প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০২৪ ২২:০১ পিএম
আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২৪ ২২:৩০ পিএম
বৃহস্পতিবার দুপুরে ধরলা সেতুর পূর্ব পাশে ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের মাধবরাম এলাকায় সফরসঙ্গীদের নিয়ে বিশেষ এ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করেন ভুটানের রাজা।
কুড়িগ্রাম সফরে এসে জিটুজিভিত্তিক প্রস্তাবিত ‘ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’-এর জন্য নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করেছেন ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক। বিশেষ এই অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘুরে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন রাজা। একই সঙ্গে তিনি আশা ব্যক্ত করেছেন— যত দ্রুত সম্ভব এখানে ভুটানের বিনিয়োগ শুরু হবে।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুরে ধরলা সেতুর পূর্ব পাশে ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের মাধবরাম এলাকায় সফরসঙ্গীদের নিয়ে বিশেষ এ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করেন ভুটানের রাজা। বেলা ৩টায় সড়কপথে জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলার সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে ভারত হয়ে ভুটানের উদ্দেশে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন ওয়াংচুক।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এ সময় তাকে বিদায় জানান।
প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শনের সময় ভুটানের রাজার সঙ্গে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী ছাড়াও তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য হামিদুল হক খন্দকার, কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সংসদ সদস্য বিপ্লব হাসান পলাশ, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ, পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম পৌর মেয়র কাজিউল ইসলামসহ অন্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ছিলেন।
পরিদর্শন শেষে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ পরিদর্শন করে ভুটানের রাজা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। অর্থনৈতিক অঞ্চলসংলগ্ন যাতায়াত ব্যবস্থা ও পোর্ট কানেক্টিভিটি নিয়েও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। উল্লিখিত জিটুজি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য রাজা তার সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরুর পাশাপাশি সকল সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। এ ছাড়া বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিতকরণে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানান রাজা। উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হলে পুনরায় বিশেষ এ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনের আগ্রহ ব্যক্ত করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে সড়কপথে কুড়িগ্রাম সার্কিট হাউসে পৌঁছান ভুটানের রাজা। তার আগমন ঘিরে সকাল থেকেই জেলার মানুষের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করে। তাকে একনজর দেখার জন্য সড়কের দুই ধারে উৎসুক জনতার ভিড় দেখা যায়। তবে প্রশাসনের নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তায় কাছে যেতে পারেনি সাধারণ মানুষ।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘ভুটানের রাজার আগমনে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই আমরা সুষ্ঠুভাবে সকল আয়োজন সম্পন্ন করতে পেরেছি।’
বাংলাদেশ-ভুটান দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে ধরলায় ২১৯ একর জায়গাজুড়ে জিটুজি ভিত্তিতে গড়ে তোলা হবে এ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল।
কুড়িগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আব্দুল আজিজ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ধরলার পাড়ে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হলে সড়ক, নদী ও রেলপথের সুবিধা মিলবে। এ অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হবে।’
গত বছরের মে মাসে লন্ডন সফরে ভুটানের রাজার সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সাক্ষাতে কুড়িগ্রামে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের বিষয়ে ভুটান সরকারের পক্ষ থেকে আগ্রহ ব্যক্ত করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় কুড়িগ্রামে ভুটানের বিনিয়োগকারীদের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার ও ভুটান সরকারের মধ্যে যোগাযোগ শুরু হয়।
২৫ মার্চ ভুটানের রাজার বাংলাদেশে এই সফরে দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়। এর মধ্যে একটি হলো—কুড়িগ্রামে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা।
২৭ মার্চ ভুটানের মহামহিম রাজা ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুনের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়। আলোচনায় উভয় পক্ষই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের বিষয়ে দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করে।
আলাপে এই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে স্থানীয় ও আঞ্চলিক চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন ভুটানের রাজা। একই সঙ্গে জানান, ভুটান থেকে এ বিষয়ে একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল বিনিয়োগের তথ্যউপাত্ত সংগ্রহে শিগগির বাংলাদেশে আসবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে জনসভায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারী সড়কের পাশে অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হলে অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটবে, কুড়িগ্রামে কমবে দারিদ্র্য— এমন প্রত্যাশা জেলাবাসীর।