× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পুরান ঢাকার বাণিজ্যে যানজটের প্রভাব

ফুটপাথ দখলদার মুক্তর পাশাপাশি সড়ক ওয়ান-ওয়ের দাবি ডিসিসিআইর

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:২১ পিএম

আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২৪ ২১:২৫ পিএম

পুরান ঢাকার ব্যবসা-বাণিজ্যে যানজটের প্রভাব ও উত্তরণের উপায় চিহ্নিতকরণ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় অতিথিরা। প্রবা ফটো

পুরান ঢাকার ব্যবসা-বাণিজ্যে যানজটের প্রভাব ও উত্তরণের উপায় চিহ্নিতকরণ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় অতিথিরা। প্রবা ফটো

যানজটের কারণে পুরান ঢাকার অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক গুরুত্ব প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদ। 

এ অবস্থা থেকে বের হতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কার্যকর ব্যবহার, পার্কিং সুবিধা নিশ্চিতকরণ, ফুটপাথ অবৈধ দখলদার মুক্ত করা, ওয়ান-ওয়ের পাশাপাশি আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু করা, সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্যপরিবহন নিশ্চিতকরণ এবং সর্বোপরি গৃহীত উদ্যোগ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছা একান্ত অপরিহার্য বলে তিনি মতপ্রকাশ করেন।     

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘পুরান ঢাকার ব্যবসা-বাণিজ্যে যানজটের প্রভাব ও উত্তরণের উপায় চিহ্নিতকরণ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এ ছাড়া ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান এবং ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার এ মতবিনিময় সভায় সম্মানিত অতিথি ছিলেন।   

অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বার সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, দেশের জিডিপিতে পুরান ঢাকার অবদান প্রায় ২০ শতাংশ হলেও, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, যানজট ও অপ্রতুল পরিসেবার জন্য এ এলাকার ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় নানাবিধ চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, রাজধানীর ঢাকার যানজটের কারণে দেশের সামগ্রিক জিডিপি প্রায় ২ দশমিক ৯ শতাংশ হ্রাস পায় এবং প্রতিদিন যনজটের কারণে নষ্ট হয়ে যাওয়া কর্মঘণ্টার আর্থিক মূল্য প্রায় ১৪০ কোটি টাকা। সড়কের খোঁড়াখুঁড়ি, অবৈধ ফুটপাথ দখল, অপরিকল্পিত গাড়ি পার্কিং, অপ্রতুল সড়ক অবকাঠামো ও অকার্যকর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কারণে বিশেষকরে পুরান ঢাকায় সৃষ্ট যানজট পরিস্থিতিতে ব্যবসা পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থা থেকে বের হতে স্মার্ট ট্রাফিক সিস্টেম চালুকরণ, নদীপথের ব্যবহার বাড়ানো এবং পুরান ঢাকার প্রধান সরু ও ব্যস্ত সড়কে একমুখী ট্রাফিক ব্যবস্থা চালুকরণের প্রস্তাব করেন ডিসিসিআই সভাপতি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ঢাকার অপরিকল্পিত নগরায়ণের জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী। নগরের অভিভাবক হিসেবে করপোরেশন নগর পরিকল্পনা গ্রহণ করবে এবং সেমতে করপোরেশন নানা উদ্যোগ নিয়েছে। নগরে জলাবব্ধতার বিষয়টিকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে এবং সম্প্রতি বেশকিছু খাল দখলমুক্ত করা হয়েছে, যার মাধ্যমে সামনের দিনগুলোতে এ সমস্যা কিছুটা হলেও লাঘব হবে। 

মেয়র জানান, বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত কেরানীগঞ্জে নতুন বাণিজ্যিক নগরী গড়ে তোলা হবে, সেই সঙ্গে চকবাজার ও মতিঝিলকে পুনরুজ্জীবিতকরণে উদ্যোগ নেওয়া হবে। সায়াদাবাদ বাস টার্মিনালকে আধুনিক সুবিধায় রূপ্তান্তরিত করা হয়েছে এবং এর উদ্বোধনের পর আর কেউ টার্মিনালের বাইরে বাস কাউন্টার স্থাপন করতে পারবে না। দোকানের সামনের হকারদের বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে না দেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।  


তিনি জানান, কোনো ধরনের কর বৃদ্ধি ছাড়াই সুশাসন নিশ্চিতকরার মাধ্যমে ২০২৩ সালে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ১০৩১ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছিল। ২০২০ সালে যার পরিমাণ ছিল ৫১২ কোটি টাকা।

তিনি আরও বলেন, রাজধানীতে যানজট নিরসন ও ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের শনাক্তকরণে ৬৪টি ইন্টারসেকশনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আইওটি) প্রযুক্তি স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

ঢাকার ফুটপাথ ও রাস্তা হতে হকারদের উচ্ছেদের বিষয় এত সহজ নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৮টি স্থানকে হলুদ ও সবুজ জোন হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যেখানে হকাররা তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য চালাতে পারবে। তবে করপোরেশনের চিহ্নিত লাল জোনে কেউ দোকান বসাতে পারবে না।  

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান বলেন, ঢাকা শহরে ব্যবহারযোগ্য রাস্তার পরিমাণ মাত্র ৫ শতাংশ, ফলে আমাদের রাস্তার ওপর গণমানুষ ও পরিবহনের চাপ অত্যাধিক। চকবাজার, মৌলভীবাজার, ছোট কাটরা ও বড়কাটরা, পাটুয়াটুলিসহ অন্যান্য এলাকায় যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। তা ছাড়া এসব এলাকায় পাইকারিবাজারগুলোতে পার্কিং সুবিধা না থাকার যানজট লেগে থাকে এবং গুলিস্তানে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল সরিয়ে নেওয়া গেলে যানজট আরও কমবে।

তিনি পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্থানে স্কাইওয়াক স্থাপন ও স্মার্ট পার্কিং চালুকরণের প্রস্তাব করেন। তিনি জানান, ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে ১৮টি স্টেকহোল্ডার রয়েছে, সবার মধ্যকার সমন্বয় বাড়ানো গেলে যানজট আরও কমনো সম্ভব হবে। 

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার বলেন, পুরান ঢাকার যানজটের নিরসনে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার অংশগ্রহণে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করতে হবে। এ ছাড়া এলাকায় গাড়ি পার্কিং, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, গণপরিবহন ও পণ্যপরিবহন ব্যবস্থার বিদ্যমান অবস্থা উত্তরণে বিশেষায়িত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে তিনি মত দেন।  

নির্ধারিত আলোচনায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সিইও মো. মিজানুর রহমান, যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহ উদ্দিন, ঢাক ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডর পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মো. আব্দুল বাকী মিয়া প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন। 

মো. মিজানুর রহমান বলেন, যানজট নিরসনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ইতোমধ্যে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা থেকে আন্তঃজেলা বাস টার্নিনালগুলো সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে এবং পোস্তাগলা থেকে গাবতলী পর্যন্ত একটি ইনার সার্কুলার রোড নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে,  যা বাস্তবায়িত হলে এ সমস্যা আরও নিরসন হবে। 

তিনি বলেন, ভূমি দস্যুদের হাত থেকে নদী ও খাল উদ্ধারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, এর ফলে পানি নিষ্কাশন এবং জলাবদ্ধতা দূরীভূত হবে। 

ড. এস এম সালেহ উদ্দিন বলেন, যানজট নিরসনে পুরান ঢাকায় কিছু কিছু রাস্তায় ওয়ান-ওয়ে কার্যক্রম চালুকরণ এবং বুড়িগঙ্গার নাব্য বাড়িয়ে নদীপথের ব্যবহার বাড়ানোর ওপর জোর দেন। 

মো. আব্দুল বাকী মিয়া বলেন, মেট্রোরেল-৬ বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় আড়াই থেকে ৩ লাখ যাত্রী পরিবহন করছে, যা যানজট নিরসনের পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।    

ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী এবং পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসহ পুরান ঢাকার বিশেষায়িত সমিতির প্রতিনিধি এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের মুক্ত আলোচনায় ডিসিসিআই সাবেক ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি আলহাজ আব্দুস সালাম, বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল হাসেম, বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলীমুজ্জামান আলম, বাংলাদেশ গ্লাস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ হোসেন আলমগীর, বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ গোলাম মওলা, এফবিসিসিআই’র পরিচালক হাফেজ হারুন, ডিসিসিআই’র সাবেক পরিচালক আলহাজ মোহাম্মদ শরফুদ্দিন এবং বাংলাদেশ ব্রেড বিস্কুট কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন অংশগ্রহণ করেন। আলোচকবৃন্দ চকবাজারের যানজট নিরসনে কমিউনিটি পুলিশের পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ, অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আহরণ বাড়ানো, পুরোনো জেলখানায় গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা চালুকরণ, পুরান ঢাকা হতে অন্যান্য স্থানে যাওয়ার জন্য মেট্রোরেল সেবা চালু, ব্যস্ততম সড়কসমূহে ওয়ান-ওয়ে ব্যবস্থা চালু, দিনের বেলায় পুরানো ঢাকায় কাভার্ড ভ্যানগুলোর চলাচল বন্ধ, বিশেষকরে লক্ষ্মীবাজার ও নবাবপুরসহ অন্যান্য এলাকার  ফুটপাথ হতে দোকান উচ্ছেদ এবং ধোলাইখালের ট্রাক স্ট্যান্ড অন্যত্র স্থানান্তরের ওপর জোরারোপ করেন।   

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা