× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আজ সেই ভয়াল কালরাত

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৪ ০০:০৫ এএম

আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২৪ ১০:৫৫ এএম

আজ সেই ভয়াল কালরাত

আজ ২৫ মার্চ, ভয়াল সেই গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই রাতে বাংলাদেশের জনগণের ওপর নেমে এসেছিল এক ভয়ংকর বিভীষিকা। বাঙালি জনগোষ্ঠীর স্বাধিকারের দাবিকে চিরতরে মুছে দিতে ওইদিন মধ্যরাতে ঢাকাসহ এই ভূখণ্ডের নিরস্ত্র জনতার ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী। তাদের পূর্বপরিকল্পিত ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর বলি হতে হয়েছিল সেদিন অসংখ্য মানুষকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মানবসভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কিত গণহত্যার ঘটনা এটি। একাত্তরের মার্চজুড়ে স্বাধীনতা ও মুক্তির লক্ষ্যে অসহযোগ আন্দোলন করার পর ২৫ মার্চের কালরাতে গণহত্যার শিকার বাঙালি জাতি এরপর অবতীর্ণ হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে। নয় মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা করে মুক্ত, স্বাধীন বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার প্রাক্কালের এই গণহত্যার ভয়াল দিনটিকে ‘জাতীয় গণহত্যা দিবস’ হিসেবে স্মরণ করে আসছে এদেশের জনগণ। অন্যান্য বছরের মতো এবারও ২৫ মার্চের কালরাতে ১ মিনিট অন্ধকারে (ব্ল্যাক আউট) থাকবে সারা দেশ। কালরাতের প্রথম প্রহর স্মরণে রাত ১১টা থেকে ১১টা ১ মিনিট পর্যন্ত জরুরি স্থাপনা ছাড়া সারা দেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করা হবে।

‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর নির্দেশনামা তৈরি করেছিল পাকিস্তানের দুই সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। নির্দেশনামার কোনো লিখিত নথি রাখা হয়নি। গণহত্যার সেই পুরো নির্দেশ মুখে মুখে ফরমেশন কমান্ডার বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হয়। ২০১২ সালে পাকিস্তানের মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজার ‘আ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি’ নামে আত্মজীবনী প্রকাশ পায়। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত এই গ্রন্থে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ পরিকল্পনা প্রণয়নের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে রাজা লিখেছেন, ‘১৭ মার্চ, সকাল প্রায় ১০টা বাজে। টিক্কা খান আমাকে ও মেজর জেনারেল ফরমানকে কমান্ড হাউসে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে খবর পাঠান। খবর পেয়ে আমরা দুজন টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করি। গিয়ে দেখি, সেখানে জেনারেল আবদুল হামিদ খানও রয়েছেন। টিক্কা খান আমাদেরকে বলেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শেখ মুজিবের সমঝোতা আলোচনা ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট চান আমরা যেন সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করি এবং সে অনুযায়ী একটা পরিকল্পনা তৈরি করি। এ ছাড়া আর কোনো মৌখিক বা লিখিত নির্দেশনা আমরা পাইনি। আমাদের বলা হয়, পরদিন ১৮ মার্চ বিকালে আমরা দুজন যেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ওই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করি।’ পরদিন সকালেই খাদিম হোসেন রাজা তার কার্যালয়ে রাও ফরমান আলীকে নিয়ে বসেন। তারাই গণহত্যার এ অভিযানের নাম দেন অপারেশন সার্চলাইট।

মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মার্চের রাত সম্পর্কে লিখেছেন, ‘সেই রাতে ৭০০০ মানুষকে হত্যা করা হয়, গ্রেপ্তার করা হলো আরও ৩০০০ লোক। ঢাকায় ঘটনার শুরু মাত্র হয়েছিল। এরপর পূর্ব পাকিস্তানজুড়ে সৈন্যরা বাড়িয়ে চলল মৃতের সংখ্যা। জ্বালাতে শুরু করল ঘরবাড়ি, দোকানপাট। লুট আর ধ্বংস যেন তাদের নেশায় পরিণত হলো। রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো কাক-শেয়ালের খাবারে পরিণত হলো। সমস্ত বাংলাদেশ হয়ে উঠল শকুনতাড়িত শ্মশান ভূমি।’

পাইকারি এই গণহত্যার স্বীকৃতি খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেও রয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের সংকট সম্পর্কে যে শ্বেতপত্র পাকিস্তান সরকার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রকাশ করেছিল, তাতে বলা হয় ‘১৯৭১ সালের পয়লা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত ১ লাখেরও বেশি মানুষের জীবননাশ হয়েছে।’

১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পরও আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তানি জান্তা দেশের শাসনভার হস্তান্তর না করায় রাজনৈতিক অচলাবস্থা দেখা দেয়। শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। এই আন্দোলনকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে পাকিস্তানি সেনারা ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নাম দিয়ে গণহত্যা সংঘটিত করে। এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা। 

লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএকে নিয়াজির জনসংযোগ অফিসারের দায়িত্বে থাকা সিদ্দিক সালিকের ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ গ্রন্থেও এ-সংক্রান্ত বিবরণ পাওয়া যায়। সিদ্দিক সালিক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জেনারেল নিয়াজির পাশেই ছিলেন। ২৫ মার্চ, অপারেশন সার্চলাইট শুরুর মুহূর্ত নিয়ে তিনি লেখেন ‘নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সামরিক কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। এমন আঘাত হানার নির্ধারিত মুহূর্ত (এইচ-আওয়ার) পর্যন্ত স্থির থাকার চিহ্ন বিলুপ্ত হয়ে গেল। নরকের দরজা উন্মুক্ত হয়ে গেল।’

পাকিস্তানি সেনাদের হত্যা-নৃশংসতা থেকে সেই রাতে রক্ষা পায়নি রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও। ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৯ জন শিক্ষককে সেই রাতে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। গুরুতর আহত ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার মৃত্যু ঘটে ৩০ মার্চ। বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে চলে নৃশংস গণহত্যার সবচেয়ে বড় ঘটনা। এখানে হত্যাযজ্ঞ চলে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত।

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অপারেশন সার্চলাইট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সকল পদক্ষেপ চূড়ান্ত করে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করে করাচি চলে যান। সেনা অভিযানের শুরুতেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে। তার আগে ২৬ মার্চ (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যেকোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধ শেষে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় পূর্ণ বিজয়। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের।

গণহত্যা দিবসে নানা কর্মসূচি

যথাযোগ্য মর্যাদায় গণহত্যা দিবস পালনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে আজ সোমবার বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এদিন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ‘পলিটিক্স অব জেনোসাইড রিমেম্বারেন্স’ শীর্ষক বিশেষ বক্তৃতা এবং প্রদর্শনী আয়োজন করেছে। বেলা ১১টায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে মূল বক্তব্য প্রদান করবেন লেমকিন ইনস্টিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশনের পরিচালক ড. এলিসা ভন ফরগে। প্রধান অতিথি থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হক। 

রাত ৯টায় গণহত্যার কালরাতে ‘আলোর মিছিল’ করবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। বেলা ২টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের আলোচনা সভা। এতে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকবেন। বেলা সাড়ে ৩টায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা ভবনে অনুষ্ঠিত হবে গণহত্যা দিবস উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমির সংলাপ। 

রাজধানী ছাড়াও সারা দেশে গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গীতিনাট্য এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গণহত্যার স্মৃতিচারণা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশনে গণহত্যার দুর্লভ আলোকচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী করা হবে। কালরাতে নিহতদের মাগফিরাত কামনা করে এদিন বাদ জোহর বা সুবিধাজনক সময় দেশের সব মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং অন্যান্য উপাসনালয়ে প্রার্থনা করা হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে একই কর্মসূচি পালন করা হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা