× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

স্বাধীনতা পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক

কে এই অরন্য চিরান, কী তার অবদান

জোরালো হচ্ছে পুরস্কার বাতিলের দাবি

বিশেষ প্রতিবেদক, ঢাকা, আনিসুর রহমান, ধোবাউড়া ও নাজমুস সাকিব, ময়মনসিংহ শহর

প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৪ ২১:৪৫ পিএম

আপডেট : ২১ মার্চ ২০২৪ ১৪:০৩ পিএম

অরন্য চিরান। ছবি : সংগৃহীত

অরন্য চিরান। ছবি : সংগৃহীত

ময়মনসিংহের বাসিন্দা অরন্য চিরানের ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ পাওয়া নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদক স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২৪-এর তালিকায় তার নাম দেখে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বৃহত্তর অবদান রাখা অনেকে এই রাষ্ট্রীয় পুরস্কার না পেলেও এনজিওকর্মী হিসেবে কাজ করে সমাজসেবায় রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পেয়ে যাওয়ায় বিব্রত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নেতারাও।

সাধারণত সর্বজনীন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের জীবনব্যাপী অবদানের জন্য যেখানে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়ে থাকে; সেখানে ৪৪ বছর বয়সি অরন্য চিরানকে যে অবদানের জন্য পুরস্কৃত করা হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কেবল তাই নয়, বিত্তহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের ঘর বিত্তবানদের পাইয়ে দেওয়ার পেছনেও তার ভূমিকা রয়েছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। নানা অনিয়মের অভিযোগে ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন নামক সংগঠন থেকে তাকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। এসব কারণে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এই পদক বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে। এই দাবিতে ‘ময়মনসিংহের সচেতন সমাজ’-এর ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে বুধবার স্থানীয় প্রেস ক্লাবের সামনে। 

সরকার প্রতিবছর মুক্তিযুদ্ধ, শিক্ষা-সাহিত্য, সমাজসেবাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য স্বাধীনতা পদক দিয়ে থাকে। চলতি বছরের জন্য ১০ জনকে মনোনীত করা হয়েছে। ১৫ মার্চ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। ওই তালিকায় রয়েছেন ময়মনসিংহের তিনজন। চিকিৎসাবিদ্যায় ডা. হরিশংকর দাশ, ক্রীড়ায় ফিরোজা খাতুন এবং সমাজসেবায় অরন্য চিরান। ময়মনসিংহ নগরীর তিনজন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদক পাওয়ায় সর্বমহলে বেশ আলোড়ন তৈরি হয়েছে। ডা. হরিশংকর দাশ ও ফিরোজা খাতুন ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হলেও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে অরন্য চিরানকে ঘিরে। তার পুরস্কার বাতিলের দাবি জানিয়ে ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের একাংশ লিখিত আবেদন করেছে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসকের কাছে। 

কে এই অরন্য চিরান?

অরন্য চিরানের স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়া নিয়ে অনুসন্ধান করেছে প্রতিদিনের বাংলাদেশ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অরন্য চিরানের বাড়ি ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের দিঘলবাগ গ্রামে। তার পিতা মৃত ক্ষিতীশ মানখিন। তিনি বসবাস করেন ময়মনসিংহ শহরে। ২০১১ সাল থেকে তিনি ‘সারা’ নামক একটি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করছেন। কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত তিনি। এর মধ্যে ‘শান্তি মিত্র সমাজকল্যাণ সংস্থা’-এর চেয়ারম্যান, ‘ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’ ময়মনসিংহ শাখার চেয়ারম্যান, বৃহত্তর ময়মনসিংহের আদিবাসী সংগঠনগুলোর ঐক্য পরিষদের মহাসচিব। অবশ্য ‘ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’ থেকে অরন্য চিরানকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে অপর অংশের পক্ষ থেকে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান সুবাস চন্দ্র বর্মণ জানিয়েছেন, দুর্নীতির কারণে অরন্য চিরানকে ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন থেকে ২০২১ সালে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালে অরন্য চিরানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে মামলা হয় বলেও তারা জানান। 

অরন্য চিরানের ফেসবুক পেজে নিজের পরিচয়ে লেখা হয়েছেচেয়ারম্যান, ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ময়মনসিংহ; আহ্বায়ক, জেলা শিল্পকলা একাডেমি এবং প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর, সোশ্যাল অ্যাসোসিয়েশন ফর রুরাল অ্যাডভান্সমেন্ট (সারা)। বেসিক ইনফরমেশন হিসেবে জন্ম তারিখের স্থানে শুধুই ২০ ডিসেম্বর লেখা রয়েছে। জন্ম সাল নেই। সার্চ ইঞ্জিন গুগলে অনুসন্ধান চালিয়ে ‘আজ কবি অরন্য ই. চিরানের জন্মদিন’ শিরোনামে একটি সংবাদ পাওয়া যায়। ছাপা হয়েছে একটি অনলাইন পত্রিকায়। ২০ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে প্রকাশিত খবরে বলা হয় ‘গারো জাতিসত্তার কবি ও গবেষক অরন্য ই. চিরানের ৪৫তম জন্মদিন’। এ ছাড়া এই ব্যক্তির নামে কোনো কবিতা কিংবা গবেষণাকর্মের তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

জন্ম তারিখের বিষয়ে জানাতে চাইলে অরন্য চিরান আজ রাতে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানিয়েছেন, সার্টিফিকেট অনুসারে তার জন্ম তারিখ ২৯ নভেম্বর ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দ। সে হিসেবে তার বয়স ৪৪ বছর। 

প্রতিক্রিয়া, পুরস্কার বাতিলের দাবি

অরন্য চিরানের স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তির খবরে তার নিজের এলাকায় প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বিতর্কিত আখ্যা দিয়ে অরন্য চিরানের পদক বাতিলের দাবি জানিয়ে শনিবার ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশানের একাংশ জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন করেছে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান সুবাস চন্দ্র বর্মণ স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগে বলা হয়, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক এই পুরস্কার পাওয়ার মতো গারো সম্প্রদায় বা সাধারণ বাঙালি সমাজে অরন্য চিরানের এমন কোনো অবদান নেই। বরং অরন্য চিরানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর স্পেশাল অ্যাফেয়ার বিভাগ থেকে জমি আছে, কিন্তু বাড়ি নেই প্রকল্পের অধীনে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত ঘর ধনাঢ্য ব্যক্তিদের দিয়েছেন তিনি। অরন্য চিরান ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে দুজন পিএইচডি ডিগ্রিধারী এবং একজন বিসিএস কর্মকর্তাকে ওই ঘরগুলো দিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়। 

ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ময়মনসিংহ সদর উপজেলা শাখার একাংশের নেতা বিপুল হাজং প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, অরন্য চিরান স্বাধীনতা পুরস্কারের যোগ্য নন। এনজিওতে চাকরি করে তিনি মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। সমাজসেবায় তার কোনো অবদান নেই। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে, তদন্ত করলেই সত্যতা পাওয়া যাবে। আমরা জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দিয়েছি।

বিশিষ্টজনের বিস্ময়

অরন্য চিরানের পুরস্কার পাওয়ার খবরে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ময়মনসিংহের বিশিষ্ট নাগরিকরা; এমনকি নৃগোষ্ঠীর নেতারাও। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘আদিবাসী একজন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পুরস্কার পেয়েছে, এতে আমাদের আনন্দিত হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা বিব্রত। আদিবাসীদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা জীবনব্যাপী অবদান রেখেছেন। অথচ স্বাধীনতা পুরস্কার পাননি।’

গীতিকবি ও দুর্গাপুর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কালচারাল একাডেমির পরিচালক সুজন হাজং বলেন, অরন্য চিরান কীভাবে এই পদক পেলেন, তিনি কোথায় সমাজসেবা করলেন? একজন সাধারণ এনজিওকর্মী হিসেবে চাকরি করলেন, সেটা কীভাবে সমাজসেবা হলো। আর কীই-বা সমাজসেবা করলেন? দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিই এখনও এই পদক পায়নি। দেশের এই সর্বোচ্চ পদকে অরন্য চিরানকে নির্বাচিত করায় আমরা হতাশ এবং লজ্জিত। এর মাধ্যমে স্বাধীনতা পদককে অসম্মানিত করা হবে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে এটা বাতিল করে পুনর্বিবেচনার দাবি জানাই।

তিনি আরও বলেন, যদি আদিবাসীদের মধ্যেই দিতে হয় তাহলে ১৯৪৬ সালে সংঘটিত ময়মনসিংহের টঙ্ক আন্দোলনের কিংবদন্তি নেত্রী রাশিমনি হাজং, কুমিদিনী হাজং, প্রয়াত সাবেক প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট প্রমোদ মানখিনসহ অনেকে রয়েছেন, তাদেরই এই পুরস্কার দেওয়া উচিত।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক আলী ইউসুফ বলেন, সমাজসেবায় অরন্য চিরানের কোনো অবদান নেই। জাতীয় পর্যায়ে ঘোষিত পুরস্কার কোনো ভুল বা অযোগ্য ব্যক্তি পাবেন এটা মেনে নেওয়া যায় না। অরন্য চিরানের নাম প্রত্যাহার করে যোগ্য ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেওয়া হোক। এ ছাড়া যারা অরন্য চিরানকে স্বাধীনতা পদকে মনোনয়ন পেতে সাহায্য করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।

সমাজসেবায় অবদান, কী বলেন এলাকার মানুষ?

অরন্য চিরানের কার্যক্রম জানতে গত সোমবার বিকালে তার গ্রামের বাড়ি ধোবাউড়া উপজেলার নয়াপাড়ায় যান প্রতিদিনের বাংলাদেশের প্রতিনিধি। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অরন্য চিরান ছোটবেলা থেকেই ময়মনসিংহ শহরে থাকেন। সপ্তাহে দুই দিন গ্রামের বাড়িতে আসেন। এলাকায় নেই কোনো সমাজসেবামূলক কার্যক্রম। উপজেলার অনেকেই তাকে চেনে না। নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল গফুর বলেন, অরন্য চিরানের পুরস্কারের বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। সে বেশিরভাগ সময় শহরে থাকে। একই গ্রামের সুরুজ আলী বলেন, এলাকায় তেমন কোনো কাজ করতে দেখিনি। তবে অরন্য চিরান ভালো মানুষ। পার্শ্ববর্তী দিগলবাগ গ্রামের বৃদ্ধ সুনীল চিছাম বলেন, আমরা পদক টদকের কথা হুনছি না। একই গ্রামের বর্না মানখিন বলেন, পদক পাইছে শুনছি, কিন্তু কেন পাইছে তা জানি না।

অরন্য চিরানের স্ত্রী মায়া আরেং বলেন, আমার স্বামী তার কাজের এরিয়া ময়মনসিংহ সদর, ধোবাউড়া, হালুয়াঘাট, দুর্গাপুর, পূর্বধলা ও কলমাকান্দায় এনজিওর মাধ্যমে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ করেছেন। তার মা ফিলোমিনা চিরান জানান, অরন্য ময়মনসিংহে থাকে। সেখানে বিভিন্ন মানুষকে সাহায্য সহযোগিতা করছে।

ঘোষগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ বলেন, আমার জানা মতে অরন্য চিরান ভালো মানুষ। তার কার্যক্রম সম্পর্কে গভীরভাবে তেমন কিছু জানি না। 

ধোবাউড়া উপজেলার ট্রাইবাল চেয়ারম্যান এডুওয়ার্ড নাফাক জানান, অরন্য চিরান সারা এনজিও এবং ট্রাইবালসহ বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে অনেক কাজ করছে। এজন্য হয়তো কর্তৃপক্ষ তাকে নির্বাচন করছে।

নিজের অবদান সম্পর্কে যে ফিরিস্তি দিলেন অরন্য চিরান

নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করে অরণ্য চিরান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ঈর্ষান্বিত হয়ে পুরস্কারপ্রাপ্তি নিয়ে অযথা সমালোচনা করছেন তারা। সাংগঠনিক ঝামেলা নিয়ে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে বদনাম রটাচ্ছে। আদিবাসীদের অধিকার আদায়ে কাজ করেছি। সরকারের সঙ্গে তাদের সেতুবন্ধ তৈরি করে দিয়েছি। আদিবাসীদের ভূমি নিয়ে বিরোধ, পারিবারিক কলহ নিষ্পত্তিতে কাজ করেছি, যাতে করে আদালতের দ্বারস্থ হতে না হয়। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত টাঙ্গাইলের মধুপুর ও ধোবাউড়ায় শিক্ষা বিস্তারে কাজ করেছি। সুবিধাবঞ্চিত অনেক শিক্ষার্থীকে পড়াশোনার সুযোগ করে দিয়েছি। হরিজনদের মাঝে শিক্ষা বিস্তারে ও তাদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছি। বিভিন্ন মানুষের চিকিৎসায় সহায়তা করেছি। আমার কাজের প্রতিদানস্বরূপ স্বাধীনতা পদক পেয়েছি। এই প্রাপ্তি আমাকে ভালো কাজের আরও উৎসাহ দেবে।

নিজ এলাকা ধোবাউড়ায় কেমন কাজ করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ধোবাউড়ায় খুব বেশি কাজ করেছি এমন না। ওখানে সারা এনজির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক কাজ করেছি। হাসপাতালে আসা রোগীদের সাহায্য-সহযোগিতা করেছি। আমি প্রচারবিমুখ ছিলাম বলেই মানুষ হইতো এতটা জানতে পারেনি। 

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের জন্য ঘর বরাদ্দের অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে অরন্য চিরান বলেন, শহরে আদিবাসীদের যাদের জমি আছে তাদের ঘর আছে। আবার যাদের ঘর নেই তাদের জমিও নেই। দুয়েকজন ঋণের টাকায় জমি কিনেছে, কিন্তু ঘর করতে পারেনি, তাদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে আমি সুপারিশ করেছিলাম বাদ দিতে। আর এগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয় একটি কমিটির মাধ্যমে যেখানে উপজেলা নির্বাহী অফিসারও থাকেন। এখানে তো আমি একা কাউকে ঘর বরাদ্দ দিইনি। তবে যখন ঘর দেওয়া হয়েছে তখন তাদের অবস্থা এতটা ভালো ছিল না। 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে অভিযোগ দিয়েছে। আমি অভিযোগের একটি কপি পেয়েছি। রাষ্ট্র যদি আমাদের বলে তাহলে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।

পুরস্কার বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন

স্বাধীনতা পদক থেকে অরন্য চিরানের নাম প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে সচেতন নাগরিক সমাজ। গতকাল বুধবার দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। 

এতে বক্তব্য দেন, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক আলী ইউসুফ, ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক স্বাধীন চৌধুরী, ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ন-সম্পাদক সমীরণ কুমার সিংহ, শহর শাখার সভাপতি বিপুল হাজং, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ ময়মনসিংহ বিভাগীয় শাখার সদস্য প্রভাষক মো. ফরিদুর ইসলাম লিপু প্রমুখ।

অরন্য চিরান স্বাধীনতা পদকের অযোগ্য আখ্যা দিয়ে বক্তারা বলেন, তালিকায় অরন্য চিরানের নাম দেখে তারা বিস্মিত হয়েছেন। স্বাধীনতা পদকটি যে ধরনের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়, তার সঙ্গে অরণ্য চিরানের নামটি যায় না। অরন্য চিরানের নাম প্রত্যাহার করে স্বাধীনতা পদকের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখা হোক। 

স্বাধীনতা পুরস্কার নিয়ে বারবার বিতর্ক

স্বাধীনতা পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না। সাহিত্য ক্যাটাগরিতে ২০২২ সালে আমীর হামজা এবং ২০২০ সালে এসএম রইজ উদ্দিন আহম্মদ নামক দুই ব্যক্তির নাম পুরস্কার তালিকায় প্রকাশ করার পর সমালোচনার মুখে বাতিল করা হয়েছিল। সরকারের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। 

১৯৭৭ সালে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার প্রবর্তনের পর থেকে নানাভাবে বারবার বিতর্কিত হয়েছে এই পুরস্কার। ১৯৮০ সালে চিহ্নিত মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শর্ষিনার পীর মওলানা আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের কুশীলব খন্দকার মোশতাকের দোসর মাহবুব আলম চাষীকেও স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা