সাংবাদিক রানার কারাদণ্ড
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৪ ১৬:১৭ পিএম
আপডেট : ১৮ মার্চ ২০২৪ ১৬:৫৯ পিএম
দেশ রূপান্তরের শেরপুরের নকলা উপজেলা সংবাদদাতা শফিউজ্জামান রানা।
শেরপুরের নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে স্থানীয় সাংবাদিক শফিউজ্জামান রানাকে কারাদণ্ডের কারণ অনুসন্ধানের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে তথ্য কমিশনের তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সংস্থাটি। এজন্য দু’পক্ষকে তথ্য কমিশনের কার্যালয়ে তলব করা হবে। সার্বিক বিষয়ে অবহিত করার জন্য সোমবার (১৮ মার্চ) তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন প্রধান তথ্য কমিশনার ড. আবদুল মালেক।
শফিউজ্জামান রানা দৈনিক দেশ রূপান্তরের নকলা উপজেলা সংবাদদাতা। ইউএনও কার্যালয়ে একটি প্রকল্পের তথ্য চেয়ে আবেদন করেন তিনি। ৫ মার্চ তিনি আবেদনের রিসিভ কপি চাইতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান। কপি না দিয়ে সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, কাগজপত্র তছনছ ও একজন নারী কর্মকর্তার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ এনে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে রানাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
তথ্য কমিশন সূত্রমতে– এ ঘটনায় ৭ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকের প্রথম পৃষ্ঠায় ‘তথ্য চেয়ে আবেদন করে দেশ রূপান্তরের সাংবাদিক জেলে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ এর ২৫(৫) ধারা অনুযায়ী ঘটনাটি তদন্তের জন্য তথ্য কমিশনার শহীদুল আলম ঝিনুককে দায়িত্ব দেয় তথ্য কমিশন।
ঘটনাটি তাৎক্ষণিকভাবে আমলে নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এ বিষয়ে প্রধান তথ্য কমিশনার ড. আবদুল মালেকের সঙ্গে কথা বলে ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্তের ওপর জোর দেন। প্রতিমন্ত্রী বিষয়টি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করেছেন। কারণ অনুসন্ধানের জন্য তথ্য কমিশনার শহীদুল আলম ঝিনুক ১০ মার্চ সকালে শেরপুর জেলা কারাগারে গিয়ে শফিউজ্জামান রানার সঙ্গে কথা বলেন এবং তার বক্তব্য লিপিবদ্ধ করেন। এদিন দুপুরে তিনি নকলায় সাংবাদিক রানার বাসায় গিয়ে তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। বিকালে তথ্য কমিশনার নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে ইউএনও সাদিয়া উম্মুল বানিনের সঙ্গে সাংবাদিকের আবেদনের বিষয়ে কথা বলেন ও সাজার নথি দেখেন।
অনুসন্ধানের সার্বিক বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতের কাছে অবহিত করেছেন প্রধান তথ্য কমিশনার ড. আবদুল মালেক। সোমবার (১৮ মার্চ) দুপুরে সচিবালয়ে প্রতিমন্ত্রীর কক্ষে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অনুসন্ধান কার্যক্রম অবহিত করেন প্রধান তথ্য কমিশনার। তথ্য কমিশনার শহীদুল আলম ঝিনুক ও তথ্য কমিশনার মাসুদা ভাট্টি এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
তথ্য কমিশনার শহীদুল আলম ঝিনুক অনুসন্ধান প্রতিবেদন তথ্য কমিশনে দাখিল করেছেন উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রীকে প্রধান তথ্য কমিশনার জানান, মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) এ বিষয়ে আইনি কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট উভয়পক্ষকে তথ্য কমিশনে তলব করা হবে। এ সময় তিনি তথ্য কমিশনের সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কেও প্রতিমন্ত্রীকে অবহিত করেন।
সাংবাদিককে কারাদণ্ড দেওয়ার ঘটনা দ্রুততম সময়ের মধ্যে অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দেওয়ায় তথ্য কমিশনকে ধন্যবাদ জানান তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী।
প্রধান তথ্য কমিশনারের সঙ্গে আলাপকালে মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার গণমাধ্যম ও পেশাদার সাংবাদিকদের সম্পূর্ণ স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় যেকোনো পেশাদার সাংবাদিকের অনাকাঙ্ক্ষিত হয়রানির বিপক্ষে এবং পেশাদার সাংবাদিকদের সুরক্ষায় বদ্ধপরিকর।’
তিনি আরও বলেন, ‘জনগণের তথ্য পাওয়ার অধিকার আছে। সরকারের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথ্য অধিকার আইন করেছেন। এ আইনের আওতায় জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।’