× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সাক্ষাৎকার

বাঙালি নারীরা নিজেদের অনুকরণীয় করে তুলছে

ফারুক আহমেদ

প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৪ ১০:০৯ এএম

আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২৪ ১০:১০ এএম

ওয়াসিকা আয়শা খান। ছবি : সংগৃহীত

ওয়াসিকা আয়শা খান। ছবি : সংগৃহীত

মন্ত্রিসভায় সম্প্রতি নতুন নিয়োগ পেয়েছেন ৭ জন প্রতিমন্ত্রী। এর মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পেয়েছেন ওয়াসিকা আয়শা খান। দেশের প্রথম নারী অর্থ প্রতিমন্ত্রী হলেন তিনি। নারী দিবসের প্রাক্কালে তার অভিজ্ঞতা, প্রতিবন্ধকতা ও পরিকল্পনা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন প্রতিদিনের বাংলাদেশের সঙ্গে।  

প্রশ্ন : নারীর অগ্রযাত্রায় বর্তমান সরকারের অবদান কতটুকু?

ওয়াসিকা আয়শা খান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নারী ক্ষমতায়নের অগ্রদূত। তিনি বাংলাদেশকে সারা বিশ্বে নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং লিঙ্গ সমতাকরণের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার নিরলস পরিশ্রম, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন চিন্তাধারা এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপে সবকিছুর মধ্য দিয়েই আজকে বাংলাদেশের নারীরা দৃশ্যমানভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছে। রাষ্ট্র পরিচালনা, সর্বত্র নেতৃত্ব প্রদান, আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক এমনকি সৃজনশীল সৃষ্টিকর্মের জগতে নারী-পুরুষের সমান অধিকার ও উপস্থিতি বাংলাদেশের সর্বত্র দৃশ্যমান। ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি, প্রশাসন, কূটনীতি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নারীরা অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বাঙালিদের শক্তিশালী জাতিতে পরিণত করে তুলছে। জাতিসংঘের বিভিন্ন শান্তিরক্ষা মিশনে সফল অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাঙালি নারীরা তাদের নিজেদের অনুকরণীয় করে তুলছে। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ৫০-৫০ শতাংশ হারে উন্নীত করার অঙ্গীকার করেছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এমডিজি অ্যাওয়ার্ড, সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড, শিক্ষায় লিঙ্গসমতা আনার স্বীকৃতিস্বরূপ ইউনেস্কোর ‘শান্তি বৃক্ষ’ এবং গ্লোবাল উইমেন অ্যাওয়ার্ডসহ অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছে, যা আমাদের দেশের নারীদের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। পাশাপাশি বর্তমান সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশে খেলাধুলায় নারীরা ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। আন্তর্জাতিক ফুটবল, ক্রিকেট ও অন্যান্য খেলায় তারা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিয়ে চলেছে।

প্রশ্ন : নারীর অগ্রযাত্রায় আপনার দৃষ্টিতে এখনও সীমাবদ্ধতা কোথায়?

উত্তর : দেশের চলমান অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি নারী তার পরিবারের সচ্ছলতা আনতে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ইটভাঙা শ্রমিক থেকে শুরু করে হিমালয় চূড়া জয় করা, পোশাকশিল্প, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিভিন্ন দায়িত্বশীল পদে থেকে কাজে অংশগ্রহণ, পুলিশ, বিজিবি, সামরিক বাহিনীসহ সব ক্ষেত্রেই নারীর অংশগ্রহণ ও ফলপ্রসূ ভূমিকা দৃশ্যমান। নারী অগ্রসর হলেও কিছু সামাজিক মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি নারীকে অধস্তন করে রাখছে। এর ফলে নতুন নতুন ধরনের নৃশংস ও নিষ্ঠুর সহিংসতার শিকার হচ্ছে আমাদের মা ও বোনেরা। নারীরা পরিবার, রাস্তাঘাট, গণপরিবহন, কর্মক্ষেত্র, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন সহিংসতা ও টিজিং এবং অনলাইনে সাইবার বুলিং-এর শিকার হয়ে থাকে। এসব জায়গায় আমাদের সামাজিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে দেশ ও দশের স্বার্থেই সকলে মিলে নারীদের এগিয়ে নিতে কাজ করতে হবে।

প্রশ্ন : অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী পর্যায়ে এই প্রথম একজন নারীকে দায়িত্ব দেওয়া হলো। এর কোনো তাৎপর্য আছে বলে কি আপনার মনে হয়?

উত্তর : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়নের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন অনেক আগেই। ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি, প্রশাসন, কূটনীতি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নারীরা অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বাঙালিদের শক্তিশালী জাতিতে পরিণত করে তুলছে। গ্রাম কিংবা শহর সকল জায়গায় পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও নিজেদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শুধু জাতীয় পর্যায়েই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে যে পবিত্র দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, তা এরই ধারাবাহিকতা বলে আমি মনে করি। প্রসঙ্গত, আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রথম নারী অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক এবং সংরক্ষিত মহিলা আসন থেকে প্রথম সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। এ ছাড়া, ১৯৯৭ সালে যোগদানকালে আমি আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংক, চট্টগ্রাম-এ একমাত্র মহিলা কর্মকর্তা ছিলাম। 

প্রশ্ন : গৃহস্থালিতে নারীর শ্রম জিডিপিতে গণনার বিষয়ে বেশ অনেকদিন ধরেই আলোচনা চলছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি নিয়ে আপনার পরিকল্পনার কথা জানতে চাই। 

উত্তর : কোনো অর্থনৈতিক লেনদেন এবং ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশা না করেই নারীরা গৃহস্থালি কাজ করে থাকেন। তাদের এই কাজটি উৎপাদনের জাতীয় হিসাব অথবা জাতীয় আয় পরিমাপের পদ্ধতির (এসএনএ) বাইরে থাকে। কিন্তু, জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ ব্যাপারে দিক-নির্দেশনা প্রদান করেছেন। অনেক আগে থেকেই গ্রামীণ নারীরা কৃষি খাতে অবদান রাখছেন। অধুনা সেই হার বেড়েছে। বাংলাদেশে মোট কর্মজীবী মানুষের মধ্যে প্রায় ৪৭ দশমিক ৬ শতাংশ লোক কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। আবার তাদের মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮ শতাংশই নারী। সংসারের কাজ করার পাশাপাশি আবাদ-পরবর্তী কাজ, গবাদি পশুর দেখাশোনা, দুধ আহরণ, ছাগলের চাষ, বাড়ির ভেতরের সবজিবাগান এবং বীজ সংরক্ষণের মতো জরুরি কাজগুলো নারীরাই করেন। আরও আছে জমি তৈরি, চারা রোপণ, সার দেওয়া, বীজ তৈরি, চাষাবাদ, শস্য জমি থেকে বাড়িতে নেওয়া, ফসল ভাঙানো, বাছাই ও প্যাকেটজাত করা ইত্যাদি। তাই, গৃহস্থালিতে নারীর শ্রম জিডিপিতে গণনার বিষয়ে যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে।

প্রশ্ন : দুর্নীতিমুক্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়তে আপনি কাজ করবেন বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে কোনো চ্যালেঞ্জ দেখছেন কী? 

উত্তর : বর্তমানে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির দুনিয়ায় এক নীরব সংকট বিরাজমান। উন্নত দেশগুলোতেও মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্বসহ নানা অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিরাজমান। যেকোনো সংকট থেকে মুক্তির ধারাবাহিক ধাপগুলো হলো সংকট চিহ্নিত করা, সংকটের প্রকৃত কারণ উদ্ধার এবং এরপর উত্তরণের পথ বের করা। এর থেকে উত্তরণের একটি পথ বাতলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। বিশেষ কোনো দল বা গোষ্ঠী লক্ষ্যবস্তু নয়, বরং প্রকৃত সমস্যা চিহ্নিত করে বাস্তবতা ও অর্থনীতির মৌলিক সূত্রের আলোকে এর সমাধান নিয়ে কাজ করাই আমার মূল লক্ষ্য।

প্রশ্ন : নারীদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে আরও বেশি যুক্ত করতে আপনার নিজের কী পরিকল্পনা রয়েছে?

উত্তর : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপান্তরকারী নেতৃত্বে বর্তমান সরকার নারী উন্নয়নে বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে চলছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সব সময় বাংলাদেশের নারীদের অংশগ্রহণ ছিল। ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীদের ভোগান্তি কমিয়ে ব্যাংক ঋণের সহজলভ্যতা ও অন্যান্য সব ক্ষেত্রে তাদের সহজ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এজন্য জেন্ডার ইনক্লুসিভ ফিন্যান্সিয়াল সিস্টেম এবং জেন্ডার লেন্স ইনভেস্টমেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। নারী-পুরুষ বৈষম্য নিরসন করে জেন্ডার লেন্স ইনভেস্টমেন্ট সুবিধা প্রান্তিক পর্যায়ে নারীদের কাছে পৌঁছে দিয়ে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের সম্পৃক্ততা বাড়ালে সমগ্র দেশ উপকৃত হবে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে শহরমুখী উদোক্তাদের ঋণ দেওয়ার পাশাপাশি প্রান্তিক নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য গ্রামীণ এলাকায় নারী উদ্যোক্তাদের সময়মতো ঋণ দিতে হবে। বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে বাজারমুখী করার চেষ্টা করতে হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা