আমিনুল ইসলাম মিঠু
প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৪ ২৩:০৩ পিএম
আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২৪ ০০:২০ এএম
ঈদের সময় সড়ক পথে গাড়ির চাপ বেড়ে গিয়ে যানজটে মাটি হয়ে যায় ঘরে ফেরার আনন্দ। ঢাকা থেকে ৬-৭ ঘণ্টার গন্তব্যে পৌঁছতে ১০ থেকে ১৫ ঘণ্টা, কখনও তারও বেশি সময় লেগে যায়। অন্যদিকে আকাপথে সহজেই পৌঁছানো যায় যেকোনো গন্তব্যে। তাই ঈদযাত্রায় গত কয়েক বছর ধরে গুরুত্ব বাড়ছে আকাশপথের। তবে সচ্ছল ব্যক্তিদের মধ্যে নির্ঝঞ্ঝাট ভ্রমণের আকাঙ্ক্ষা বাড়ায় এই পথেও এখন চাপ বেড়েছে। ফলে ঈদের সময় আকাশপথে ভ্রমণে গুনতে হয় অতিরিক্ত ভাড়া। এবারও একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে। ঈদের আগে বিভিন্ন রুটের ৭০ শতাংশ টিকিট বিক্রি শেষ করেছে দেশীয় এয়ারলাইনসগুলো। ঈদের পরের টিকিটও অধিকাংশই বিক্রি হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঈদের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে টিকিটের দামও। এ সময় আড়াই বা তিন হাজার টাকার টিকিট কিনতে হয় ১২ থেকে ১৫ হাজারে। প্রতি বছর দুই ঈদের আগে-পরে মিলিয়ে ১০-১২ দিন বিশেষ চাপ থাকে বিমানের টিকিটে। এয়ারলাইনসগুলো বলছে, চাহিদা ও সরবরাহে ঘাটতি থাকায় দাম বাড়ে টিকিটের। চাহিদা বেশি থাকায় ঢাকা থেকে অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রুটে বিমানে টিকিটের দাম হয়ে যায় কয়েকগুণ। তবে এ বছর থাকছে বাড়তি ফ্লাইট ও অফার।
এভিয়েশন খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে বেশি চাহিদা রয়েছে ঢাকা থেকে কক্সবাজার, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে সিলেট রুটে। তবে পদ্মা সেতু হওয়ায় বরিশাল, সৈয়দপুর ও যশোর রুটে আকাশপথে যাত্রীর চাপ অনেকাংশে কমেছে। ফলে এই রুটগুলোতে ফ্লাইট পরিচালনাও কমিয়েছে এয়ারলাইনসগুলো।
জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন এয়ারলাইনসের পাশাপাশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীরা টিকিটের মূল্যে পাচ্ছেন আকর্ষণীয় ছাড়। ১০ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ ছাড়ে কিনতে পারছেন বিমানের টিকিট।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্যান্য বছরের মতো এবারও ঈদকে কেন্দ্র করে বেড়েছে আকাশপথে যাত্রীর চাপ। এরই মধ্যে অভ্যন্তরীণ রুটের বিভিন্ন গন্তব্যের টিকিটের ৭০ শতাংশ বিক্রি শেষ। তবে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার কিছুটা সুলভে মিলছে টিকিট। এরই মধ্যে ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাগুলো।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক মো. কামরুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, এরই মধ্যে ৭০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। বাকি টিকিটগুলো ২০ রোজার আগেই বিক্রি হয়ে যাবে বলে আশা করছি। আমরা এখন দেশের বিভিন্ন রুটে প্রতিদিন ৬০টি ফ্লাইট পরিচালনা করছি। এগুলো দিয়ে এবারের ঈদের চাপ সামাল দেওয়া হবে। তবে প্রয়োজন হলে পরবর্তীকালে ফ্লাইটসংখ্যা বাড়ানো হতে পারে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সূত্রে জানা গেছে, এবারের ঈদে যাত্রী চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে ৩০-৩৫টি অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারে সংস্থাটি। এ ছাড়া কয়েকটি গন্তব্যে টিকিটেও বিশেষ ছাড় দিতে পারে তারা।
নভো এয়ারের একজন কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন গন্তব্যে ঈদের আগের ৬০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয়েছে। তবে এবার রাজশাহী ও সৈয়দপুরের টিকিটের চাহিদা বেশি। আর ঈদের পরে কক্সবাজার রুটে বেশি চাহিদা রয়েছে টিকিটের। এই রুটের ৬০ শতাংশের বেশি টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।
অভ্যন্তরীণ রুটের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে ঈদের আগে ও পরে টিকিটের চাপ রয়েছে বলে জানিয়েছে উড়োজাহাজ ও ট্রাভেল এজেন্সিগুলো। তারা জানায়, বিশেষ করে ঢাকা থেকে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপসহ পর্যটনসমৃদ্ধ দেশগুলোতে ঈদের সময় বেড়াতে যান অনেক বাংলাদেশি। প্রতি বছরের মতো এই বছরও একই রকম চাপ রয়েছে। ট্রাভেল এজেন্সিগুলো বলছে, ঈদের আগ মুহূর্তে ভ্রমণকারীদের চাপ বাড়তে থাকে। এজন্য টিকিট ও ভ্রমণ প্যাকেজের দামও বেড়ে যায়।
এশিয়ান ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহজাহান লিটন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, দেশের ভেতর আটটি গন্তব্যে আকাশপথে যাতায়াত বেশি করেন ভ্রমণকারীরা। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও সিলেট রুটে টিকিটের চাহিদা বেশি থাকে। বিশেষ করে কক্সবাজার, সিলেটের টিকিটের চাহিদা বেড়ে যায়। এ বছর ঈদের ছুটিতে দেশের ভেতর কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান, সিলেট, সুন্দরবন ও সাজেকে প্যাকেজ ট্যুরের চাহিদা বেশি দেখা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ঈদের দুদিন আগে থেকে ঈদের পর ১০ দিন পর্যন্ত বিদেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ছুটি কাটাতে ভ্রমণকারীদের আগ্রহ অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বেশিই বলা যায়। মালয়েশিয়া, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুরের পাশাপাশি এ বছর মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা নিয়েও ভ্রমণকারীদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। তাই এই সময়ে রুটগুলোর বিমান ভাড়া স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি। যেহেতু চাহিদা বেশি থাকে, তাই সেই সুযোগে এয়ারলাইনসগুলো টিকিটের দাম বাড়িয়ে দেয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।