মন্ত্রীসভার বৈঠক
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:০২ এএম
আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:৪৮ এএম
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার মন্ত্রীপরিষদের বৈঠকের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধকালীন স্বাধীন বাংলাদেশের স্ট্যাম্পের সংকলন ‘মুজিব ও মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উম্মোচন করেন। পিআইডি
বাংলাদেশের আমদানি ও রপ্তানি (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ১৯৫০ সালের। তবে এটি আর থাকছে না। বহু আলোচনা-সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে অবশেষে ৭৫ বছর পর যুগোপযোগী করে নতুন আইন প্রণয়ন হচ্ছে। এটির নাম ‘আমদানি ও রপ্তানি আইন, ২০২৪’। নতুন আইনে পণ্যের সঙ্গে সেবা খাত যুক্ত হচ্ছে। তবে বিদ্যমান আইনের মতো এবার ‘নিয়ন্ত্রণ’ শব্দটি রাখা হচ্ছে না।
সেবা অন্তর্ভুক্ত করে ‘আমদানি ও রপ্তানি আইন, ২০২৪’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। নতুন আইনানুযায়ী, সেবা আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হবে। সোমবার (১ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে নতুন আইন অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ও নিষিদ্ধকরণে ১৯৫০ সালের আইন আছে। পুরানো আইনগুলো পর্যায়ক্রমে যুগোপযোগী করার নির্দেশনা আছে। এজন্য নতুন আইনের খসড়া করা হয়েছে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আগের আইনের সঙ্গে নতুন কিছু বিষয় সংযুক্ত করা হয়েছে। আগে শুধু পণ্যের কথা বলা ছিল। এখন বাণিজ্যিকভাবে সেবা কার্যক্রমকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেবা আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে। কমোডিটির (পণ্য) পাশাপাশি সার্ভিসকে ( সেবা) যুক্ত করা হয়েছে।
খসড়া আইনে থাকা সেবার সংজ্ঞা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের অধীন জেনারেল এগ্রিমেন্ট অন ট্রেড ইন সার্ভিস চুক্তিতে বর্ণিত সংজ্ঞা অনুযায়ী যে কোনও সেবা।’
মাহবুব হোসেন বলেন, সরকার কোনও পণ্য বা সেবা নিয়ন্ত্রণ বা নিষিদ্ধ করতে পারবে। এ সম্পর্কিত আদেশ ও বিধিবিধান প্রণয়ন করতে পারবে। আমদানি ও রপ্তানি নীতি প্রণয়নের দায়িত্ব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া সভায় ‘পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা আইন, ২০২৪’, ‘বিদেশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা (স্থাবর সম্পত্তি অর্জন নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০২৪’ এবং ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (সংশোধন) আইন, ২০২৪’ এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ আইনগুলো গত সরকারের মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হলেও তা সংসদে বিল আকারে পাস হয়নি। ফলে এখন নতুন করে আইনগুলো মন্ত্রিসভার অনুমোদনের প্রয়োজন হচ্ছে।
বছরে ১৫ হাজার টাকা আয় হলেও বিধবা ভাতা পাওয়া যাবে
বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত ভাতা পাওয়ার বিদ্যমান শর্ত কিছুটা শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ ধরনের নারীদের মধ্যে যাদের বছরে আয় ১৫ হাজার টাকার নিচে, তারা এই ভাতার সুযোগ পাবেন। এত দিন ১২ হাজার টাকার নিচে হলে এই ভাতা পাওয়া যেত। গতকাল মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত ভাতা কর্মসূচি বাস্তবায়ন নীতিমালা ২০২৪’-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। তাতে ওই শর্ত শিথিল করা হয়েছে। বিধবা ভাতার আওতায় বর্তমানে সারা দেশে ২৫ লাখ ৭৫ হাজার নারীকে মাসে ৫৫০ টাকা করে দেওয়া হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আগের নীতিমালা অনুযায়ী এই ভাতা পাওয়ার যোগ্যতা হিসেবে বলা ছিল, তার ব্যক্তিগত বার্ষিক আয় ১২ হাজার টাকার নিচে হতে হবে। এখন ১৫ হাজার টাকার কম যাদের আয়, তারা এর আওতায় আসতে পারবেন। তবে ভাতার পরিমাণ এখনকার মতোই (মাসে ৫৫০ টাকা) থাকছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এখন এই ভাতার টাকা মোবাইল আর্থিক সেবার মাধ্যমে জি টু জি (সরকার থেকে সরাসরি ব্যক্তি) পদ্ধতিতে দেওয়ার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অনলাইনে আবেদন ও বাছাইয়ের বিষয়টিও প্রাতিষ্ঠানিক করা হয়েছে।
ঈদের ছুটি তিন দিনই থাকছে
মন্ত্রিসভার বৈঠকে জানানো হয়, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে ৮ ও ৯ এপ্রিল অফিস খোলা থাকবে। ফলে আগের ঘোষণা অনুযায়ী ঈদের ছুটি তিন দিনই থাকছে।
মন্ত্রিসভার একটি সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকারি ছুটি ৯ এপ্রিল এক দিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়নি মন্ত্রিসভায়। ফলে এবার ঈদের ছুটি আগের ঘোষণা অনুযায়ী, ১০ থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত তিন দিনই থাকছে। যদিও বাস্তবে সরকারি চাকরিজীবীরা ছুটি ভোগ করবেন আরও বেশি। কারণ, ১৩ এপ্রিল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। পরদিন রোববার পয়লা বৈশাখের ছুটি। এর মানে, টানা পাঁচ দিন ছুটির সুযোগ থাকছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও কার্যত ছুটি থাকবে।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকারি ছুটি (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে) ১০ থেকে ১২ এপ্রিল। তবে গত রবিবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ৯ এপ্রিল এক দিন ছুটি বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছিল। এদিকে পবিত্র শবে কদরের পর দিন, ৭ এপ্রিল সরকারি ছুটি। তার আগে ৫ ও ৬ এপ্রিল দুই দিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেছেন, এ বছরের রমজান ৩০ দিন ধরা হয়েছে। ৮ ও ৯ এপ্রিল অফিস খোলা থাকছে। তবে কেউ চাইলে ঐচ্ছিক ছুটি নিতে পারবেন।
তিনি বলেন, এবার রমজান মাস ৩০ দিন হলে ঈদুল ফিতর হবে ১১ এপ্রিল। ১১ এপ্রিলকে ঈদুল ফিতরের দিন ঠিক করে ছুটির তালিকা আগেই করেছে সরকার। সে হিসেবে ১০, ১১ ও ১২ এপ্রিল ঈদুল ফিতরের সরকারি ছুটি। পরদিন ১৩ এপ্রিল সাপ্তাহিক ছুটি। এর পরের দিন ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের ছুটি। এভাবে টানা পাঁচ দিন ছুটি থাকবে। এর আগেও ৭ এপ্রিল শবে কদরের ছুটি রয়েছে। শবে কদরের ছুটির পর ৮ ও ৯ এপ্রিল দুদিন অফিস খোলা। ১১ এপ্রিল ঈদ হলে বাড়ি যেতে মাত্র একদিন (১০ এপ্রিল) সময় পাওয়া যাবে। এর মধ্য দিয়ে এখন ১০ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত টানা পাঁচ দিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
আগের সরকারের তিন আইন মন্ত্রিসভায়:
মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা আইন, ২০২৪’, ‘বিদেশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা (স্থাবর সম্পত্তি অর্জন নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০২৪’ ও ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (সংশোধন) আইন, ২০২৪’ এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এ আইনগুলো গত সরকারের মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হলেও তা সংসদে বিল আকারে পাস হয়নি। তাই সরকার পরিবর্তনের কারণে নতুন করে আইনগুলো মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য এসেছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।