× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সংসদের ভোটে এলেও অনাগ্রহ উপজেলায়

কাজী হাফিজ

প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২৪ ০৮:১৫ এএম

আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৪ ১১:২০ এএম

সংসদের ভোটে এলেও অনাগ্রহ উপজেলায়

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছোট এবং ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিত নতুন দলগুলো উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় প্রার্থী দিলেও আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না তারা। এ নির্বাচনে প্রার্থীদের জামানতের পরিমাণ ১০ গুণ বাড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টিও অন্যতম একটি কারণ। দলগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যাদের আর্থিক সামর্থ্য এবং জনপ্রিয়তা রয়েছে তারাই প্রার্থী হবেন। এ নির্বাচনে দলের মনোনয়নের প্রয়োজন নেই। এ ছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশে এখন নির্বাচনের পরিবেশ নেই। কখনও সে ধরনের পরিবেশ এলে প্রার্থী দেওয়ার কথা চিন্তা করা হবে। তবে পরিস্থিতি যা-ই হোক, নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের তরফে বলা হচ্ছে, গতবারের মতো এবার বিনা ভোটে জনপ্রতিনিধি হওয়ার সম্ভাবনা কম। 

বিদ্যমান আইনে উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান- এই তিন পদেই রাজনৈতিক দল থেকে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার বিধান রয়েছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) এরই মধ্যে যেসব রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে প্রার্থী দিতে চায় সেসব দলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের পদাধিকারীদের অথবা তাদের কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্তদের স্বাক্ষরসহ তালিকা চেয়ে পাঠিয়েছে। 

কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে। রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি গত উপজেলা নির্বাচনের মতো এবারও দলগতভাবে অংশ না নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। তবে দলটির কেউ স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নিলে তার বিরুদ্ধে দল কতটা কঠোর হবে, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি গতবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে মাত্র তিনটি উপজেলায় সফল হয়েছিল। এবারও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা দলীয় প্রতীকে অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা জিএম কাদের। গত ৯ ফেব্রুয়ারি রংপুর শহরে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমরা দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নেব। প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়েছে।’ 

অন্য রাজনৈতিক দলগুলো যা বলছে

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছোট এবং কিংস পার্টি হিসেবে পরিচিত দলগুলো অনেক প্রার্থী দিলেও তাদের মধ্যে কয়েকজন ছাড়া বেশিরভাগেরই জামানত রক্ষা হয়নি। তৃণমূল বিএনপি থেকে ১৩৫ জন প্রার্থী সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আসন্ন উপজেলা নির্বাচন সম্পর্কে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) ডা. শেখ হাবিবুর রহমান বলেন, শমসের মবিন চৌধুরী ও তৈমূর আলম খন্দকারের ভুল নেতৃত্বের কারণে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন পেতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। তৃণমূল বিএনপি এখন অগোছালো অবস্থায় রয়েছে। দলের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা উপজেলা নির্বাচন নিয়ে ভাবছি না।

সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের ৬৩ জন প্রার্থী ছিলেন। এদের কেউ জিততে পারেননি। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলটি থেকে প্রার্থী দেওয়া হবে কি না, এ প্রশ্নে দলের সভাপতি আবু লায়েস মুন্না বলেন, দল থেকে কয়েকজন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে চেয়ে যোগাযোগ করেছেন। তবে এবার চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামানতের পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণে আমরা হয়তো বেশি প্রার্থী দিতে পারব না। 

ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) সংসদ নির্বাচনে ১৪২ জন প্রার্থী দিয়েছিল। তাদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন ১২২ জন। তাদের প্রায় সবাই জামানত হারিয়েছেন। দলটির চেয়ারম্যান শেখ ছালাউদ্দিন ছালু বলেন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি না। 

বাংলাদেশ কংগ্রেসের ৯৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। দলটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট কাজী রেজাউল হোসেন বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ফলপ্রসূ হয় না। এ ছাড়া উপজেলা নির্বাচনে এবার প্রার্থীদের জামানতের টাকার পরিমাণ অনেক বাড়ানো হয়েছে। এসব কারণে আমরা এ নির্বাচনে অংশ নিতে না-ও পারি।

নতুন দল সুপ্রিম পার্টির ৭৯ জন প্রার্থী সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন। দলটির দপ্তর সম্পাদক শাহ্‌ মুহাম্মদ ইব্রাহিম মিয়া বলেন, উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থী দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে সুপ্রিম পার্টি এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীদের জন্য যেভাবে জামানতের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে, তাতে ছোটখাটো রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সংকট সৃষ্টি হবে বলেই মনে করি।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএমের ৫৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন। দলটির প্রতিষ্ঠাতা ড. আবদুর রহমান বলেন, এবারের উপজেলা নির্বাচনে যাদের আর্থিক সামর্থ্য এবং জনপ্রিয়তা আছে তারা প্রার্থী হবেন। আমাদের দল থেকে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না।

বামদলগুলোর অনেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। উপজেলা নির্বাচনেও তারা একই অবস্থানে থাকবে। বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, বাংলাদেশে এখন নির্বাচনের নামে প্রহসন চলছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে প্রহসন চলেছে তারই ধারাবাহিকতায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এবারের উপজেলা নির্বাচন। এ নির্বাচনে প্রার্থীদের জামানতের পরিমাণ ও নির্বাচনী ব্যয়সীমা বাড়িয়ে দিয়ে প্রহসনের নতুন মাত্রা যোগ করা হয়েছে। তবে আমরা স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার পক্ষে। পরিবেশ তৈরি হলে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে ভাবব। 

গতবারের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়নি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সেসময় দলটির আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, শতভাগ প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ অংশ নেবে না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলটি কোনো প্রার্থী দেয়নি। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়া হবে কি না, এ প্রশ্নে দলের গণমাধ্যমবিষয়ক সমন্বয়ক ও ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সভাপতি শহীদুল ইসলাম কবীর বলেন, ‘দল থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়া হবে না।’ এ ছাড়া এ দল সমর্থিত সংগঠন ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল থেকে উপজেলা নির্বাচনে জামানত বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলা হয়, ‘সৎ মানুষেরা যাতে এ নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে তার জন্যই জামানত ১০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা করার প্রস্তাব রেখেছে নির্বাচন কমিশন। এটা অস্বাভাবিক ও বাস্তবতাবিবর্জিত।’ 

এবার বিনা ভোটের জনপ্রতিনিধি হওয়ার সম্ভাবনা কম 

সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন, জামানত বৃদ্ধির কারণে এবার প্রার্থী সংখ্যা কম হলেও গতবারের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বা বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা না-ও ঘটতে পারে। গতবার প্রায় ১০০টি উপজেলায় ক্ষমতাসীন দলের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা ব্নিা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ৩৪টি উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানÑএ তিন পদেই প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এসব উপজেলায় ভোটের প্রয়োজন হয়নি। 

ড. বদিউল আলম মজুমদার আরও বলেন, এবারের উপজেলা নির্বাচনের পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। এ নির্বাচন কেমন হবে, সে সম্পর্কে আগাম কিছু বলা যায় না। সরকারি দল এ নির্বাচনে কাউকে দলীয় মনোনয়ন দেবে না। প্রার্থীদের জামানতের পরিমাণও বহু গুণ বাড়ানো হয়েছে। তবে মনে হচ্ছে, গতবারের মতো এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে কোন্দল রয়েছে। জামানতের পরিমাণ বাড়ানো হলেও এই দল থেকে একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকতে পারেন।

প্রসঙ্গত ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদের পঞ্চম সাধারণ নির্বাচনে ৪৫৫টি উপজেলার মধ্যে ৩০২টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা চেয়ারম্যান পদে জয়ী হন। অন্য ১৫৩টি উপজেলার ১৪৫টিতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এসব স্বতন্ত্র প্রার্থী বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী। অন্যান্য দলের মধ্যে জাতীয় পার্টি তিনটিতে, জাতীয় পার্টি (জেপি) একটিতে এবং বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত চারজন উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী কয়েকটি দল ছাড়া অন্য দলগুলো অংশ নেয়নি। গতবার ২০১৯ সালের ১০ মার্চ থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত পাঁচ ধাপে ৪৫৫টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ হয়। ১৪টি উপজেলায় ভোট হয় ইভিএম বা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে। তার আগে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদের চতুর্থ সাধারণ নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না হলেও ৪৫৮ উপজেলায় আওয়ামী লীগের ২২৩ জন (বিদ্রোহীসহ) প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। অন্যদিকে এ পদে বিএনপির ১৫৮ জন (বিদ্রোহীসহ) এবং জামায়াতের ৩৬ জন নির্বাচিত হন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি (জাপা) সমর্থিত ৩ জন ও অন্যান্য দল সমর্থিত ৩৮ জন চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন।

এবার আগামী ৮ মে থেকে ৫ জুন পর্যন্ত চার ধাপে ভোটগ্রহণ হবে। ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে ২১ উপজেলায়। এগুলো হচ্ছেÑসিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি ও কাজিপুর; পাবনার সাঁথিয়া, সুজানগর ও বেড়া; যশোরের মনিরামপুর ও কেশবপুর; পিরোজপুরের সদর, নাজিরপুর ও ইন্দুরকানী; মানিকগঞ্জের সিংগাইর ও হরিরামপুর; শরীয়তপুরের নাড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ; জামালপুরের সদর ও সরিষাবাড়ী; চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ এবং কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, সদর ও মহেশখালী।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা