× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস আজ

অটিজম শিশুর জন্য চাই অনুকূল পরিবেশ

ফারহানা বহ্নি

প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২৪ ০০:১০ এএম

আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২৪ ১১:২০ এএম

অটিজম শিশুর জন্য চাই অনুকূল পরিবেশ

বয়স দুই বছর পেরিয়ে গেলেও আয়মান কথা বলত না। প্রথমে মা কিংবা বাবা ডাকতে শুরু করলেও পরবর্তীতে তা বন্ধ হয়ে যায়। এখন পাঁচ বছরে পা দিয়েছে সে। কিন্তু ক্ষুধা লাগলেও বলতে পারে না। নিজের কথা ব্যক্ত করতে না পারায় কখনও নিজেকেই খুব আঘাত করে সে। তাকে নিয়ে বেশি চিন্তা করেন মা সামিয়া হক। তিনি বলেন, প্রথম সন্তানের বয়স এখন ১২ বছর। ওর অটিজম যখন ধরা পড়ে তখন ডাক্তার বলেছিলেন, ওর মাত্রা কম। আমি অনেকটা সময় দিয়ে তাকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু পরের বাচ্চাটার অটিজমের মাত্রা বেশি। মাঝে মাঝে খুব কষ্ট পেয়ে গায়ে হাত তুলতাম। পরে নিজেরই কান্না পেত।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই মা বলেন, এ সমস্যা পুরোপুরি ঠিক করা সম্ভব না। তবে মাত্রাটা কমানোর জন্য আশপাশের মানুষের এ সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি। এ ধরনের শিশুরা নিজেদের আঘাত করে কিংবা কখনও ভায়োলেন্ট হয়। দীর্ঘ সময় কান্না করে। আত্মীয়-স্বজনসহ অনেকেই ধরে নেয় বাচ্চাকে মানুষ করতে পারিনি। অথবা বাচ্চার দিকে অন্যভাবে তাকায় তারা। 

তিনি আরও বলেন, স্কুলেও নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। অন্য শিশুদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় নানা রকম মানসিক সমস্যায় ভোগে শিশুটি। কারও পরিবারে অটিজম শিশু থাকলেই তার টনক নড়ে। এর বাইরে কতজন এ সম্পর্কে জানে বা খোঁজ রাখে? তাদেরও জানতে হবে বিষয়টি।

মানুষকে সচেতন করার জন্য প্রতিবছর পালন করা হয় বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। মঙ্গলবার সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে ১৭তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। অটিজম বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসটিতে এবারের প্রতিপাদ্য ‘সচেতনতা-স্বীকৃতি-মূল্যায়ন : শুধু বেঁচে থাকা থেকে সমৃদ্ধির পথে যাত্রা’।

‘ছেলের ভবিষ্যতের কথা ভাবলে বুকটা হু-হু করে ওঠে,’ বলছিলেন আট বছর বয়সি মাহিনের বাবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হাসান মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমাদের অনুপস্থিতিতে যেন ছেলেটা চলতে পারে এটাই চাই। এখন স্কুলে যাওয়ার কথা থাকলেও সে তার বয়স থেকে অনেকটাই পিছিয়ে।’ তিনি জানান, দুই বছর বয়স থেকে মাহিনের সমস্য বোঝা যায়। কারও কথায় সায় দিত না সে। এমনকি নিজের গায়ে অনবরত আঘাত করতে শুরু করে একসময়। তিন বছর বয়সে শনাক্ত করা যায় মাহিন অটিজমে আক্রান্ত। পাঁচ বছর ধরে ওর চিকিৎসা চলছে। ওকে ডাক্তার ওষুধ দিলেও তাতে কাজ হয় না। পরে দীর্ঘ সময় থেরাপি দেওয়া হয়। এতেও সুস্থ হচ্ছে না। সে সবসময় অস্থির থাকে। টয়লেটের চাপ এলেও মুখে বলতে পারে না। হাতের কাছে যা পায় তা দিয়ে ওয়ালে বা নিজেকে আঘাত করে। কান্না শুরু করলে দেড় ঘণ্টার আগে থামে না। অনেক সময় অনেকেই বিরক্ত হয়ে যায়। তখন বাচ্চাকে মারধর করি। পরবর্তীতে বুঝতে পারি আমার শিশুটা অবুঝ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু নিউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার কুণ্ডু বলেন, অটিজম একটি জেনেটিক সমস্যা। জন্ম থেকেই যেহেতু এই সমস্যা হয়, তাই এর সম্পূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব না। তবে তিন বছরের মধ্যে শনাক্ত করা সম্ভব হলে মাত্রাটা কমিয়ে আনা যায়। শিশুদের এই ব্রেনের বিকাশ মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় শুরু হয়, যা প্রথম পাঁচ বছর পর্যন্ত চলতে থাকে। এই বিকাশজনিত সময়ে একটি শিশু যদি আরেকটি শিশুর সাথে মিশতে না পারে, কথা বলতে অসুবিধা হয়, একটি কাজ বারবার করে, তখন ওই শিশুর মধ্যে অটিজম থাকতে পারে বলে ধরা হয়। মূলত এক বছরে শিশু কথা বলা শুরু করে, দুই বছরে দুটি শব্দকে মিলিয়ে বাক্য বলতে পারে। তিন বছরে ছড়া বলতে পারে। তাই এ সময়ের আগে রোগটি নির্ণয় করা কঠিন। এ ধরনের শিশুদের মনোযোগে সমস্যা হতে পারে, ছোট কোনো কাজে বিরক্ত হতে পারে, হাইপার অ্যাকটিভ হতে পারে।

গোপেন কুমার কুণ্ডু আরও বলেন, ‘রাগের মাত্রা কমাতে পরিবেশ অনেক বড় ভূমিকা রাখে। তাই পরিবারসহ আশপাশে সবার সচেতন হতে হবে। পরিবেশ অনুকূলে না থাকলে এ রোগের মাত্রা বেড়ে যায়। যার কারণে দেখা যায় শহর কিংবা হাইয়ার ক্লাস পরিবারে এ সমস্যা বেশি। অনুন্নত দেশের তুলনায় উন্নত দেশে অটিজম আক্রান্ত শিশুর হার অনেক বেশি। বাংলাদেশেও গ্রামের তুলনায় ঢাকা শহরে অটিজম আক্রান্ত শিশু অনেক বেশি। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চবিত্ত পরিবার ও ছোট একক পরিবারের মধ্যে সমস্যা বেশি। আবার এ রোগটি মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের মধ্যে বেশি। ছেলে ও মেয়ের মধ্যে এর অনুপাত ৪ : ১।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরো-ডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজমের ওয়েবসাইটে ২০২২ সালে প্রকাশিত হয় একটি গবেষণাপত্র। সেখানে বাংলাদেশের ৩০টি জেলার ৩৭ হাজার ৯৮২টি পরিবারের (৭১% গ্রামীণ, ২৯% শহুরে) ৩৮ হাজার ৪৪০ শিশুর ওপর সমীক্ষা চালানো হয়েছে। এতে দেখা যায় ছেলেদের অটিজমের উচ্চঝুঁকিতে পাওয়া গেছে (৪২৩ জন ছেলের মধ্যে ১ জন; ১০২৬ জন মেয়ের মধ্যে ১ জন)। গ্রামের তুলনায় শহরে এ ধরনের শিশু জন্মের হার বেশি। গ্রামে প্রতি ১০ হাজারে ১৪ জন ও শহরে প্রতি ১০ হাজারে ২৫ শিশু অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। দেশে ১৬ থেকে ৩০ মাস বয়সি শিশুর মধ্যে অটিজম বিস্তারের হার প্রতি ১০ হাজারে ১৭ জন।

অনুষ্ঠান

দিবসটি উপলক্ষে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তিদের সম্মানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নীলবাতি প্রজ্বালন করা হয়েছে। এছাড়া অটিজম বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে বিশেষ স্মরণিকা ও লিফলেট ছাপানো হয়েছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি প্রধান অতিথি থাকবেন। সভায় সভাপতিত্ব করবেন সমাজকল্যাণ সচিব মো. খায়রুল আলম সেখ।

পুরস্কার

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুষ্ঠানে পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৩টি পুরস্কার দেওয়া হবে। ক্যাটাগরি ‘ক’: অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সফল ব্যক্তি ক্যাটাগরিতে মুইদ হাসান, মোসাম্মৎ লায়লা বেগম, আহম্মেদ সিয়াম তন্ময়; ক্যাটাগরি ‘খ’: অটিজম নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান প্রয়াস, চট্টগ্রাম, অরুনোদয়, কল্যাণী ইনক্লুসিভ স্কুল; ক্যাটাগরি ‘গ’: প্রতিবন্ধিতা উত্তরণে কাজ করে এমন ব্যক্তিÑ অধ্যাপক ডা. মাহমুদ আহমেদ চৌধুরী আরজু, মো. সুমন মজুমদার, আলমগীর হোসাইন; ক্যাটাগরি ‘ঘ’: সফল পিতা-মাতা- আশরাফুন নাহার, মো. আশরার বিল্লাহ খান; ক্যাটাগরি ‘ঙ’: সফল কেয়ারগিভার মারজাহান বেগম, সাজেদা আক্তার।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা