× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ভোক্তা অধিদপ্তরের কাছে অনেক প্রত্যাশা ক্রেতার

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৪ ১৪:৪৫ পিএম

আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৪ ১৭:২০ পিএম

ভোক্তা অধিদপ্তরের কাছে অনেক প্রত্যাশা ক্রেতার

দ্রব্যমূল্যের অনিয়ন্ত্রিত ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের স্বাভাবিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বছরজুড়েই নানান কারসাজিতে কোনো না কোনো পণ্য চলে যাচ্ছে সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও কিছু কিছু পণ্যের অস্বাভাবিক দাম বাড়া নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও সদুত্তর নেই। এই সংকট থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় নিয়ে সর্বস্তরে আলোচনা হলেও ফলপ্রসূ উদ্যোগ তেমন একটা চোখে পড়ে না।

সরকারের অন্তত অর্ধডজন প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যাদের দায়িত্ব হচ্ছে দেশের বাজার পরিস্থিতি দেখভাল করা। এতগুলো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব থাকার পরও পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি চোখে পড়ে না। অনেকে অবশ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জনবল ও সরঞ্জামের সীমাবদ্ধতার কথাও তুলে ধরে এ বিষয়ে জোর দেওয়ার তাগিদ দিয়ে থাকেন।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান থাকলেও তাদের মধ্যে যথাযথ সমন্বয়ের অভাবে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ভোক্তাদের দুর্ভোগও কাটছে না।

বাজারের নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশ কিছু পণ্যের দামের বিষয়টি দেখাশোনার দায়িত্ব বিশেষভাবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের। এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতি মানুষের প্রত্যাশাও অনেক। বছর ধরে তারা সক্রিয় থাকলেও বাজার নিয়ন্ত্রণে তাদের আরও অনেক কিছু করার আছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ভোক্তা অধিকারের বাইরেও বাজার তদারকির দায়িত্বে আরও রয়েছে- জাতীয় প্রতিযোগিতা কমিশন, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। এই প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে পণ্যের দামের সুস্থ প্রতিযোগিতা, ন্যায্য ও পণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ, খাদ্যের নিরাপদতা এবং মান নিশ্চিত করা নিয়ে কাজ করে থাকে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কাজের সমন্বয় না থাকার অভিযোগ রয়েছে। যে সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ক্রেতাদের ঠকাচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।

নিত্যপণ্যের বাজারে অতিমাত্রায় অস্থির এক পরিস্থিতির মধ্যে আজ শুক্রবার ১৫ মার্চ দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ি, ভোক্তার স্বার্থে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করি।’ দিবসটি পালনে সরকারিভাবে বেশ কিছু কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। আজ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে ভোক্তা অধিদপ্তর। সকাল ১০টায় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। সভাপতিত্ব করবেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ। 

কী বলছেন ভোক্তারা

রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা ভোক্তারা ন্যায্য দামে পণ্য পাচ্ছি কি না এটি দেখার দায়িত্ব ভোক্তা অধিদপ্তরের। তা ছাড়া নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর খাদ্যপণ্যের নিরাপদতা নিয়ে কাজ করে। কিন্তু বাজারে কতগুলো পণ্য নিরাপদ তার হিসাব নেই। প্রায়ই দেখা যায়, খাবার খেয়ে বা ফল-ফলাদিতে কীটনাশকের ব্যবহারের কারণে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এর কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। অপরাধীরা শাস্তির মুখোমুখি হচ্ছে না। সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর সাধারণ মানুষের অনেক প্রত্যাশা থাকলেও তাদের কর্মকাণ্ডের কোনো ব্যাপকতা নেই। ফলে বাজারে গিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত ঠকছি। 

জাহিদুল ইসলাম নামের অপর ভোক্তা পরামর্শ দিয়ে বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তর বাজারে যেসব অভিযান চালায় সেখানে অসাধু ব্যবসায়ীদের এমন বিশাল অংকের জরিমানা করা উচিত যাতে আর কেউ একই অপরাধ করতে ভয় পায়।

কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন গতকাল প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তরের মতো প্রতিষ্ঠানের সুফলের কথা চিন্তা করলে বলা যায় একজন ভোক্তা প্রতারিত বা ঠকলে সরাসরি ভোক্তা অধিদপ্তরে অভিযোগ দায়ের করতে পারে। এটিই বড় সফলতা। কেননা দেশে অনেকগুলো আইন থাকলেও কোনোটাতেই সরাসরি অভিযোগ দায়েরের সুযোগ দেওয়া হয়নি। অভিযোগ জানাতে পারলেও আইনে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অনেক কিছু এটির আওতায় আনা হয়নি। যেমনÑ বাড়িভাড়া, ব্যাংকিং বা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, ই-কমার্স, মোবাইল-ইন্টারনেটে প্রতারিত হওয়া ও চিকিৎসাসহ অন্যান্য অনেক বিষয় আইনে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এসব বিষয় যুক্ত করতে ক্যাবের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, সরকারকে ব্যবসায়ীবান্ধব না হয়ে হতে হবে ব্যবসাবান্ধব। তাহলে সবাই উপকৃত হবে। কিন্তু ব্যবসায়ীবান্ধব হওয়ায় কয়েকজন ব্যবসায়ী সুবিধা নিচ্ছেন। ভোক্তা অধিদপ্তর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সংস্থা, অথচ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ হচ্ছে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করা। সেখানে ভোক্তার স্বার্থ দেখা দ্বৈতনীতি হয়ে যাচ্ছে। সেজন্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ভোক্তা অধিদপ্তর নামে আলাদা একটি বিভাগ হতে হবে। তাহলে ভোক্তাদের অধিকার সরাসরি সংরক্ষণ করা যাবে। 

প্রতিযোগিতা কমিশনের কাজ সম্পর্কে এস এম নাজের হোসাইন বলেন, এটি সরকারি অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের একটি পুনর্বাসন কেন্দ্র। ২০১২ সালে প্রতিযোগিতা কমিশন আইন হয়ে ২০১৬ সালে কাজ শুরু হওয়ার পর অনেক কমিশন চলে গেলেও কাজের কাজ কিছুই দেখা যাচ্ছে না। যখন বাজারে ডিমের দাম নিয়ে কারসাজি হয় তখন তারা অন্য বিষয় নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। যে সময় যা করা দরকার কমিশন তা করছে না। চিনি, সয়াবিন তেল, ডাল এগুলো হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আমদানি করে। বাজারে তাদের পণ্যের সঠিক প্রতিযোগিতায় রাখার কাজ কমিশন করছে না। আবার যখন দাম বাড়ে তখন সে অনুযায়ী কাজ করতে দেখা যায় না। তারা বাজারের বিষয়টি দেখভাল করছে বলে মনে হয় না। 

পণ্যের মান ঠিক আছে কি না তা দেখার দায়িত্ব বিএসটিআইয়ের। বাজারে মানহীন ও ভেজাল পণ্যের ছড়াছড়ির বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলম বলেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে থাকি বিষয়টি তদারকি করতে। আমাদের সীমিত লোক দিয়ে সবকিছু তো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। প্রতিনিয়ত আমরা অভিযান চালাচ্ছি। মানুষের মধ্যে নীতি-নৈতিকতা গড়ে না উঠলে জেল-জরিমানা দিয়ে সব সমস্যার সমাধান হবে না। আমরা কেউ তা করতেও পারব না। বাজারে মানসম্পন্ন পণ্য নিশ্চিত করতে কাজ করা হচ্ছে। এখন দেখা যাচ্ছে কেউ কেউ নিজেরাই বিএসটিআইয়ের সিল দিয়ে বাজারে পণ্য ছেড়ে দিচ্ছে। 

বাজারে পণ্যের দামে সুস্থ প্রতিযোগিতা নেই বলে অভিযোগ করে থাকেন ভোক্তারা। যেকোনো সময় প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়ীরা নিজেদের খেয়াল-খুশি মতো পণ্যের দাম নির্ধারণ করে থাকে। অনেক সময় দাম আকাশচুম্বী হয়ে পড়ে। একই মানের পণ্য একেক প্রতিষ্ঠান একেকভাবে নির্ধারণ করে। এসব বিষয়ে ভোক্তাদের অভিযোগ বিস্তর। এ নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিযোগিতা আইন তৈরি করা হয়েছে। আইনে বলা আছে, ব্যক্তি নিজে মামলা করতে পারবে বা কমিশন স্ব-উদ্যোগে মামলা করতে পারবে। এখন পর্যন্ত কমিশনে ৯৬টি মামলা দায়ের হয়েছে। যার অধিকাংশ স্ব-উদ্যোগে করা। অনেকগুলো মামলার শুনানি শেষে রায় হয়েছে। এ আইনে আমাদের ওপর যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সে অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। 

ভোক্তা অধিদপ্তর ও প্রতিযোগিতা কমিশন সমন্বিতভাবে কোনো কাজ করছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের এসব মামলার মধ্যে অনেকগুলো মামলা দায়ের করেছিল ভোক্তা অধিদপ্তর। গত বছর আলুর বাজারদর নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিদপ্তর যে অভিযান চালিয়েছিল সেখানে বগুড়া, রাজশাহী, রংপুর, নীলফামারীসহ বিভিন্ন জেলায় কমিশন সমন্বিতভাবে কাজ করেছে। প্রতিযোগিতা কমিশন যেখানে অভিযানে যায় সেখানে ভোক্তা অধিদপ্তরের যে জনবল আছে তাদের নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। 

গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যেসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে সেটা ভোক্তা অধিকারের মাধ্যমেই করে থাকে। ভোক্তা অধিকার কার্যক্রম এখন উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। 

তিনি আরও বলেন, ভোক্তা অধিকারের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রতিদিন কাজ করে যাচ্ছেন। কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। যাতে তারাও উপজেলা পর্যায় থেকে যেসব পণ্য আসে সেগুলোর ওপর নজরদারি রাখেন। এ ছাড়া খেজুরের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘নিম্নমানের খেজুর’ উল্লেখ করায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার মুখে সেটিকে ভুল হিসেবে স্বীকার করে নিয়ে তার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন তিনি।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তরের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা প্রয়োগ করে ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণ, বাজারে যেসব বিচ্যুতি দেখা যায় সেগুলো চিহ্নিত করা তাদের কাজ। তা ছাড়া যে আইনি সুরক্ষা আছে তা প্রয়োগ করায় অনেক ধরনের দুর্বলতাও রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। 

তিনি বলেন, দেশে প্রতিষ্ঠান ও আইন থাকলেও তা প্রয়োগে শৈথিল্য আছে। আবার তাদের নিজেদের সক্ষমতারও অভাব আছে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। 

দেশে যথেষ্ট আইন ও প্রতিষ্ঠান আছে এবং এটি ইতিবাচক দিক বলে মন্তব্য করে তিনি তিনটি দিকের কথা উল্লেখ করেন। সেগুলো হলো- প্রথমত, এসব প্রতিষ্ঠানের জনবলের সক্ষমতা বৃদ্ধি, তাদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে শক্তিশালী করা। দ্বিতীয়ত, এসব প্রতিষ্ঠানকে যে ক্ষমতা দেওয়া আছে তা প্রয়োগ করা অর্থাৎ কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার না করা। তৃতীয়ত, অধিকারের বিষয়ে ভোক্তাদের নিজেদেরই সচেতন হওয়া।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা