প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৪ ০০:৪৩ এএম
আপডেট : ১৮ মার্চ ২০২৪ ০১:০৫ এএম
স্বামীর করা ‘মিথ্যা-বানোয়াট মামলা’ প্রত্যাহার এবং মৌলিক অধিকার স্বীকৃত আইনের আশ্রয়ের অধিকার নিশ্চিতের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন অধিকার কর্মী সাধনা মহল। প্রবা ফটো
স্বামীর করা ‘মিথ্যা-বানোয়াট মামলা’ প্রত্যাহার এবং মৌলিক অধিকার স্বীকৃত আইনের আশ্রয়ের অধিকার সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিতের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন অধিকার কর্মী সাধনা মহল।
রবিবার (১৭ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী হলে ‘পারিবারিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও বিচারিক নির্যাতনের শিকারের’ অভিযোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এই দাবি জানান তিনি।
সাধনা মহল বলেন, ‘২০১২-১৩ সালে আমি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) জেন্ডার উপদেষ্টা থাকার সময় গোবিন্দ বরের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। বর্তমানে তিনি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বাংলাদেশ কান্ট্রি অফিসের জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করছেন।
তিনি বলেন, ‘২০২১ এর নভেম্বরে মায়ের মৃত্যুর পরে ২০২২ সালের অক্টোবরে আমরা স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টে বিয়ে করি। কিন্তু বিয়ের এক মাসের মধ্যে গোবিন্দের আগের স্ত্রী তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। তখন জানলাম যে গোবিন্দ’র প্রথম বিয়ে বিচ্ছেদ হয়নি। স্ত্রী সন্তানদের প্রাপ্য ভরণপোষণ দিয়ে লিগ্যাল সেপারেশন এর জন্য তাকে আমি অনেক অনুরোধ করি। তিনি আমার কথায় কান না দিয়ে আমায় ক্রমাগত চাপ দিতে থাকেন আমি যেন ছয় মাসের জন্য বাসা ছেড়ে চলে যাই। আমি রাজি না হওয়ায় শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন।’
নির্যাতনের কথা তুলে ধরে সাধনা মহল বলেন, “২০২৩ সালের মার্চ মাসে অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ের অভিযোগে গোবিন্দর বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করেন তার প্রথম স্ত্রী। দুটি মামলার পরে মিউচুয়াল বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য গোবিন্দর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মাত্রা আমার ওপর ক্রমাগত বাড়তে থাকে। মাত্র দুই মাসে গোবিন্দ কয়েক দফায় আমাকে মেরে জখম করে। গোবিন্দ প্রতিনিয়ত আমাকে হুমকি দিতেন ‘তুমি নিখোঁজ হয়ে যাবা’, ‘কেউ তোমাকে খুঁজে পাবে না’ এবং ‘কেউ বুঝবে না তুমি কোথায় আছো’ ‘মাটিতে পুঁতে ফেলব’ ইত্যাদি।”
তিনি বলেন, ‘গোবিন্দ আমাকে দুঃশ্চরিত্রা, অর্থলোভী, মানসিক বিকার গ্রস্থ, নেশাখোর, দেহব্যবসায়ী বলে আত্মীয় স্বজন, সহকর্মী, বন্ধুজনের কাছে মিথ্যাচার ও কুৎসা রটনা শুরু করেন। গোবিন্দ ২০টি পত্রিকা, অনলাইন পোর্টাল, ইউটিউবে অশ্লীল-কুরুচিপূর্ণ ভিডিও তৈরী করে ভাইরাল করেন।’
সাধনা মহল বলেন, ‘২০২৪ সালের ৬ মার্চ আমাকে দ্বিতীয় বারের মত গ্রেপ্তার করা হয়। ফিনল্যান্ড হতে ঢাকা এয়ারপোর্টে অবতরণের পর ইমিগ্রেশন পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করে। আদালত থেকে দুটি আলাদা জামিন নিতে হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে গোবিন্দ বর দন্ডবিধির ৫০৬ ধারায় নন-এফআইআর অভিযোগের ভিত্তিতে দুটি আলাদা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল। এর আগে গত বছরের জুলাই মাসে আমার অনুপস্থিতে বাড়ির সকল জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যাওয়ার পরে উল্টো আমার বিরুদ্ধেই গুলশান থানায় দণ্ডবিধির ৩৮০ ধারায় একটি চুরির মামলা দায়ের করে গোবিন্দ। পুলিশ আমাকে গুলশানের রাস্তা থেকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে আমি পলাতক আছি।’
তিনি আরও বলেন, কিছু দাবি উপস্থাপন করতে চাই। অবিলম্বে আমার নামে করা মিথ্যা-বানোয়াট মামলাসমূহ প্রত্যাহার করতে হবে এবং মৌলিক অধিকার স্বীকৃত আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত করতে হবে। মিথ্যা ঠিকানা ব্যবহার করে চাতুর্যের বেআইনি মামলা প্রদান এবং প্রশাসন এর উপর প্রভাব বিস্তার করে বিশেষত গুলশান থানা ব্যবহার করে মিথ্যা মামলা প্রদান বন্ধ করতে হবে। আমার বিরুদ্ধে হওয়া অন্যায়, নির্যাতন ও শ্লীলতাহানির চর্চার ক্ষেত্রে দেশের প্রচলিত আইনে গোবিন্দোর দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এডিবি’র সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে পক্ষপাতহীন অবস্থান নেবে। একজন অভিযুক্ত নারী নির্যাতনকারীর জন্য অতিসত্বর এডিবি কঠোর অবস্থান নেবে এবং এডিবির কৌশলগত পদবী ব্যবহার করে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে গোবিন্দ বর প্রশ্নবিদ্ধ করছে যা দেশের বিচারিক মর্যাদা ক্ষুন্ন করছে, এর প্রতিকার চাই।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী রওশন আরা লীনা, মানবাধিকার কর্মী রেজাউর রহমান, রাজনৈতিক কর্মী হাসিবুর রহমান প্রমুখ।