প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৪ ২১:৪৯ পিএম
আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২৪ ০০:২৮ এএম
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : সংগৃহীত
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮ সালেই দেশ স্বাধীনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, দেশের স্বাধীনতার কথা আপনি কখন থেকে চিন্তা করেন। তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, ১৯৪৮ সালে যখন মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার পাকিস্তানিরা নিয়ে নিয়েছিল, সেদিন থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ওদের সঙ্গে আর থাকব না।’
বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
দিবসটি উপলক্ষে দলীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর দলের নেতাদের নিয়ে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন শেখ হাসিনা।
আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়েই কিন্তু স্বাধীনতা। একজন নেতা নিজের জীবনের সব বিসর্জন দিয়ে অধিকারবঞ্চিত শোষিত মানুষের কথা বলতে গিয়ে বারবার কারাবরণ করেছেন। জেলজুলুম অত্যাচার সহ্য করেছেন। যে লক্ষ্য তিনি স্থির করেছিলেন, সেই লক্ষ্য সামনে রেখে একটার পর একটা পদক্ষেপ নিয়েছেন।‘
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু চুয়ান্ন সালে নির্বাচন করেছেন, ছাপ্পান্ন সালে তিনি জাতীয় পরিষদের ছিলেন। নিয়ম মেনেই কিন্তু এগিয়ে গেছেন। একটি লক্ষ্য স্থির রেখে। যেটা কখনও তিনি মুখে উচ্চারণ করেননি। কিন্তু একটি জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করা বা তাদের সংগঠিত করা, ঐক্যবদ্ধ করা, এটা একটি কঠিন কাজ ছিল। সেই কঠিন কাজ তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করে যান।’
আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি, দলের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বেনজীর আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ, মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি ও মো. হুমায়ুন কবির প্রমুখ বক্তব্য দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য জাতির পিতা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেটাই আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। যে কাজটা তিনি করতে গিয়েও পারেননি। ১৫ আগস্টে নির্মমভাবে হত্যা করে মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা জয় বাংলা স্লোগানে বিশ্বাস করে না, ৭ মার্চের ভাষণকে যারা প্রেরণা বলে মনে করে না, তার অর্থ তারা স্বাধীন বাংলাদেশই চায় না। তারা দেশের উন্নয়ন চায় না। দেশের মানুষের অর্থসামাজিক উন্নতি চায় না।‘
জাতির পিতাকে হত্যার পরে এই ভাষণ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এবং এই ভাষণ বাজাতে গিয়ে অনেক মানুষ জীবন দিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো ভাষণ এত দিন পর্যন্ত এভাবে মানুষকে প্রেরণা জোগায়নি। পৃথিবীর যত ভাষণই আছে, হয় লিখিত, একবারই সেই ভাষণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ৭ মার্চের ভাষণ ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ৭ মার্চ, ২৬ মার্চ, ১৫ আগস্ট এই ভাষণ বাজিয়েছে।’
এর আগে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘৭ মার্চের ভাষণের পর জাতির পিতার কাছে বারবার তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল। এমনকি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা যারা পরবর্তীতে বই লিখেছেন তারাও তাদের বইতে লিখেছেন ‘উনি যে কী বলে গেলেন আমরা স্তব্ধ হয়ে থাকলাম আমরা কোনো অ্যাকশনই নিতে পারলাম না।’’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর ব্যাখ্যা খুঁজতে খুঁজতে পাকিস্তানিদের সময় চলে যায়। বঙ্গবন্ধু কী বলে গেলেন আর কী হয়ে গেল, বাঙালিরা যুদ্ধে নেমে পড়ল।’
ইউনেস্কোর মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্ট্রারে মানুষকে উদ্বুদ্ধকারী অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে এই ভাষণ অন্তর্ভুক্তির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গবেষক-লেখক ও সাংবাদিক বি এন আহুজা বিশ্বের মূল্যবান একশ ভাষণের ‘দ্য ওয়ার্ল্ডস গ্রেট স্পিচেস’ শিরোনামে যে বই বের করেন, সেখানেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণ অন্যতম ভাষণ হিসেবে স্থান পেয়েছে।’