× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নারী দিবস উদযাপন

মাঠ প্রশাসনে শক্ত হচ্ছে নারীর অবস্থান

ফসিহ উদ্দীন মাহতাব

প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৪ ০৯:৪১ এএম

আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২৪ ১১:০৬ এএম

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে প্রশাসনের নানা স্তরে নারীর অবস্থান ক্রমেই শক্ত হচ্ছে। সরকারের নীতিনির্ধারণী পদগুলোতেও নারীদের উপস্থিতির হার অনেকাংশে বাড়ছে। বর্তমানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে আছেন সিনিয়র সচিব, সচিব ও সচিব পদমর্যাদার ৮৭ জন। তাদের ১০ জন নারী। সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়ে নারীরা মন্ত্রণালয়, বিভাগ কিংবা অন্য কোনো সরকারি দপ্তর সামলাচ্ছেন। একই সঙ্গে ৬৪টি জেলার মধ্যে সাতজন নারী জেলা প্রশাসক রয়েছেন। অতীতে বিভাগীয় কমিশনার পদে কোনো নারী না থাকলেও এবার একটি বিভাগে একজন নারী নিয়োগ পেয়েছেন। এ ছাড়াও সারা দেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদে ৩৭ শতাংশ নারী দায়িত্ব পালন করছেন। এক দশক আগেও এমনটি কল্পনা করা যেত না। এ অবস্থায় সারা পৃথিবীর মতো বাংলাদেশেও গতকাল ৮ মার্চ উদযাপন করা হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে মাঠপ্রশাসন থেকে শুরু করে সর্বস্তরে নারীদের কর্মক্ষেত্রে ভালো পরিবেশ বিরাজ করছে। সীমাবদ্ধতা থাকলেও পর্যায়ক্রমে আরও ভালো কর্মপরিবেশ তৈরিতে সচেষ্ট রয়েছে সরকার। প্রশাসনে নারীর অবস্থান বৃদ্ধি পেলে তা দেশের জন্য ইতিবাচক হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

জনপ্রশাসনমন্ত্রী অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার নারীবান্ধব। প্রশাসনের সর্বস্তরে নারীদের ভালো কর্মপরিবেশ বিদ্যমান। তারা গুরুত্বপূর্ণ পদে নেতৃত্ব দিয়ে সাফল্য দেখিয়ে যাচ্ছেন। এটি সরকারের কর্মপরিবেশের কারণেই সম্ভব হয়েছে। এটি ধীরে ধীরে সম্ভব হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে প্রশাসনে নারীদের আরও উচ্চ অবস্থানে নিয়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন। 

বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্কের মহাসচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সায়লা ফারজানা বলেন, প্রশাসনে অতীতের চেয়ে নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে। নারীরা শিক্ষাদীক্ষায় অনেক এগিয়েছেন। পুরুষের মতো নারীরাও প্রশাসনে চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। নানামুখী সমস্যা থাকলেও সেগুলো মোকাবিলা করে সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করছেন। তিনি আরও বলেন, নারীরা কর্মক্ষেত্রে নানান সমস্যা মোকাবিলা করে থাকেন। তারা বিভিন্ন সময়ে হয়রানির সম্মুখীন হয়ে থাকেন। এমনকি দুর্গম এলাকায় পদায়ন করা হলেও তারা সেখানে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছেন।’ 

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বর্তমানে সারা দেশে ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন সরকারি চাকরিজীবীর মধ্যে নারী ৪ লাখ ৪ হাজার ৫৯১ জন। এর মধ্যে প্রশাসনে সচিব, সিনিয়র সচিব ও সমমর্যাদার ৮৭ জন রয়েছেন। এর মধ্যে ১০ নারী কর্মকর্তা সচিব রয়েছেন। তারা হলেনÑ শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সিনিয়র সচিব মোসাম্মাৎ হামিদা বেগম, কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার, মহিলা ও শিশুবিষয়ক সচিব নাজমা মোবারেক, দুর্নীতি দমন কমিশন সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন এনডিসি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সচিব ইসরাক চৌধুরী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) রেহেনা পারভিন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এনএসডিএ) নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) নাসরিন আফরোজ। সাত নারী জেলা প্রশাসকের মধ্যে রয়েছেনÑ মানিকগঞ্জ জেলায় রেহেনা আক্তার, ফেনী জেলায় শাহীনা আক্তার, লক্ষ্মীপুরে সুরাইয়া জাহান, ঝালকাঠিতে ফারাহ গুল নিঝুম, মৌলভীবাজারে ড. ঊর্মি বিনতে সালাম, হবিগঞ্জে মোছা. জিলুফা সুলতানা, গাইবান্ধায় কাজী নাহিদ রসুল সাতজন নারী। আর একমাত্র নারী উম্মে সালমা তানজিয়া ময়মনসিংহ বিভাগে কমিশনারের দায়িত্বে রয়েছেন। শিল্প ও কৃষির মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে নারী কর্মকর্তা হয়েও তারা দক্ষতার সঙ্গে সামলাচ্ছেন। অবশ্য সচিব পদে গত বছর একই সংখ্যা ছিল। সেই হিসেবে সচিব পদে নারীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করা উচিৎ বলে পদোন্নতিপ্রত্যাশী একাধিক নারী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) মনে করেন।

বর্তমানে ৩২৭ অতিরিক্ত সচিবের মধ্যে ৫৫ জন নারী, ৮৫৮ যুগ্ম সচিবের মধ্যে ১৮৬ নারী, ১ হাজার ৭০৪ উপসচিবের মধ্যে ৩৯৫ নারী, ১ হাজার ৮৬৭ জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ও জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনারের মধ্যে নারী ৬৪১ জন। এ ছাড়া ১ হাজার ৪৪২ সহকারী কমিশনার বা সহকারী সচিবের মধ্যে নারী ২৫০ জন।

এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, কৃষি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। প্রান্তিক কৃষক থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ে কৃষির কার্যক্রম রয়েছে। চ্যালেঞ্জ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। নারী হয়েও জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কার্যক্রম সরেজমিন পরিদর্শন করে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তিনি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষিশাস্ত্রের ওপর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তার অর্জিত জ্ঞান দেশের কৃষিক্ষেত্রে কাজে লাগিয়ে যাচ্ছেন। মন্ত্রণালয় পরিচালনায় সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে তিনি পছন্দ করেন বলে জানান। 

হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোছা. জিলুফা সুলতানা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, এখন নারীরা চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করেন। তিনি দায়িত্ব পালনকালে কোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হননি। তবে নারীরা সর্বক্ষেত্রে সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছেন। জনগণের সেবা দিতে নারী হিসেবে তার কোনো সমস্যা হয় না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল বলেন, নারী হিসেবে সকল কাজ করতে তিনি দ্বিাধা করেন না। মানুষের সেবামূলক কাজ করতে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। মাঠপর্যায়ের মানুষ সবকিছু ইতিবাচকভাবে নিয়ে থাকেন। আগামীতে নারীরা বিভিন্ন পর্যায়ে আরও সাফল্য অর্জন করবেন বলে তিনি মনে করেন। 

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র অনুযায়ী, এখন সারা দেশে ৪৯২ ইউএনওর মধ্যে ১৭০ জন নারী। দায়িত্বরত ইউএনওদের মধ্যে এই হার ৩৭ শতাংশ। উপজেলা প্রশাসনে ইউএনও পদই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তারাই উপজেলায় সরাসরি সরকারের প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন। উপজেলার অন্য সরকারি দপ্তরগুলোর কাজে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন। তা ছাড়াও সারা দেশে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে ১৪০ নারী রয়েছেন।

দিবস উদযাপন

গতকাল শুক্রবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন করা হয়েছে সারা দেশে। আলোচনা সভা, মানববন্ধন, সমাবেশ ও র‌্যালির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করে বিভিন্ন সংগঠন। নিরাপদ কর্মস্থলসহ বৈষম্য দূর করার দাবিতে পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করে তারা।

উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নারীদের আরও সম্পৃক্ততার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের সার্বিক উন্নয়নে নারী-পুরুষ উভয়ের সমান অংশগ্রহণ প্রয়োজন। শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থনৈতিকভাবে আমাদের আরও অগ্রসর হতে হলে দেশের নারী ও পুরুষকে সমভাবে শ্রম দিতে হবে। কারণ সমাজের অর্ধেক জনশক্তি নারী।’ নারীদের সমাজের অর্ধেক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নারী ও পুরুষ সমানভাবে কাজ করলেই আমরা এগিয়ে যেতে পারব। আজ আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, কারণ আমরা নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছি।’ একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের নারীরা কখনই পিছিয়ে থাকবে না।’ তিনি বলেন, ‘শুধু বলার জন্য নয়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে তা বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এখন নারীদের এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, ‘ঘরে থাকবেন না। সমাজের জন্যও নারীদের অনেক কাজ করতে হবে।’

পাঁচ নারীকে জয়িতা পুরস্কার

ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচ নারীকে জাতীয় পর্যায়ে ‘সেরা জয়িতা পুরস্কার-২০২৩’ দেন। প্রতিকূলতা ও চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ তাদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়। তাদের চারজন হলেনÑ আনার কলি (অর্থনৈতিক), কল্যাণী মিঞ্জি (শিক্ষা ও কর্মসংস্থান), কমলি রবি দাশ (সফল মা) ও জাহানারা বেগম (নিপীড়ন প্রতিরোধ) এবং সামাজিক উন্নয়নে পাখি দত্ত (হিজড়া) এই পুরস্কার পান।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা