প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২২ ১৬:০০ পিএম
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২২ ২১:১৫ পিএম
গণতন্ত্রের দাবিতে রাজপথে নেমে গুলিতে মারা যাওয়া নূর হোসেনের সেই বিখ্যাত ছবিটি তুলেছিলেন আলোকচিত্রী দিনু আলম।
এরশাদের পদত্যাগ এবং গণতন্ত্রের দাবিতে রাজধানীর সচিবালয়ের সামনে বিরোধী দলগুলোর ডাকা অবরোধে রাস্তায় নেমেছিল হাজার হাজার মানুষ। শহীদ হয়েছিলেন নূর হোসেন, যার বুকে বুকে পিঠে স্বৈরতন্ত্রের পতন আর গণতন্ত্রের দাবিতে লেখা ছিল শ্লোগান। গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার আগে তোলা নূর হোসেনের ছবি পরে হয়ে উঠে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক।
১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বরের সেই আন্দোলনের ৩৫ বছর পর একক ছবির ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করেন আলোকচিত্রী দিনু আলম।
বুধবার (৯ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এ ছবির প্রদশর্নী হয়।
অনুষ্ঠানে নির্মাতা ফুয়াদ চৌধুরী বলেন, ‘পাকিস্তানিরা তাদের মতো করে একাত্তরের অনেক বই লিখে ফেলেছে। কিন্তু বাংলাদেশে ইংরেজি বইয়ের সংখ্যা অনেক কম। দিনু শুধুমাত্র যে বাংলাদেশেই কাজ করেছেন তা না। কানাডায় গিয়েও এসব নিয়ে কাজ করেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে আরও অনেক কাজ করা বাকি আছে।’
আলোকচিত্রী দিনু আলম বলেন, ‘এই ছবিগুলো সম্পর্কে সবাইকে জানাতে ও ছবিগুলো সবার সামনে উপস্থাপন করতে চাই। নূর হোসেনের এই ছবিগুলো বাংলাদেশের অনেক বছরের ইতিহাস। আমার একটাই চাওয়া, আমার কোনো রয়্যালিটি লাগবে না, কিছুই লাগবে না, শুধু অনুরোধ চিত্রধারণের মূল্য যেন আমি পাই। সম্প্রতি নূর হোসেনকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয় বিবিসিতে। সেখানে ছবিগুলোর জন্য অনুমতি চাওয়া হয়। সেখান থেকে আমার আবার মাথায় আসে এসব ছবিতো উন্মুক্ত। এসব প্রদর্শনে আমার অনুমতি কেন লাগবে। শুধু আমি তুলেছি সেই নামটুকু যেন পাই। ছবিগুলো আমি ব্ল্যাকস ফটোগ্রাফি টরেন্টো থেকে আমি ডিজিটাল করেছি। মানুষকে আমি সব ছবি দিয়ে দিতে চাই।’
স্মৃতিচারণ করে দিনু বলেন, ‘সেদিন একটি ইয়াশিকা ক্যামেরা নিয়ে সারাদিন ঘুরছিলাম পল্টন-সচিবালয়-জিপিও এলাকায়। নূর হোসেনের যত ছবি আমি তুলেছিলাম, তার সবগুলোই সামনে থেকে। তার শরীরের পেছনেও যে গণতন্ত্র মুক্তি পাক বলে শ্লোগান লেখা ছিল সেটা আমার জানা ছিল না। নূর হোসেন যেরকম দৃপ্ত ভঙ্গীতে মিছিল করছিল, সেটা আমাকে আকর্ষণ করছিল।’
তিনি তার তোলা ছবিগুলো দেখিয়ে বলেন, ‘১৯৯১ সালে নূর হোসেনের ছবি দিয়ে ডাকটিকিট প্রকাশ করে। সেসময় আমার তোলা একমাত্র ছবি ছিল এটি।’
পুরোনো ক্যামেরার সেই ব্যগ, রিল, ক্যামেরাটি বার বার দেখিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, ‘৩৫ বছর আমি এই ক্যামেরায় কাউকে হাত লাগাতে দিইনি। এগুলো আগলে রেখেছি। ছবিগুলো ছাপাতে সেসময় অনেক পত্রিকার দ্বারপ্রান্তে গেলেও ছাপানো হয়নি।’
রিকশায় এক আহত ব্যক্তির বর্ণনা দিতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে যান এই আলোকচিত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি এই ছবিটা প্রথম অবস্থায় তুলতে পারিনি। ক্যামেরা হাত দিয়ে ক্লিক করতে পারছিলাম না। সে বিবস্ত্র অবস্থায় ছিল। আমি তাকে রিকশায় তোলার পর ছবিটা তুলেছি। আমার হাত কিছুক্ষণ কাজ করেছিল।’
এ সময় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, নির্মাতা ও দীপ্ত টিভির সিইও ফুয়াদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ খায়রুজ্জামান কামাল, ইলিয়াস খান।
আলোচিত্রী দিনু আলম কানাডায় বসবাস করেন। ১৯৮৭ সালে তিনি কাজ করতেন নতুন বার্তা নামের এক পত্রিকায়। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর এরশাদবিরোধী গণআন্দোলনের ৩৫টি ছবি তোলেন তিনি।
সে সময় নূর হোসেনের ছবি তোলায় দুইজন ব্যক্তির মাঝে একজন তিনি, যিনি বুকে পিঠে লেখা নূর হোসেনের সামনে থেকে ছবিগুলো তুলেছেন। যা পরে মানুষের কাছে নূর হোসেনকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।