চট্টগ্রাম অফিস
প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৪ ২১:১৯ পিএম
ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়া জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ। প্রবা ফটো
গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হচ্ছে জলদস্যুদের ছবি। ছাপানো হচ্ছে, জিম্মি নাবিকদের কাছে থেকে পাওয়া তথ্য। এসব ‘গোপনীয়’ তথ্য সংবাদমাধ্যমে আসায় হুমকিতে পড়তে যাচ্ছেন জিম্মি দশায় থাকা ব্যক্তিরা। সংবেদনশীল তথ্যগুলো গণমাধ্যমে যেন না আসে সেই অনুরোধ রেখেছেন জাহাজের নাবিকরা।
জিম্মি জাহাজের প্রধান প্রকৌশলী এএসএম সাইদুজ্জামান হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠিয়ে বলেন, ‘সবার প্রতি অনুরোধ দয়াকরে এমভি আব্দুল্লাহ সর্ম্পকে অভ্যন্তরীণ গোপনীয় কোনো আপডেট তথ্য আপনারা প্রকাশ করবেন না। কারণ সোমালিয়ান জলদস্যুরা আমাদের জাহাজের আভ্যন্তরীণ তথ্য পাচারের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। জলদস্যুরা বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদগুলো দেখছে। যারা গণমাধ্যমে এসব তথ্য দিচ্ছেন দয়া করে তাদেরকে থামান। কারণ বাংলাদেশের গণমাধ্যমের নিউজগুলো আমাদের জীবনকে শংকায় ফেলে দিচ্ছে।’
বাংলাদেশ সময় গত ১২ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে জাহাজ থেকে বার্তা পাঠিয়ে জানানো হয়, আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুর কবলে পড়েছে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ। এর পরপরই জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় জাহাজটি। এরপর সেখান থেকে জাহাজটিকে সোমালিয়ার উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানে সোমালিয়ার গারাকাদ বন্দরের কাছে নোঙর করে জাহাজটি। গত শুক্রবার সেটির নোঙর তুলে ফেলা হয় এবং দুপুর থেকে নৌযানটিকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত জাহাজের অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে শুক্রবার রাতে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) পক্ষ থেকে এমভি আব্দুল্লাহর সর্বশেষ অবস্থান জানানো হয়েছে।
বিএমএমওএ’র সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াত হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশে জানান, ‘গতকাল জাহাজটি যেখানে নোঙর করা ছিল, সেখান থেকে আজ ৪৫-৫০ নটিক্যাল মাইল উত্তর দিকে সরিয়ে সোমালিয়ার গদবজিরান উপকূলে নেওয়া হয়েছে। নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে আমরা তথ্য পেয়েছি, বর্তমানে গদবজিরান শহর থেকে ৪ নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙ্গর করা হয়েছে।’
জিম্মি নাবিকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই জাহাজে থাকা ২০ জন জলদস্যু জাহাজের ক্যাপ্টেনকে বাধ্য করেছে নোঙর পরিবর্তন করে নতুন জায়গায় গিয়ে নোঙর করতে। অবস্থান পরিবর্তনের সময় জাহাজ পরিচালনা করেছেন জাহাজের ক্যাপ্টেন এবং নাবিকরা। কিন্তু তাদেরকে জাহাজ মুভ করতে হয়েছে জলদস্যুদের কথা অনুযায়ী।
শনিবার দুপুরে জিম্মি নাবিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা একজন ক্যাপ্টেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজটি নতুন জায়গায় গিয়ে নোঙ্গর করার আগে আমরা সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। এরপর পুনরায় যোগাযোগ করার কথা থাকলেও নতুন অবস্থানে যাওয়ার পর থেকে নাবিকদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। শনিবার দুপুর ৩টা পর্যন্ত নাবিকদের কাছ থেকে আর কোনো সাড়া পাইনি।
মেরিন ইঞ্জিনিয়ার কাজী মো. আবু সাইদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘সোমালিয়ান জলদস্যুরা মুক্তিপণের জন্যই বাণিজ্যিক জাহাজ হাইজ্যাক করেন। নাবিকদের নির্যাতন করা তাদের উদ্দেশ্য না। কিন্তু জিম্মি নাবিক অথবা মালিকপক্ষের কারণে যদি জলদস্যুদের নিরাপত্তা হুমকিতে পড়ে, তখন তারা রেগে যেতে পারেন। রেগে গেলে তখন জিম্মি নাবিকদের ওপর তারা অত্যাচার করবে। তবে নাবিকদের একেবারে মেরে ফেলবে না। কারণ এখন পর্যন্ত সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি কোনো নাবিক মৃত্যুর খবর আমরা পাইনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘জিম্মি নাবিকদের দ্রুত মুক্তির জন্য জলদস্যুদের না ক্ষেপানোই ভালো। জলদস্যুদের ক্ষেপালে তাদের সঙ্গে নেগোশিয়েসনটা বিলম্বিত হতে পারে। জলদস্যুরা মিডিয়ায় তাদের বিষয়ে কী বলা হচ্ছে সেগুলো নজরদারি করে। তাই গণমাধ্যমে কোনো স্পর্শকাতর তথ্য প্রকাশ করা হলেও সেটিও নেগোশিয়েশনের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।’