বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৪ ২৩:২৮ পিএম
অধ্যাপক সুগত বসু। সংগৃহীত ফটো
‘ইংরেজ শাসনের সময় বহু হিন্দু নেতা ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলেছিলেন। সে সময় হিন্দু ও মুসলিমদের এক করতে পারলে ইংরেজদের তিক্ততা এতটা বাড়ত না। বঙ্গবন্ধু এ ব্যাপারটি লক্ষ্য রেখে মুক্তিযুদ্ধ এবং তার পরবর্তী সময়ে হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে সুসম্পর্ক সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন। যে কারণে ১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কোনো প্রটোকলের তোয়াক্কা না করে নেতাজির মূর্তিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের জন্য কলকাতায় চলে আসেন।’
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের কিংবদন্তি নেতা সুভাষ চন্দ্র বসুর ভ্রাতুষ্পুত্র শিশির কুমার বসু ও তার স্ত্রী কৃষ্ণা বসু এবং বঙ্গবন্ধুর মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে যে অবদান রেখেছেন তার বিস্তারিত তুলে ধরলেন তাদের ছেলে অধ্যাপক সুগত বসু। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওশেনিক হিস্ট্রি অ্যান্ড অ্যাফেয়ার্স বিভাগের গার্ডিনার প্রফেসর সুগত বসু শুক্রবার (২২ মার্চ) সকালে ঢাকায় এসেছেন। বিকালে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও স্মৃতি সংরক্ষণ’ শিরোনামে একক বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
ইতিহাসবিদ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সুগত বসু মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের স্মৃতিচারণ করে বলেন, “কলকাতায় অবস্থিত স্মারক ভবন ও গবেষণা কেন্দ্র ‘নেতজি ভবন’ ১৯৭১ সালে হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে, কর্মযজ্ঞের একটি প্রাণকেন্দ্র। তখন আমি ক্লাস টেনের ছাত্র। ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়ের খবর আমাদের রোমাঞ্চিত করেছিল। সে সময় কলকাতায় টেলিভিশনের তেমন প্রচলন ছিল না। তাই রেডিওতে খোঁজ রাখতাম।’
‘৭১-এর মে মাসে ভারতের বনগাঁ সীমান্তের কাছে সুগত বসুর বাবা শিশির কুমার বসু নেতাজি ফিল্ড হাসপাতাল নামে ২৫ শয্যার একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে সত্যেন বসুর নেতৃত্বে কলকাতার শল্য চিকিৎসক আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করতেন। অর্থোপেডিক্সের দিনটা দেখতেন অশোক সেন গুপ্ত।
সুগত বসু বলেন, “১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতার ময়দানে বাঙালির অসামান্য নেতা বঙ্গবন্ধুকে নিজ চোখে দেখলাম এবং তার বলিষ্ঠ ভাষন শুনলাম। সেদিন শিশির কুমার বসু এবং কৃষ্ণা বসু একটি উপহার দিয়েছিলেন। সেটি ছিল সুভাষচন্দ্র বসুর হাতে লেখা লেখা একটি গান– ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’। যেটি বিশের দশকের মাঝামাঝি সুভাষচন্দ্র বসু একটি বিশেষ গানের খাতায় তার সতেরটি সঙ্গীতের সঙ্গে লিখে রেখেছিলেন।”
তিনি আরও বলেন, ‘ষাটের দশকে পূর্ব পাকিস্তানের সৃষ্টিশীলতার খবর কলকাতায় পৌঁছে যেত। তখন শামসুর রাহমানের কবিতা এ দেশে দারুণভাবে সমাদৃত। ১৯৭১ সালের পরে দুই বাংলার সাহিত্য-সংগীত জগতে এক নতুন মেলবন্ধনের সূচনা হয়। দুই বাংলার পরিচয়টা তখন আরও নিবিড় হল।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের চার ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী, সারা যাকের, আসাদুজ্জামান নূর ও মফিদুল হক।
সারওয়ার আলী বলেন, ‘বর্তমান সমাজে ধর্মের নামে মানুষে-মানুষে যখন বিভক্তি দেখি; দুনিয়াজুড়ে দুর্বলের ওপর প্রবল অত্যাচারের ঘটনা প্রত্যক্ষ করি, তখন আমাদের স্মরণে আসে মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা। এই বিভাজিত সমাজ ব্যবস্থায় ঐক্য ফেরাতে আমাদের ফিরে যেতে হবে মুক্তিযুদ্ধের কাছে। নতুন প্রজন্মকে নিয়ে যেতে হবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের কাছে।’
সারা যাকের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় জানান, গত অর্থবছরে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আয় হয়েছে ৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ব্যয় হয়েছে ১৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ৪ কোটি ৫ লাখ টাকারও বেশি যে ঘাটতি হয়েছে তা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর পুষিয়ে নিতে পেরেছে বলে জানান তিনি।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি হিসেবে জাদুঘর মিলনায়তনে শনিবার (২৩ মার্চ) বেলা ১১টায় প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী এবং পরদিন একই সময় গণহত্যা দিবস স্মরণে ‘বাংলাদেশ জেনোসাইড ১৯৭১’ শীর্ষক আলোচনা সভা হবে। ২৬ মার্চ ভোর ৬টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত ‘শোক থেকে শক্তি: অদম্য পদযাত্রা’য় অংশ নেবেন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ নাগরিকজন।
জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ৬ দিনব্যাপী কর্মসূচি বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে। কর্মসূচির প্রথম দিন সন্ধ্যায় ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভের (ইউডা) উদ্যোগে এবং বার্জার পেইন্টসের সহযোগিতায় চারুকলা বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী জাদুঘরের সামনের সড়কে আলপনা অঙ্কন করেন।