১৫ বছর আগের প্রাকৃতিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেওয়া হবে : পরিবেশমন্ত্রী

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, ‘জলমহাল ও জলাভূমি ভরাটের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকদের সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে বলা হয়েছে। পাহাড়-টিলা সংরক্ষণ ও পাহাড়ের ঢাল এবং পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে ঘরবাড়ি নির্মাণ বন্ধ করতে হবে। আজ থেকে ১৫ বছর আগে পাহাড়, জলাশয়, বনসহ প্রাকৃতিক ব্যবস্থা কেমন ছিল তা আবার ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

মঙ্গলবার (৫ মার্চ) জেলা প্রশাসক সম্মেলনের তৃতীয় দিনে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধিবেশন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ পরিবেশমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় মন্ত্রণালয়ের সচিব ডক্টর ফারহিনা আহমেদ, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড আবদুল হামিদ এবং বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘দেশের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় জেলা প্রশাসকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। জেলাগুলোতে চলমান ব্যাপক উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে যাতে দেশের পরিবেশ ও সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদের অবক্ষয় না ঘটে সে বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের আহ্বান জানানো হয়েছে।’

পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, ‘যেখানেই পাহাড় বা বনভূমি কেটে হাউজিং করেছে সেটা পুনরুদ্ধার করা হবে। বনের জমি পুনরদ্ধার করা হবে। জেলার পাশাপাশি বিভাগীয় পর্যায়ে পরিবেশ ও বন উপ-কমিটি করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। যা জেলার সাথে সমন্বয় করে করা হবে। পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি সৃষ্টিকারী সকল অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করার পাশাপাশি ইতোমধ্যে বন্ধকৃত ইটভাটাসমূহ যেন কোনভাবেই পুনরায় চালু করতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি কাজে শতভাগ ব্লক ইট ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং শিল্প-কারখানায় ইটিপি চালু রাখতে জেলা প্রশাসকগণকে মনিটরিং করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।’

সাবের চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রিন ফাইন্যান্সিং এর আওতায় এক হাজার কোটি টাকা তফসিলি ব্যাংকের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের মধ্যে পরিবেশবান্ধব টেকনোলজি ব্যবহারের জন্য ৫ শতাংশ  হারে ঋণ প্রদান করছে। এক্ষেত্রে জেলা ঋণ কমিটি এবং জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাধ্যমে ইটভাটা মালিকদের বিষয়টি অবহিত করা ও ঋণ প্রদানের মাধ্যমে ব্লক ইট উৎপাদনে উৎসাহিত করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বায়ুদূষণ রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে রাস্তা নির্মাণ, কনস্ট্রাকশন সামগ্রী, ইটভাটা, বর্জ্য ইত্যাদির মাধ্যমে বায়ুদূষণ রোধে জেলাভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। লেড এসিড ব্যাটারি পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ কার্যক্রম বন্ধে জেলা প্রশাসন কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করতে পারেন। প্লাস্টিকের দূষণ রোধ ও সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। পরিবেশ, প্রতিবেশ, বন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও দূষণ রোধে ইনোভেটিভ আইডিয়া গ্রহণ ও বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসকগণ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন। নিষিদ্ধ পলিথিন শপিং ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে জেলা প্রশাসকগণ কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। মাঠ পর্যায়ের সকল সরকারি অফিসসমূহে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন।’

মন্ত্রী বলেন, ‘বনভূমি রক্ষায় ও অবৈধ জবরদখল উচ্ছেদে জেলা প্রশাসকদের সক্রিয় সহযোগিতা প্রয়োজন। অবৈধ করাতকলসমূহ বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণে জেলা প্রশাসকগণের সক্রিয় সহযোগিতা একান্ত কাম্য। উপকূলীয় অঞ্চলে সবুজ বেষ্টনি করতে বন অধিদপ্তরের উদ্যোগে জেলা প্রশাসকগণের সহযোগিতা কাম্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের চলমান ২৪৮টি প্রকল্প মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। প্রকল্প সমূহের সঠিক বাস্তবায়নে মাঠ প্রশাসন কর্তৃক প্রকল্পগুলো মনিটরিং ও তদারকি করতে পারেন।’