০. উচ্চ শিক্ষার মান বৃদ্ধিকল্পে ইংরেজি ভাষার উপর দক্ষতা বাড়ানো।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে “ছাত্র রাজনীতি শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের সহায়ক” শীর্ষক ছায়া সংসদে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর বিতার্কিকদের পরাজিত করে প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটি বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়।
প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মল্লিক, সাংবাদিক মাহবুব কবির চপল ও সাংবাদিক শামীমা সুলতানা। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র দেওয়া হয়।